Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৫ ১৪৩১, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪

ট্রাম্প যুগের সূচনা : উঁকি দেওয়া কিছু ভাবনা

ড. মো. হুমায়ুন কবীর

প্রকাশিত: ০০:৫৮, ২২ জানুয়ারি ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

ট্রাম্প যুগের সূচনা : উঁকি দেওয়া কিছু ভাবনা

জানুয়ারি ২০১৭ মাসের ১৪ তারিখে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আমার দু’জন আত্মীয় স্বদেশের টানে বেড়াতে এসেছেন। তারা দীর্ঘদিন পরে দেশে এসে বেশকিছু পরিবর্তন দেখে অনেকটা আশ্চর্য হয়েছেন। সেইসাথে তাদের মনের মধ্যে একপ্রকার স্বস্তি কাজ করছে স্বদেশকে নিয়ে।

এখন তথ্য প্রযুক্তির ডিজিটাল এ যুগে যিনি যতদূরেই থাকুন না কেন সেটাকে আর ততদূরে মনে হয়না। বরং সারাক্ষণই সংযুক্ত থাকা হয় বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্য নিয়ে। তারপরও তারা যেহেতু অনেক দিন দেশে এসেছেন সেজন্যই কথায় কথায় দেশ-বিদেশের অনেক বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা চলতে থাকে চলার ফাঁকে ফাঁকে। কিন্তু একটি বিষয়ে তাদের মাঝেও বেশ ক্ষাণিকটা অস্তস্তি লক্ষ্য করা গেছে।

সেটি হলো যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য-সমাপ্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। আমার আত্মীয়রা স্বদেশ সফর শেষ কওে আবারো যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাবেন ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে। সেই চলে যাওয়ার কথা জিজ্ঞেস করতেই অনেকটা আতঙ্কিতভাবেই যেন বললেন, ‘যাবো তো ফিরে, তবে ওবামা নয়, ট্রাম্পের দেশে’। তার মানে, এখানে গণমাধ্যমের কল্যাণে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ভিতরে না গিয়েও সেখানকার পুরো ও সঠিক খবরটা বের করতে পেরেছি। এখানেও ঠিক একইরকমভাবে প্রতিফলন ঘটল আমার আত্মীয়দের কথার ভিতর দিয়ে। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত আমার আরেক বন্ধুর সাথে প্রায়ই কথা হয়। তিনিও একই আতঙ্কের সুরে কথা বলেছেন নির্বাচনের আগে এবং এখন নির্বাচনের পরেও। তাছাড়া পত্র-পত্রিকা এবং টেলিভিশনেও তো প্রতিদিনই কোন না কোন আলোচিত খবর বের হচ্ছেই।

গত ৮ নভেম্বর দেশটিতে একটি বিপুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও সবচেয়ে ঘটনাবহুল আলোচিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রায় দেড় মাস পর রীতি অনুযায়ী ২০ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়ে হোয়াইট হাউজের দখল নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান দলের লাখ লাখ কর্মী সমর্থকসহ দেশ-বিদেশের লাখোলাখো মানুষ সেদিন সরাসরি উপস্থিত হয়ে প্রত্যক্ষ করেছেন এ ঐতিহাসিক শপথ অনুষ্ঠান। যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রীতিতে পরমত সহনশীলতা একটি বড় ঐতিহ্য হলেও গণমাধ্যমে তাঁর বিভিন্ন ইস্যুতে উপর্যুপরি বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে যাওয়ার কারণে তাঁর এ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ডেমোক্রেট দলের একেবাওে রীতিসিদ্ধ কয়েকজন ছাড়া উল্লেখযোগ্য কেউ উপস্থিত থাকেন না বলে জানা গেছে।

যা’হোক, ২০ জানুয়ারি থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। নির্বাচনের আগে তাঁর নির্বাচনী প্রচারণাকালে আচার-আচরণ, বক্তৃতা-বিবৃতি পর্যালোচনা করলে তাঁকে আসলে একজন অস্থির প্রকৃতির মানুষ হিসেবেই সাাব্যস্ত করেছেন সবাই। কিন্তু বিজয়ের পর সর্বপ্রথম প্রদত্ত তাঁর প্রতিক্রিয়ায় তাঁকে বেশ ধীর-স্থির ও ভদ্রোচিত মনে হয়েছিল। পরের দিন তিনি আবার তাঁর রানিংমেট ভাইস প্রেসিডেন্টসহ বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবাবামর সাথে হোয়াইট হাউজে সাক্ষাত করতে এসেও স্বাভাবিক ও সহযোগিতামূলক আচরণ করেছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে ৪৫তম ব্যক্তি, আর এটি ৫৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এর আগে দেশটিতে বিভিন্ন মেয়াদে আরো ৪৪ জন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। দেশটির সংবিধান মোতাবেক সেখানে একেকজন প্রেসিডেন্টের মেয়াদ হয় চারবছর। আর সংবিধানের ২২ ধারা সংশোধনের কারণে প্রেসিডেন্ট হিসেবে একই ব্যক্তি পরপর কিংবা দুই মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারেন না।

স্বাধীনতার পর ১৭৮৯ থেকে ১৭৯৭ পর্যন্ত দেশটির ইতিহাসে প্রথম রাষ্ট্রপতি জর্জ ওয়াশিংটন পর পর দুইবার ক্ষমতায় ছিলেন। তারপরে কেউ এক মেয়াদে এবং কেউবা দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৮৬১ সালে সবচেয়ে কম সময় মাত্র একমাস ক্ষমতায় থাকার পর আততায়ীর গুলিতে মৃত্যুবরণ করেন দেশটির ১৬তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন। পরে তাঁর বাকী সময় পুরা করেন ১৭তম প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জনসন। তিনিও পরে দ্বিতীয় মেয়াদে (১৮৬৫-৬৯) নির্বাচিত হয়েছিলেন।

আর সবচেয়ে বেশি সময়, অর্থাৎ পরপর চারমেয়াদ (১৯৩৩-৪৫) ক্ষমতায় ছিলেন ৩২তম প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট। তবে চতুর্থ দফায় নির্বাচনের পর মাত্র ৮১দিন পরে তিনি মারা যান। তার বাকী মেয়াদ (১৯৪৫-৪৯) পূরণ করেন ৩৩তম প্রেসিডেন্ট হেনরি ট্রুম্যান। তিনি অবশ্য পরে আরো এক মেয়াদের (১৯৪৯-৫৩) জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে কেউ নির্দলীয়, কেউ একীভূত ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান দল থেকে, কেউ আলাদা হওয়া ডেমোক্রেটিক বা রিপাবলিকান দল থেকে ।

৪৪ তম প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পরপর দুই মেয়াদে (২০০৮-২০১৬) নির্বাচিত হয়েছিলেন ডেমোক্রেটিক দল থেকে। তাঁর কাছ থেকেই ক্ষমতা হস্তান্তরিত হচ্ছে ২০ জানুয়ারি। তারই ধারাবহিকতায় ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্যাম্প নির্বাচিত হলেন রিপাবলিকান দল থেকে। আগামী চারবছর তাঁকে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভাগ্য কীভাবে রচিত হবে তা সময়েই বলে দেবে। কিন্তু কে এই ডোনাল্ড ট্রাম্প? কী তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়, কী তাঁর ক্যারিয়ার, কীভাবে হলো তাঁর এ উত্থান? কী যাদুতে তিনি এ অসাধ্য সাধন করলেন?

সেসব বিষয়ে সবারই জানার আগ্রহ রয়েছে। সে পরিচয় নিয়েই আমি এখানে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করব। নিউইয়র্কে জন্ম হয় ডোনাল্ড ট্রাম্পের। বাবা ছিলেন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী। তিনি নিজেও এ খাতে সফল। কিন্তু তাঁর রয়েছে হরেক রকম পরিচয়। ব্যবসায়ী ছাড়াও তিনি মিস ইউনিভার্সের স্পন্সর ছিলেন দীর্ঘদিন। ‘অ্যাপ্রেন্টিস্ট’ নামের একটি রিয়েলিটি টিভি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ছিলেন ট্রাম্প। তিনি রেসলিং ম্যাচও উপস্থাপনা করেছেন।

ডোনাল্ড ট্যাম্পের জন্ম ১৯৪৬ সালের ১৪ জুন তারিখে। রিয়েল এস্টেট ব্যবসাকে নিজের কর্মজীবন হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর পিতার যথেষ্ট অনুপ্রেরণা ছিল। ট্রাম্প পেনসিলভেনিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হেয়ারটন স্কুলে অধ্যয়নের সময় তাঁর পিতার ‘এলিজোবেথ ট্রাম্প এন্ড সান’ প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। পরবর্তীতে ১৯৬৮ সালে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি তাঁর পিতার প্রতিষ্ঠানের হাল ধরেন।

১৯৭১ সালে ট্রাম্প তাঁর প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করেন এবং সেটির নাম পরিবর্তন করে ‘দ্য ট্রাম্প অর্গানাইজেশন’ রাখেন। যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্বস ম্যাগাজিনের ২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী তিনি বিশ্বের ৩২৪ তম এবং যুক্তরাষ্ট্রের ১৫৬তম ধনী ব্যক্তি। ট্রাম্প স্ব-বিরোধী পন্থায় বিভিন্ন সময়ে তাঁর রাজনৈতিক বিষয়ক পা-িত্য এবং অবস্থান বর্ণনা করেছেন। ট্রাম্পের অভিবাসন বিরোধী রাজনীতি তাঁকে তাঁর শ্রমিক শেণির সমর্থকদের মধ্যে বেশি জনপ্রিয় করে তুলেছিল। ট্রাম্প অনেক গণ্যমান্য সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এব মনোনয়নপ্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিদের বক্তব্যের মাধ্যমে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন। ২০০০ সালে তিনি রিফর্ম পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন। যদিও ভোটের আগেই নিজে থেকে সরে দাঁড়ান।

আমেরিকার এ ধনকুবের আগে সরাসরি সক্রিয়ভাবে কোন রাজনীতিতে জড়িত না থাকলেও তাঁর টাকার অহঙ্কারের কারণেই বিভিন্ন সময়ে দলছুট রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন বারবার। সেই দৌড়ে কখনো রিপাবলিকান আবার কখনো বা ডেমোক্রেট। এবারো এখন থেকে প্রায় দেড়বছর আগে যখন রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন, তখন থেকে নানা বিতর্কিত মন্তব্য করে দলের প্রায় ডজনখানেক প্রার্থীকে পিছনে ফেলে রিপাবলিকান দলের হয়ে ঐতিহাসকিভাবে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন নিশ্চিত করেন।

তারপর নির্বাচনী প্রচারণায় নামার পর থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রাসী মন্তব্য করে সামলোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ট্রাম্প। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার জন্য তিনি নির্বাচনের আগে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। হেরে গেলে নির্বাচনী ফলাফল মানবেন না বলেও চরম বিতর্কের সৃষ্টি করেছিলেন। সেজন্য সেসময় হিলারির সাথে প্রত্যেকটি বিতর্কে এবং গণমাধ্যামসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার সকল জরিপই ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। তারপরও জয়ের ব্যাপারে নিজের আত্মবিশ্বাসের কথা বারবার বলেছেন।

তিনি আমেরিকানদের এই বলে জাগাতে চেয়েছেন যে, ‘লেট আস মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’, ‘ইট ইজ টাইম টু ড্রেন দ্য সোয়াম্প অফ ওয়াশংটন ডিসি’। নির্বাচনে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে ট্রাম্প জিতে গেলেও এখন তাঁর বিরুদ্ধে সারা যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প বিরোধী আন্দোলন-বিক্ষেভে দানা বেধে উঠেছিল তখন। সেসময় বিভিন্ন শহরে ভাঙচুর এবং জাতীয় পতাকাতে পর্যন্ত আগুন দেওয়া হয়েছিল। এরকমটি কোন নির্বাচনের ফলাফলের পরে আর কখনো দেখা যায়নি। এসবের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে, সেজন্য মার্কিনীরা ক্ষমতায় বসার আগেই ট্রাম্পের অভিশংসনের বিষয় নিয়েও ভাবতে শুরু করে দিয়েছিল। ট্রাম্প অবশ্য তাঁর স্বভাজাতভাবে এসব কর্মকা-ের বিষয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তা মিডিয়ার অপপ্রচার হিসেবে চালিয়ে দিয়েছিলেন। শপথ নিয়ে ক্ষমতা গ্রহণের পূর্বেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা, অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, অভিবাসন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তাঁর কিছু নীতিগত বক্তব্য আবারো যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণসহ সারাবিশ্বে আবার নতুন করে আশঙ্কার সৃষ্টি হচ্ছে।

ইতোমধ্যে তিনি তাঁর এক মেয়ের জামাতাকে আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা নিয়োগ করে স্বজনপ্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বলে এখনই বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়েছেন। অপরদিকে তিনি চিরশত্রু হিসেবে পরিচিত রাশিয়া ও চীনের সাথে নতুনভাবে সম্পর্ক তৈরী করে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে চান সফল ব্যবসায়ী থেকে হঠাৎ রাজনীতিক আসা এ নেতা। ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন সৈন্য প্রেরণ ভুল ছিল বলে তিনি তখনকার মার্কিন প্রশাসনের কঠোর সমালোচনা করেছেন। অপরদিকে মধ্যপ্রাচ্যে আইএসের কারণে সৃষ্ট অভিবাসন বিষয়ে তাঁর কঠোর অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। সেখানে সিরিয়াতে সংঘটিত সমস্যার কারণে জার্মানিসহ সারা ইউরোপজুড়ে যে অভিবাসন প্রত্যার্পন হয়েছে সেটার জন্য জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের ব্যাপক সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প।

ব্রিটেনের সম্প্রতি গণভোটের মাধ্যমে ব্রেক্সিট হওয়ার বিষয়েও তিনি অভিবাসনকে দায়ী করেছেন। তাঁর ভাষায় যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ অভিবাসীদের জন্য তাদের সীমান্ত খুলে না দিলে গণভোটে ব্রেক্সিট জয়ী হতো না। সেজন্য তিনি ইইউ গঠনের বিপক্ষে। তাই তিনি ব্রিটেনের মতো অন্যান্য দেশকেও ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু তার এসব পরামর্শ অন্যায় হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের পর নতুন প্রেসিডেন্ট শপথ নেওয়ার পূর্বে আবার জনমত জরিপ করার একটি রেওয়াজ চালু রয়েছে। এবারো গ্যালাপের একটি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।

সেখানে দেখা গেছে, বর্তমানে তাঁর সপক্ষে জনমত রয়েছে মাত্র ৪৪ শতাংশ। অথচ প্রেসিডেন্ট হিসেবে বারাক ওবামার শপথের সময় তার জনসমর্থন ছিল ৮৩ শতাংশ। এক্ষেত্রে জর্জ ডব্লিউ বুশের জনমত ছিল ৬১ শতাংশ এবং বিল ক্লিনটনের যা ছিল ৬৮ শতাংশ। কাজেই তার বক্তব্যের সাথে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জনমত, বিল পাস হওয়া, বিশ্বব্যাপী আস্থা অর্জন, দেশে-বিদেশে আস্থা গড়ে তোলা, অর্থনীতি মজবুত হওয়া, এসবই এখানো সভ্য সমাজে সাফল্যের সূত্র। এগুলো এখনো সব আগের মতই রয়েছে। ট্রাম্প কথায় কথায় নতুন ধারার প্রেসিডেন্ট আমলের সূচনা করতে চাইছেন। নিঃসন্দেহে একজন প্রেসিডেন্ট সেটা করার অধিকারও রাখেন।

কিন্তু যতই তিনি নতুনের পথে হাঁটুন না কেন. মানুষ তাকে মূল্যায়র করবে সেই পুরানো মাপকাঠির নিরিখেই। তবে যে যাই বলুক বা ভাবুক না কেন, একবার নির্বাচিত হয়ে গেলে কমপক্ষে চারবছর তো এর মাসুল দিতেই হবে। কারণ এবার ট্রাম্প উচ্চকক্ষ সিনেট, নিন্মকক্ষ, স্থানীয় প্রশাসনসহ সবখানে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্টতা অর্জন করেছেন। তাছাড়া নির্বাচনে জিতে প্রথম ভাষণে সবাইকে নিয়ে একসাথে চলার একটি আশাবাদ ছিল তাঁর।

অপরদিকে নির্বাচন পরবর্তীতে হোয়ইট হাউজে ওবামার সাথে দেখা করতে গিয়েও তিনি আশার কথা শুনিয়েছেন। এতে হতাশার মাঝেও কারো কারো ভিতরে একটু-আধটু আশার সঞ্চার হয় বৈকি! কারণ এমনও তো হতে পারে রাজনীতিতে নবাগত, অনভিজ্ঞ ট্রাম্পের এটিই ছিল নির্বাচনে জেতার কৌশল, যা তিনি আর রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে কাজে লাগাবেন না! এমনটি হলেই বরং যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বরাজনীতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। ২০ জানুয়ারির পর থেকে আমরাও আগামী চারবছরের জন্য সেটি দেখার জন্যই বিশ্ববাসী প্রত্যাশায় অপেক্ষা করবো।

লেখক: ডেপুটি রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]  

 

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer