Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৬ ১৪৩১, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪

টমেটো চাষে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক, হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

নূরুল মোহাইমীন মিল্টন, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১:০১, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

টমেটো চাষে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক, হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

মৌলভীবাজার : কৃষি অধ্যুষিত মৌলভীবাজারের আশপাশ বিভিন্ন স্থানে টমেটো চাষাবাদে চলতি মৌসুমে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে বিষাক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করা হচ্ছে। হাইব্রিড জাতের চাষাবাদকৃত এসব টমেটোতে ছত্রাক ও পোকামাকড়ের আক্রমন থেকে রক্ষা করতে সপ্তাহ অন্তর ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক ব্যবহার সহনীয় পর্যায় ছাড়িয়ে গেছে।

কীটনাশক টমেটোতে ব্যবহারের পর ছড়িয়ে ছিটিয়ে দুর-দুরান্তে গিয়ে মাছ, ব্যঙ, জলজ প্রাণি মারা যাচ্ছে। অন্যদিকে বাজারজাতের পর চাকচিক্য টমেটো কিনে খাওয়ায় মানব স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অত্যধিক পরিমাণে কীটনাশক ব্যবহারে সচেতন মহল খাবারে টমেটোর প্রতি অনাগ্রহ প্রকাশ করছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শীতকালীন সবজি হিসাবে মৌলভীবাজারের বিভিন্ন এলাকায় টমেটো চাষাবাদ হচ্ছে। অমৌসুমেও জেলার প্রায় ৪৫ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষাবাদ হয়েছে। চাষাবাদকৃত টমেটোর মধ্যে হাইব্রীড জাতের বারি-৪, বারি-৮ ও ইপোক রয়েছে। বিদেশী জাতের হাইব্রীড টমেটোর চারার গাছে অধিক ফলনের আশায় বছর বছর অধিক থেকে অধিকতর পরিমানে রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হচ্ছে।

কৃষকরা বলেন, প্রতি বছর হাইব্রীড জাতের চাষাবাদের কারনে অধিক পরিমাণে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের প্রয়োজন হয়। তাছাড়া বিদেশী জাতের চাষাবাদ মাটির খাদ্যকণা শুষে নেয়ায় জমিতে খাদ্যের ঘাটতি ও মাটির উর্বরাশক্তি বিনষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে একই জাত বার বার চাষাবাদ, মাটি পরীক্ষা ও সুষময়ে সার প্রয়োগ না করার ফলে এবছর ক্ষেতে বেশি করে সার ও কীটনাশকের প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে। চলতি মৌসুমে টমেটো ক্ষেতে কৃষকরা সিতারা ও সিক্সআর জাতের বিষাক্ত কীটনাশক সপ্তাহ পর পর প্রয়োগ করছেন। কীটনাশক প্রয়োগকৃত এসব টমেটো বাজারজাত করা হচ্ছে। ফলে বাজার থেকে কিনে খাওয়া টমেটো মানবস্থাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির কারন হয়ে পড়ছে।

ব্রজেন্দ্র সিংহ, মোবাশ্বির আলী, মানিক মিয়া সহ কয়েকজন টমেটো চাষি বলেন, টমেটো চাষাবাদে সার ও কীটনাশক প্রয়োগ না করলে ছত্রাক ও পোকামাকড়ের আক্রমনে পুরো ক্ষেত বিনষ্ট হয়ে পড়ে। তাছাড়া হাইব্রীড চাষাবাদে বছরের পর বছর সার ও কীটনাশকের মাত্রা বৃদ্ধি না করলে ছত্রাক ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। চাষিরা কীটনাশকে ক্ষতির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এসব কীটনাশক প্রয়োগ করলে অনেকদিন পর্যন্ত কার্যক্ষমতা লক্ষ করা গেছে। ক্ষেতের জমি নদী, ছড়া, নালা কিংবা জলাভূমির আশপাশে হলে কীটনাশক প্রয়োগের পর তা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ২০কি.মি. দূর পর্যন্ত গিয়ে সাপ, ব্যঙ, মাছসহ জলজ প্রাণি মারা যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কৃষি বিভাগের দু’জন কর্মকর্তা বলেন, বাজারের চক চক করা টমেটো কিনে না খাওয়াই উত্তম। এমনকি এগুলো কেউ ফ্রি দিলেও নেয়া ঠিক হবে না। তারা বলেন, মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শনকালে ক্ষেতে কৃষকরা যে কীটনাশক প্রয়োগ করেন সেটির ছিটে ফোটা টমেটোর গায়ে লেগে থাকে, এমনকি ক্ষেতে কীটনাশকের দুর্গন্ধও পাওয়া যায়। এগুলো মুছতে না মুছতে পোকা নিবারনের জন্য আবারও কীটনাশক প্রয়োগ করা হচ্ছে।

কৃষিবিদ মো. সামসুদ্দীন আহমদ বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে নিয়মিত কৃষকদের সহনীয় পর্যায়ে সার ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কৃষকদের কীটনাশক ব্যবহারের পরিবর্তে জৈব পদ্ধতি, ফেরোমোন টেবলেট প্রয়োগ, হাত দিয়ে মোকা দমন সহ ম্যাকানিক্যাল পদ্ধতি ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

টমেটোতে কীটনাশক প্রয়োগে মানব স্বাস্থ্যের ক্ষতি বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইয়াহিয়া বলেন, মাত্রাতিরিক্ত হারে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মানুষের শরীরে কিডনী ও লিভারে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কৃষি বিভাগের নিয়মানুযায়ী সহনীয় পর্যায়ে কীটনাশক প্রয়োগ করা উচিত, তাহলে পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের ক্ষতি বয়ে আনবে না।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer