ফাইল ছবি
ঢাকা : শনিবার ২০ জানুয়ারি ২০১৮। গত বছরের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ধনকুবের ডোনাল্ড জন ট্রাম্প। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারিকে হারিয়ে বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেন।
ক্ষমতায় এসে এক বছরে তিনি যেমন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন, তেমনি নতুন কিছু করে বিস্ময়েরও সৃষ্টি করেছেন। আধুনিক যুগে অন্যসব মার্কিন প্রেসিডেন্টের তুলনায় তার জনপ্রিয়তা সর্বনিম্নে। ট্রাম্প তথা মার্কিন নেতৃত্বের প্রতি বিশ্বের আস্থা কমেছে। হ্রাস পেয়েছে সর্বধর্মীয় সম্মিলনের দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় স্বাধীনতা।
তিনি যতো বেশি কথা বলেছেন কাজ করেছেন ততোটাই কম। কর সংস্কার বিল ছাড়া কংগ্রেসে তার প্রশাসনের কোনো বিলই পাস হয়নি। তবে এক বছরে ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
২৫শ’র বেশি টুইট: সোশ্যাল মিডিয়া টুইটারের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে হয় তা দেখিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি গত এক বছরে ২৫শ’র বেশি টুইট করেছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। টুইটে ১৭৪ বার ‘ফেইক নিউজ’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। তিনি তার টুইট বার্তা প্রকাশে অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেছেন মাত্র দুইবার। ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টকেই গুরুত্ব দিয়েছেন। তার পূর্বসূরি বারাক ওবামা ১৩৯ বার অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেন।
ট্রাম্প ওবামাকেয়ার বাতিল করে নতুন স্বাস্থ্য বিল পাস, মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণসহ নানা ইস্যুতে অঙ্গীকার করলেও কোনো সফলতা পাননি। আবার স্বাস্থ্য বিল নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন যাতে ধর্মীয় উদ্বেগ বাড়বে বলে আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মিডিয়ার প্রতি বৈরিতা
ট্রাম্প অঙ্গীকার করেছিলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেবেন। কিন্তু তার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি বরং তার সমালোচনাকারীদের কড়া সমালোচনা করেছেন। ট্রাম্প সত্যের ওপরই বেশি আক্রমণ করেছেন। সরকারের সমালোচনা মানেই মিথ্যা বলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার কাছে।
তিনি ফেইক নিউজ অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা করে নতুন ধারার উদ্ভব ঘটিয়েছেন। ট্রাম্প প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদ সিএনএন, নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট বিভিন্ন মূল ধারার সংবাদ মাধ্যমের কড়া সমালোচনা করেছেন।
তবে তিনি ফক্স নিউজের প্রশংসায় ছিলেন পঞ্চমুখ। তিনি ৯৬ বার ‘ফক্স অ্যান্ড ফ্রেন্ডস’ ব্যবহার করেছেন। ‘ফক্স নিউজ’ শব্দ ব্যবহার করেছেন আরো ৪৫ বার।
বেশি নির্বাহী আদেশ
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ৫৮টি নির্বাহী আদেশ দিয়েছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামা ৪১ এবং জর্জ ডাব্লিউ বুশ একই সময়ে ৫৬টি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছিলেন। ট্রাম্পের কিছু নির্বাহী আদেশ আদালতে চ্যালেঞ্জে সম্মুখীন হয়েছে। বিশেষ করে বছরের শুরুতেই মুসলিম অভিবাসীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তিনি বারবার ধাক্কা খেয়েছেন।
যদিও শেষ সময়ে এসে সাময়িক অনুমোদন দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এর ফলে দেশটিতে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিও লঙ্ঘিত হয়েছে। তিনি অতি শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের সমর্থন করেছেন।
গলফ ও বিলাসিতায় ব্যয়
প্রেসিডেন্ট প্রতি চার দিনে একদিন গলফ খেলেছেন। অন্তত ৮৮টি রাউন্ড খেলেছেন। যদিও তার প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রেসিডেন্ট প্রতিবারের সফরে গলফ খেলেননি। ট্রাম্প গলফ খেলা নিয়ে ওবামার কড়া সমালোচক ছিলেন। ওবামা প্রথম বছরে ২৯ বার গলফ খেলেছিলেন।
মার্কিন জেনারেল সার্ভিস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে আসবাবপত্র ক্রয় এবং সৌন্দর্যবর্ধনে সাড়ে ১৭ লাখ ডলার খরচ করেছেন। হোয়াইট হাউসের বিভিন্ন ভবন এবং চারপাশের ৫৫ হাজার বর্গফুট এলাকা সংস্কার করতে হয়েছে।
বিদেশ সফর
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ১৪ টি দেশ সফর করেছেন। এর মধ্যে তিনি সবচেয়ে বড় মার্কিন মিত্র যুক্তরাজ্য সফর করেননি। ওবামা তার এক বছরে ২১টি দেশ সফর করেছিলেন। এই সফরে যুক্তরাজ্যও ছিল। বিদেশ সফরে ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পকে নিয়েও সমালোচনার মুখে ছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তার আমলে বরখাস্তের পরিমাণও আগের চেয়ে বেড়েছে যা ৩৪ ভাগে দাঁড়িয়েছে।
অজনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক বছরেই আধুনিক যুগের সবচেয়ে অজনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে আখ্যা পেয়েছেন। গ্যালাপের মতে, তার প্রতি মানুষের আস্থা এখন ৩৯ ভাগ। যেখানে ওবামার প্রতি ৫০, বিল ক্লিনটনের প্রতি ৫৪ এবং বুশের প্রতি ছিল ৮৩ ভাগ।
গেরাল্ড ফোর্ড যিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আসার এক বছরের মধ্যেই ওয়াটার গেইট কেলেঙ্কারির ঘটনায় রিচার্ড নিক্সনকে ক্ষমা করে দিয়ে ব্যাপক বিতর্কের সম্মুখীন হয়েছিলেন। তার প্রতিও মানুষের আস্থা ছিল ৪০ ভাগ। গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত এনবিসি নিউজ এবং ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল পরিচালিত জরিপেও ট্রাম্পের ওপর ৩৯ ভাগ মানুষের সমর্থন আছে বলে জানানো হয়েছে।
বিশ্বের আস্থা কমেছে
মার্কিন নেতৃত্বে আস্থা কমেছে। ১৩৪টি দেশে জরিপ চালিয়েছে গ্যালাপ। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি আস্থা আছে ৩০ ভাগ যেখানে রাশিয়ার প্রতি ২৭ ভাগ এবং চীনের ওপর ৩১ ভাগ। জার্মানি বিশ্বে সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ। দেশটির প্রতি আস্থা ৪১ ভাগ।
ওবামার আমলে আমেরিকান নেতৃত্বের প্রতি আস্থা ছিল ৪৮ ভাগ। এর আগে বুশের আমলের শেষ দিকে ছিল ৩৪ ভাগ। গ্যালাপের গ্লোবাল ম্যানেজিং পার্টনার জন ক্লিফটন বলেন, এক বছরেরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি মানুষের আস্থা এভাবে কমে যাওয়াটা ভয়াবহ। তথ্যসূত্র : বিবিসি, ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট, সিএনএন ও রয়টার্স