ছবি : বহুমাত্রিক.কম
সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জে এক বীরমুক্তিযোদ্ধার ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিবাদের জেলা জুড়েই আলোচনার ঝড় বইছে। এই প্রতিবাদ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীর।
নিজের স্বার্থে নয় জেলার প্রতিটি স্কুল, কলেজ নিয়মিত উপস্থিত থাকলেও ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস না হওয়ায় কারণে তিনি এই প্রতিবাদ করেন।
অসচ্ছল এই মুক্তিযোদ্ধা অভাবের তাড়নায় পৌর শহরের তেঘরিয়া পীরবাড়ি এলাকায় কোন রকমে স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ে নিয়ে দিন পার করছেন। সম্প্রতি তিনি সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে অনার্স ২য় বর্ষে পড়–য়া মেয়ে সানজিদার দ্বিতীয় বর্ষের নির্বাচনী পরীক্ষার বিষয়ে তার কাছ থেকে জানতে চান পরীক্ষা কেমন হয়েছে। মেয়ে জানায় পরীক্ষা তেমন ভাল হয় নি।
ভাল না হওয়ার কারনে জানতে চাইলে মেয়ে জানায়, ইংরেজি নন ক্রেডিট ও রসায়ন পরীক্ষা ভাল হয় নি। আরো জানায়, নিয়মিত ক্লাস করলেও এই দুই বিষয়ে কলেজে নিয়মিত পাঠদান না হওয়ায় পরীক্ষা খারাপ হয়েছে। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে মেয়েকে প্রাইভেট পরাতে না পারায় মনের কষ্টে তিনি বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ১৫মিনিটে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলামের কার্যালয়ের সামনের মেঝেতে বসে ২ঘন্টা ব্যাপী অনশন শুরু করেন।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সকল কর্মকর্তারা অনশনের কারণ জানতে চেয়ে অনশন ভেঙ্গে অফিসে এসে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি জেলা প্রশাসক ছাড়া কারো সাথেই কথা বলতে নারাজ।
খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক সকল কাজ ফেলে মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীরের সাথে কথা বলার জন্য বেলা সাড়ে ১১টার সময় আসেন। পরে জেলা প্রশাসক তাকে অনুরোধ করে অনশন ভেঙ্গে তার কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে একান্তে কথা বলেন।
জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম মালেক হুসেন পীরের মুখ থেকে সব কথা শুনে তাকে একটি লিখিত আবেদন করার জন্য অনুরোধ জানান। এছাড়াও এই বিষয়ে গুরুত্বের সাথে তর্দন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীর বলেন, আমার চলার মত একটাই অবলম্বন তা হল মুক্তিযোদ্ধা ভাতা। তা দিয়ে কোন রখমে আমার সংসার চালাই। ছেলে মেয়ের পড়া শুনার খরচ চালাতে গিয়ে আমি হিমশিম খাই। সুনামগঞ্জ সরকারী কলেজে অনার্স ২য় বর্ষে পড়ুয়া মেয়ের দ্বিতীয় বর্ষের নির্বাচনী পরীক্ষার বিষয়ে সানজিদার কাছ থেকে জানতে গিয়ে জানতে পাই নিয়মিত ক্লাস করলেও ইংজেী ও রসায়ন কলেজে ক্লাস হয় না। মেয়েকে এই দু বিষয়ে প্রাইভেটও পড়াতে পারে নি। যার জন্য তার পরীক্ষা খারাপ হয়েছে। নিয়মিত ক্লাস হলে পরীক্ষা খারাপ হত না। তাই প্রতিবাদে আমি এমন অনশন শুরু করেছিলাম।
তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক আমাকে লিখিত ভাবে আবেদন করার জন্য বলেছে। আবেদনের প্রেক্ষিতে তর্দন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে আমাকে আশ্বাস্ত করেছেন।
জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীর আমার কার্যালয়ের দরজার সামনে অনশন শুরু করেন। আমি খবর পাওয়া মাত্রই ছুটে এসে উনার অনশন ভাঙ্গিয়ে সব কথা শুনেছি। আমরা এই বিষয়ে খোঁজ খবর নিব এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
সুনামগঞ্জ সরকারী কলেজে অধ্যাক্ষ মোহাম্মদ আব্দুস ছাত্তার বলেন, আমার কলেজে শিক্ষক সংকট রয়েছে। রসায়ন বিভাগে ক্লাল হয় না শিক্ষক সংকট থাকার কারণে কিন্তু ইংরেজি বিভাগে শিক্ষক আছে নিয়মিত ক্লাস ও হয়। ক্লাস হয় নি এই বিষয়ে আমাদের কাছে কখনো কেউ জানাই নি। আর শিক্ষকরা যদি ক্লাস না করে থাকে তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
বহুমাত্রিক.কম