Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১১ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪

ঝিনাইদহের গর্ব পারভেজের চিত্রকর হওয়ার গল্প

জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০১:৪৭, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

ঝিনাইদহের গর্ব পারভেজের চিত্রকর হওয়ার গল্প

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

ঝিনাইদহ : চুপচাপ বসে আছেন তরুণী। এক তরুণ বসে বসে ছবি আঁকছে। তার চোখ একবার ক্যানভাসে, একবার সেই তরুণীর দিকে। পেন্সিলের আঁচড়ে আঁচড়ে ক্যানভাসে ভেসে উঠছে তরুণীর মুখ। আসাদগেট থেকে খামারবাড়ির দিকে আসতেই চোখে পড়ল এমন দৃশ্য। সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে, তখন বিকেল, ছবি আঁকছে তরুণ।

হাতের কাজ শেষ হতেই চিত্রকরের সঙ্গে কথা জুড়ে দিলাম। পরিচয় দিতেই পথের এক কফিওয়ালার কাছ থেকে কফি খাওয়ালেন। এবার জানতে চাইলাম নাম-ধাম। ‘‘আমার নাম ওবায়দুর রহমান পারভেজ। বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা থানায়। বাবার নাম মো. রেজাউল করিম। পরিবারে বাবা, মা ও আমরা দুই ভাই। আমরা দুই ভাই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশুনা করছি। আমি মূলত মনের সুখেই ছবি আঁকি। আর আমার হাত খরচটা ছবি আঁকা থেকেই আসে। পড়াশোনা করার জন্য অর্থিক সাপোর্ট পরিবার থেকেই পাই।’’ অনেকটা একদমেই বলছিলেন তরুণ আঁকিয়ে।

ছবি আঁকার প্রতি ঝোঁক আসলো কিভাবে? এমন প্রশ্নে পারভেজ বলেন, ‘‘ছোটবেলায় বিটিভিতে মুস্তফা মনোয়ার স্যারের ‘মনের কথা’ অনুষ্ঠানটি দেখেই আমার ছবি আঁকা শুরু। বলতে পারেন মুস্তফা মনোয়ার স্যার আমার ছবি আঁকার পরোক্ষ গুরু। তখন আমি প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। আর একটা মজার বিষয় হল আমার দুই চাচা, দাদা- উনারা সবাই খুব ভালো ছবি আঁকতেন। তো ক্লাস ওয়ানে পড়ার সময়ই ছবি আঁকার পেমে পড়ে যাই। আমার স্কুলের শিক্ষকরা ছোটবেলা থেকে আমার ছবি আঁকা দেখে খুবই উৎসাহ দিতেন। স্কুল, কলেজ এবং ইউনিভার্সিটি থেকেও শিক্ষক বন্ধুবান্ধবদের অনুপ্রেরণা পাই। সবার উৎসাহ আমাকে এ পর্যন্ত আসতে সহায়তা করেছে। তবে খুব ইচ্ছা মোস্তফা মনোয়ার স্যারের সঙ্গে দেখা করার। স্যারের সঙ্গে আমার আজো দেখা হয়নি।’

নানা রকমের ছবি আঁকেন পারভেজ। এরমধ্যে আছে, নিসর্গ, মানুষ। জীবগতের নানান বিষয় আছে তার ছবিতে। তিনি বলেন, ‘আমি প্রথম সরাসরি জীবন্ত মানুষ দেখে ছবি আঁকা শুরু করি এক বড় ভাইয়ের আঁকা দেখে। এই সংসদ ভবনের সামনেই। তার ছবি আঁকা দেখে মনে হল আমিও তো ইচ্ছা করলে এমন ছবি আঁকতে পারব। তো, তারপর মাস দুই অনুশীলনের পর এই পোট্রেট আঁকা শুরু করি।’

পথের ধারে ছবি এঁকে প্রথম আয় কত ছিলো, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার মনে আছে, সেটা ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বরের ঘটনা। সরাসরি মানুষের পোট্রেট ছবি এঁকে ৫০০ টাকা পাই।’ একটি ছবি এঁকে এখন ৩০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত নেন বলে জানান পারভেজ।

ছবি নিয়ে পরিকল্পনা কী- এ বিষয়ে পারভেজ বলেন, ‘পড়াশোনা শেষ করার পর আমার ছবি নিয়ে একটা প্রদর্শনী করার ইচ্ছা আছে। আমার ছবির বিষয়বস্তু হবে নিম্নবিত্তদের জীবন।’

ছবি আঁকতে গিয়ে অনেক ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন পারভেজ। তার কোনোটা আনন্দের। কোনোটা বেদনার। একটি ঘটনা কোনোদিন ভুলতে পারবেন না।

সেই ঘটনা শোনা যাক তার মুখেই- ‘একদিন বিকালবেলা একটি ছেলে ও মেয়ে আসলো আমার কাছে। মেয়েটির নাম সাদিয়া আর ছেলেটির নাম শূন্য। ছেলেটি মেয়েটির ছবি একেঁ দিতে বললো। আমি মেয়েটির ছবি এঁকে দেই। ছেলেটি মেয়েটিকে ছবিটা উপহার দেয়। মেয়েটি ওই সময় আমার মোবাইল ফোন নম্বর নেয়। তার কিছুদিন পর শূন্য আমাকে একটা গিফট বক্স দেয় আর বলে, সাদিয়া তোমার ছবি আঁকায় অত্যন্ত খুশি হয়েছে। তোমাকে সে একটা উপহার পাঠিয়েছে। আমি গিফট বক্স এখনো খুলে দেখিনি। মেয়েটি এর দুদিন পরে আমাকে ফোন করে দেখা করতে বলে। আমি দেখা করার জন্য যখন যাই তখন সেই গন্তব্যস্থলে একটা সড়ক দূর্ঘটনা ঘটে। আমি কাছে গিয়ে দেখি, সাদিয়া নামের সেই মেয়েটি সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেছে।’

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer