Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৫ ১৪৩১, শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

টিলা কেটে হোটেল-কটেজ, হুমকিতে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

নূরুল মোহাইমীন মিল্টন, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০২:১৪, ১৩ অক্টোবর ২০১৬

আপডেট: ২০:৩৬, ১৩ অক্টোবর ২০১৬

প্রিন্ট:

টিলা কেটে হোটেল-কটেজ, হুমকিতে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

জেলার কমলগঞ্জে টিলা কেটে তৈরী হচ্ছে কটেজ। ছবি: বহুমাত্রিক.কম

মৌলভীবাজার : পাহাড়-টিলা ঘেরা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া উপজেলার টিলায় টিলায় এখন শোভা পাচ্ছে হোটেল-কটেজ। এসব টিলা কেটে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠা এসব তথাকথিত ইকো কটেজ স্থানীয় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি করছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন রকম অনুমতির তোয়াক্কা না করেই টিলার বাঁকে বাঁকে এসব স্থাপনা গড়ে উঠছে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন বনে কটেজ এর পাশাপাশি চলছে বাণিজ্যিক কার্যক্রম। ফলে মিশ্র চিরহরিৎ লাউয়াছড়া উদ্যানের জীববৈচিত্র্যকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে বন ও পরিবেশ। এতে চরম উদ্বিগ্ন স্থানীয় অধিবাসী ও বিশিষ্টজনরা।

২০১৪ সনে ভ্রাম্যমান আদালত লাউয়াছড়া উদ্যান সংলগ্ন এলাকায় টিলা কেটে কটেজ তৈরি করার কারণে দু’টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করলেও থেমে নেই এই অপতৎপরতা।

১৯৯৬ সালে কমলগঞ্জের পশ্চিম ভানুগাছের সংরক্ষিত বনের ১২৫০ হেক্টর জায়গা নিয়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। উদ্যান ঘোষণার পর থেকেই এখানে দেশি বিদেশী পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে লিজকৃত এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন ভূমিতে একটি মহল পাহাড়ি বনের উচুঁ টিলা কেটে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান স্থাপনের হিড়িক পড়ে।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের কাছে ডলুবাড়িতে এভাবেই টিলা কেটে নির্মিত হচ্ছে কটেজ

বনের টিলায় কিংবা টিলার বাঁকে বাঁকে ইকো-কটেজ, মটেজ ব্যঙের ছাতার মতো দ্রুত গতিতে গড়ে উঠছে এসব বাণিজ্যিক স্থাপনা। লাউয়াছড়া উদ্যান এলাকায় এধরণের তিনটি কটেজ থাকলেও উদ্যান ঘেঁষে শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ ও কুলাউড়ার টিলায় টিলায় প্রায় অর্ধশতাধিক কটেজ গড়ে উঠেছে।

লাউয়ছড়া বন সংলগ্ন ডলোবাড়ি ও বিষামনিতে বনের জায়গা দখল করে ও দৃষ্টি নন্দন পাহাড় কেটে কটেজ তৈরীর অভিযোগে ২০১৪ সনের ৩ নভেম্বর শ্রীমঙ্গলস্থ ভ্রাম্যমান আদালতের ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ সাইদুল হক সরজমিনে অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে নির্মিত ২টি নির্মানাধীন রিসোর্টের একটিকে নগদ ৫ লাখ টাকা জরিমানা ও অপরটির ভেতরে মাটিকাটার কিছু সামগ্রী পুড়িয়ে ও পানির ট্যাঙ্ক, বিদ্যুতের তার ধ্বংস করে দেয়া হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, শ্রীমঙ্গলের রাধানগর এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়েই পাঁচ তারকা হোটেল ‘গ্রান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফ’ স্থাপিত হয়েছে। তবে এর পার্শ্ববর্তী লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন ডলুবাড়ি এলাকায় লেমন গার্ডেন, জঙ্গল কটেজ এবং শ্রীমঙ্গলের রাধানগর এলাকায় নিসর্গ লিচু, নিসর্গ নিরব, আর্মিটেড, আমাজান, হীমাচল, শান্তিবাড়ি, নীড়বর্ন, আমার বাড়ি, গ্রান্ট মুবিনসহ অসংখ্য বাহারি নামে কটেজ স্থাপিত হলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন অনুমতি নেই।

রীতিমতো ঘন বন কেটে তৈরী হয়েছে এই কটেজটি

লেমন গার্ডেনের পার্শ্ববর্তী স্থানে উচুঁ টিলা কেটে উপরে নতুন একটি কটেজ নির্মানের কাজ চলছে। কর্মরত শ্রমিকরা জানান, সেখানে প্রায় ৮ ফুট উচুঁ টিলা কেটে কটেজ নির্মানের কাজ চলছে। এভাবে আশপাশ আরো কয়েকটি টিলায় কটেজ নির্মাণে আরো অনেকের প্রস্তুতি রয়েছে।

এ ব্যাপারে জঙ্গল কটেজ এর মালিক রুকন মিয়া জানান, তাঁর নিজস্ব ভূমিতে কটেজ করেছেন। টিলা কেটে কিংবা পরিবেশের কোন ক্ষতি না করেই তারা কটেজ নির্মাণ করেছেন।

পাহাড় রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটি’র চেয়ারম্যান মোঃ সালাহউদ্দীন আহমদ বলেন, পাহাড় কাটা কোনভাবেই ঠিক নয়। এরপরও শ্রীমঙ্গলসহ আশপাশ এলাকার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কাটা হচ্ছে। ১৯৯৫ সনের আইনে এটি আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। এব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য তিনি সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।

মৌলভীবাজার পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি সৈয়দ মহসিন পারভেজ বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া পাহাড়, টিলা কাটার কথা নয়। অথচ জাতীয় উদ্যানের পার্শ্ববর্তী স্থানে এতোসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে পরিবেশ অধিদপ্তরের নিরবতা প্রশ্ন সাপেক্ষ বিষয়।

বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বিভাগীয় কর্মকর্তা মোঃ তবিবুর রহমান বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে কেউ আমাদের কাছে আসে না। তবে এটি দেখার দায়িত্বে রয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট এর পরিচালক মোঃ ছালাহ উদ্দীন চৌধুরী বহুমাত্রিক.কম-কে বলেন, আমার জানা মতে গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফ অনুমতি নিয়ে স্থাপন করেছে। এছাড়া আর কোন কটেজ বা হোটেল পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নেয়নি। 

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer