নওগাঁ : নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার প্রত্যন্ত একটি গ্রাম কৃষ্ণশাইল। এই গ্রামের একটি বংশে বংক্রানুক্রমে এক জটিল রোগে ইত্যেমধ্যে ৮ জন মারা গেছেন। এই রোগে আরো ৯ জন আক্রান্ত হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। রাজধানীসহ দেশের দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করে কোথাও কেউ সুস্থ না হয়নি। এতে পরিবারের বাকিরা সবাই এই রোগে আক্রান্ত হওয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন।
চিকিৎসকদের ভাষায় এই রোগে নাম Huntington’s Disease বা জ্বিনগত সমস্যা। চিকিৎসক সূত্রে জানা গেছে, এ রোগের প্রতিষেধক এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি।
জানা গেছে, নিয়ামতপুর উপজেলার কৃষ্ণশাইল গ্রামের ঈমান আলী। ঈমান আলীর আদরের একমাত্র মেয়ে রহিমন খাতুন। রহিমনকে বিয়ে দিয়ে জামাই-মেয়েকে বাড়িতেই রেখে দেন ঈমান আলী। প্রায় ৭২ বছর আগে আগে ঈমান আলীর হাত-পা ধীরে ধীরে পঙ্গু হয়ে মারা গেছেন। তার ৬৭ থেকে ৬৮ বছরে তিনি আক্রান্ত হয়ে ছিলেন।
একই ভাবে রহিমনও ৬২ বছর বয়সে আক্রান্ত হয়ে ৬৭ বছর বয়সে মারা গেছেন। রহিমনের চার ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে তিন ছেলে ও এক মেয়ে ইত্যে মধ্যে এই জ্বিনগত রোগে আক্রান্তে মারা গেছেন। এই সাত সন্তানের সন্তানাদির ৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন এই রোগে।
মৃতরা হলেন, ঈমান আলী (৭২), রহিমন খাতুন (৬৭), রহিমন খাতুন তিন ছেলে মো: আমির (৬২), সমির (৫৮) সিরাজুল ইসলাম (৫২) এবং এক মেয়ে নেকজান বিবি(৫০)। নেকজান বিবির ছেলে আজিজুল ইসলাম(৩৭), সিরাজুল ইসলামের মেয়ে তারামন বিবি(২৫)। আক্রান্তরা হলেন, মোসলেমা বিবি, লাইলী, মজিদুল, শাবান, শবিফুন বিবি, শরীফুল, স্বপ্নাসহ ৯জন।
সোহেল রানা জানান, এই রোগ যখন কাউকে আক্রান্ত হওয়ার আগ মুহূর্তে তার চোখের পাতা, হাত-পা-এর আঙ্গুল লাফাতে শুরু করে। এরপর ধীরে ধীরে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। এ রোগে আক্রান্তরা বছর’দুয়েকের মধ্যে সম্পর্ন্ন অক্ষম হয়ে যান। কিছুই করতে পারেন না।
রোগে আক্রান্তে মারা গেছেন সিরাজুল ইসলামের ছেলে শরিফুল ইসলাম জানান, আগে ৬০-৬৫ বয়সে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতেন। কিন্তু এখন ২০-২৫ বয়সেই এই রোগ দেখা দিয়ে বছর দু’য়েকের মধ্যে মারা যাচ্ছেন। সর্বশেষ এই জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আড়াই বছরের মধ্যেই দুই বছর আগে অল্প বয়সে মারা গেছে তারামন বিবি।
যোগান বিবি জানান, এই রোগে আক্রান্ত এই বংশের লোকদের সমাজে চলতে নানান সমস্যায় পড়তে হয়। ঢাকাতে চিকিৎসা নিয়ে আক্রান্তদের ভালো হয়নি।
রোগে আক্রান্ত শরিফুন বিবি জানান, দুই বছর আগেও ভালো ছিলেন শরিফুন বিবি। এই রোগে আক্রান্ত হওয়ায় এখন তার চলাফেরা করতে সমস্যা হয়। শরীরে ব্যাথায় দুর্বিসহ জীবন যাপন করতে হচ্ছে। পরিবারের অন্যদের হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। তিনি দাবি করেন, এক জনের রোগ চিহ্নিত হলেই অন্যরা সেরে উঠবেন।
রহিমনের ছেলে গিয়াস উদ্দিন জানান, তার মা রহিমনের গর্ভে জন্ম নেয়া ৭ ছেলে-মেয়ের মধ্যে তিন ছেলে ও এক মেয়ে এই রোগে আক্রান্তে মারা গেছে। তিনি বর্তমানে ভালো আছেন। তার নানা থেকেই মূলত এই রোগ দেয়া দেয়। রাজশাহী, ঢাকাসহ বিভিন্ন হাঁসপাতালে চিকিৎসা করা হয়েছে। চিকিৎসায় হাজার হাজার টাকা খরচ হলেও এখন পর্যন্ত কেউ ভালো হয়নি। এ
খন পর্যন্ত বংশগত ভাবে মোট ৮জন মারা গেছে। তার ৯জন আক্রান্ত হয়েছে। তিনিসহ বাঁকিরাও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে।রোগটি প্রতিশোধক তৈরী করে আক্রান্তদের বাঁচাতে বিশ্বের বিশেষজ্ঞ এবং সরকারের সহযোগীতায় চেয়েছেন এই রোগে আক্রান্ত পরিবারের লোকজন।
সিভিল সার্জন ডা: রওশন আরা খানম জানান, চিকিৎসকদের ভাষায় এই রোগটিকে Huntington’s Disease বা বাংলায় জ্বিনগত বা বংশগত রোগ বলা হয়। অনেক হাসপাতালে চিকিৎসা করা হলেও এখন পর্যন্ত এই রোগের প্রতিষেধক তৈরী না হওয়ায় এই রোগে আক্রান্তদের ভালো হবার সম্ভবনা নেই বলে জানান এই চিকিৎসক।
তিনি আরও বলেন, তথ্যানুসন্ধানে দেখা গেছে, নিজেদের (বংশের) মধ্যে তাদের বিয়ে হওয়ায় এই রোগ হয়েছে। বিশেষজ্ঞ মতে অন্য বংশের সাথে বিয়ে হলে ধীরে ধীরে তাদের এই রোগ ভালো হবার সম্ভবনা হয়েছে।
বহুমাত্রিক.কম