ছবি : বহুমাত্রিক.কম
মৌলভীবাজার : টমেটো চাষে নানা ধরণের কীটনাশকের ছড়াছড়িতে তীব্র দুর্গন্ধে ভারী হয়ে উঠছে আশপাশের পরিবেশ। মৌলভীবাজারের কৃষি অধ্যুষিত কমলগঞ্জের টমেটো ক্ষেতে কীটনাশকের এই ছড়াছড়ি লক্ষ্য করা গেছে। আশপাশ বিভিন্ন স্থানে টমেটো চাষাবাদে চলতি মৌসুমে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে বিষাক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
হাইব্রিড জাতের চাষাবাদকৃত এসব টমেটোতে ছত্রাক ও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সপ্তাহে দু’বার ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়। ফলে মানব স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিন উপজেলার পাত্রখোলা বালুচর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিশাল এলাকায় ১৮ একর জমিতে গাছে গাছে পাকা ও আধা পাকা টমেটো ঝুলছে। ১৪ জন কৃষক নিজ নিজ অংশে টমেটো চাষাবাদ করছেন। কীটনাশক ব্যবহারের পর খালি বোতল ও ব্যবহৃত অজস্র প্যাকেট পরিত্যক্ত স্থানে ফেলে রাখতে দেখা যায়। নিয়মিত কীটনাশক ব্যবহারে তীব্র দুর্গন্ধে সেখানকার আশপাশ এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠছে। বিভিন্ন কোম্পানির লোকজন টমেটো ক্ষেতে কীটনাশক নিয়ে কৃষকদের কাছে বিক্রি করছেন। ফলে ছত্রাক, পচন ও পোকামকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষায় কৃষকরা ইচ্ছেমতো নানা জাতের কীটনাশক টমেটো ক্ষেতে স্প্রে করছেন। অত্যধিক পরিমাণে কীটনাশক ব্যবহারে মানবস্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে।
কমলগঞ্জ কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার আলীনগর, আদমপুর, মাধবপুর ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার তিলকপুর, জামিরকোনা, হোমেরজান, পাত্রখোলা, কাটাবিল, নাজাতকোনা, ধলাই পার, নরেন্দ্রপুর, ছয়ছিড়িসহ বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ৩৫ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষাবাদ হয়েছে। শীতকালীন সবজি হিসাবে বর্তমানে প্রায় ২শ’ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষাবাদ হয়েছে। টমেটোর চাষাবাদ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।
কৃষক মোবাশ্বির আলী, মানিক মিয়া সহ কয়েকজন টমেটো চাষি বলেন, টমেটো চাষাবাদে সার ও কীটনাশক প্রয়োগ না করলে ছত্রাক ও পোকামাকড়ের আক্রমনে পুরো ক্ষেত বিনষ্ট হয়ে পড়ে। তাছাড়া হাইব্রীড চাষাবাদে বছরের পর বছর সার ও কীটনাশকের মাত্রা বৃদ্ধি না করলে ছত্রাক ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। চাষিরা কীটনাশকে ক্ষতির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এসব কীটনাশক প্রয়োগ করলে অনেকদিন পর্যন্ত কার্যক্ষমতা লক্ষ করা যায়। ক্ষেতের জমি, নদী, ছড়া, নালা কিংবা জলাভূমির আশপাশে কীটনাশক প্রয়োগের পর তা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ২০কিলোমিটার দূর পর্যন্ত গিয়ে সাপ, ব্যঙ, মাছসহ জলজ প্রাণি মারা যায় বলে কৃষকরা মন্তব্য করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কৃষি বিভাগের দু’জন কর্মকর্তা বলেন, বাজারের চক চক করা টমেটো কিনে না খাওয়াই উত্তম। এমনকি এগুলো কেউ ফ্রি দিলেও নেয়া ঠিক হবে না। তারা বলেন, মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শনকালে ক্ষেতে কৃষকরা যে কীটনাশক প্রয়োগ করেন সেটির ছিটে ফোটা টমেটোর গায়ে লেগে থাকে, এমনকি ক্ষেতে কীটনাশকের দুর্গন্ধও পাওয়া যায়। এগুলো মুছতে না মুছতে পোকা নিবারনের জন্য আবারও কীটনাশক প্রয়োগ করা হচ্ছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দীন আহমদ বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে নিয়মিত কৃষকদের সহনীয় পর্যায়ে সার ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণও প্রদান করা হচ্ছে। পনের দিন অন্তর সহনীয় মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহারে কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করা হয়। তাছাড়া কীটনাশক ব্যবহারের পরিবর্তে জৈব পদ্ধতি, ফেরোমোন টেবলেট প্রয়োগ, হাত দিয়ে পোকা দমন সহ ম্যাকানিক্যাল পদ্ধতি ব্যবহারেরও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
টমেটোতে কীটনাশক প্রয়োগে মানব স্বাস্থ্যের ক্ষতি বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইয়াহিয়া বলেন, মাত্রাতিরিক্ত হারে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মানুষের শরীরে কিডনী ও লিভারে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কৃষি বিভাগের নিয়মানুযায়ী সহনীয় পর্যায়ে কীটনাশক প্রয়োগ করা উচিত, তাহলে পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের ক্ষতি বয়ে আনবে না।
বহুমাত্রিক.কম