Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৫ ১৪৩১, শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘টুং টাং’ শব্দে মুখর আশুলিয়ার কামারপাড়া

তুহিন আহামেদ, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০২:৩৩, ৩০ আগস্ট ২০১৭

আপডেট: ২০:৪২, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

প্রিন্ট:

‘টুং টাং’ শব্দে মুখর আশুলিয়ার কামারপাড়া

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

সাভার : ঈদের বাকী আর মাত্র ক’দিন । এরই মধ্যে ব্যস্ত সময় পার করছে কামার পাড়াগুলো। আশুলিয়ার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায়, বিভিন্ন বাজারের কামারপাড়া চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। দম নেওয়ারও সময় যেন নেই তাদের। টুংটাং শব্দে মুখরিত চারদিক।

দিনরাত সমান করে তারা এখন ছুরি, চাপাতি, দা, বটি, ছোট চাকু সহ কোরবানির বিভিন্ন সরঞ্জামাদি তৈরী করছে। সেই সাথে বিক্রিও থেমে নেই। বছরের একটি সময়ই বিক্রি ও তৈরীর ধুম পড়ে যায় কামারপাড়ায়। তবে বিগত সময়ের চেয়ে এবার এসব সরঞ্জামের দাম বাড়তি হলেও ক্রেতারা তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনছেন হাসি মুখেই।

কোরবানি ঈদ যতই এগিয়ে আসছে ততই ব্যস্ত হয়ে পড়ছে কামাররা। ক্রেতারাও তাদের পছন্দের ছুরি, চাপাতি, কুড়াল, মাংস কাটার জন্য গাছের গুলের টুকরো কেনার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

সরেজমিনে আশুলিয়ার গোহাইলবাড়ি, শিমুলিয়া, কোনাপাড়া, জিরানী বাজার, ধামসোনা বাজার, বলিভদ্র বাজার, জিরাবো বাংলাবাজার, আশুলিয়া বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে জানা গেছে, ঈদের আর মাত্র ৪/৫দিন বাকী। ঈদকে সামনে রেখে এসব এলাকার কামারেরা ব্যস্ত সময় পাড় করছে কোরবানি উপলক্ষে লোহা দিয়ে নানা সরঞ্জামাদি তৈরীতে। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তারা কাজ করে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে আবার অতিরিক্ত কাজ হাতে থাকায় নতুন করে অনেকে আবার অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।

বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে কোরবানির ঈদ আসলেই দিন-রাত এক করে ব্যস্ত থাকতে হয় কামারদের। পশু জবাই থেকে শুরু করে মাংস বানানোর সকল সরঞ্জামাদি তৈরী করে থাকেন কামাররা। আবার এগুলো কিনতেও বিভিন্ন বাজারের দোকানগুলোতে ভির করতে দেখা গেছে লোকজনদেরকে। আবার অনেক দোকানিরা গরু-ছাগল ও ভেড়া সহ বিভিন্ন পশু জবাইয়ের উপকরণগুলো সাজিয়ে রেখেছেন।

আশুলিয়ার কোনাপাড়া কলেজপাড় এলাকার এক কামার বদর শাহা জানান, বছরের অন্যান্য সময় বটি-দাঁ তৈরী এবং বিক্রি করেই সময় পার হয়ে যায়। কিন্তু কোরবানির ঈদ আসলেই বটি-দায়ের পাশাপাশি ছোট চাকু, ছুরি, চাপাতি সহ নানা সরঞ্জামাদি তৈরীতে ব্যস্ত থাকতে হয়। একদিকে তৈরীতে যেমন ব্যস্ত থাকতে হয় আবার অন্যদিকে এগুলো বিক্রি করতেও ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। একটি বটি ১৫০টাকা থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়, একটি চাকু ১০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত ব্যস্ত থাকতে হয়, আবার চাপাতি ৩০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয় এবং প্রতিটি দাঁ ওজন অনুসারে ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়।

তিনি আরো জানান, আগে এগুলো বিক্রি করে ভালই চলতাম। কিন্তু এখন আর আগের মত লাভ হয়না। কারণ লোহা ও কয়লার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে শ্রমিকদের বেতন দিয়ে যা থাকে তা দিয়ে মোটামোটি চলে যায় আরকি।

নেপাল শাহ নামের এক কামার জানান, তিনি বংশগতভাবে এ পেশার সাথে জরিত। অন্যান্য দোকানিদের মত তিনিও ব্যস্ত সময় পার করছেন দা-বটি আর চাপাতি তৈরীতে। তার দোকানে চারজনের মত মিস্ত্রি কাজ করছে এগুলো তৈরী করতে। এ থেকেই তার সংসার চলে যায়। তবে বছরের অন্যান্য মাসের চেয়ে কোরবানির ঈদ আসলেই বিক্রি ও তৈরী বেড়ে যায় হাজারগুন।

চাপাতি কিনতে আসা শরিফ হোসেন নামের এক ক্রেতা জানান, তিনি একটি চাপাতি কিনতে এসেছেন। দাম হাকছেন ৪০০ টাকা। কিন্তু কামার ওই দামে বিক্রি করছেন না। তবে ৫০০ টাকার মধ্যে হলে বিক্রি করবেন বলেও কামার জানিয়েছেন। তবে দাম একটু বেশী হলেও তিনি বাধ্য হয়েই এটি নিবেন।

এদিকে নতুন সরঞ্জামাদি কেনা ও মেরামত বাবত একটু বেশি মূল্য ধরার বিষয়ে কামার দোকানিদের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, আগে যে দামে কয়লা এবং লোহা কিনে আনতাম তা এখন কয়েকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই আগের তুলনায় এখন এসব সরঞ্জামাদির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম একটু বেশী নিচ্ছি।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer