Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৫ ১৪৩১, শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

জলবায়ু অন্যায্যতা: প্রতীকী প্রতিবাদে ধনী দেশগুলোর প্রতারণার চিত্র

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ০১:৫৭, ২৭ অক্টোবর ২০১৬

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

জলবায়ু অন্যায্যতা: প্রতীকী প্রতিবাদে ধনী দেশগুলোর প্রতারণার চিত্র

ছবি-সংগৃহীত

খুলনা : এক টেবিলে বসে আছেন পৃথিবীর সর্বোচ্চ শক্তিশালী আটটি দেশের প্রতিনিধিবৃন্দ। তাদের পা পর্যন্ত ডুবে গেছে সমুদ্রস্ফীতির পানিতে। তারপরও তাঁরা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার দায় নিতে রাজি নন। পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন ব্রিকস্ভূক্ত চারটি দেশের প্রতিনিধিগণ। তাাঁদের দু’জন হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছেন ধনী দেশের নেতাদের।

অন্য দু’জন দেশের রাষ্ট্রনেতাগণ একটি প্ল্যাকার্ড ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁরা বলছেন, “জলবায়ু পরিবর্তন ঘটছে এটা সত্য। তাতে আমাদের কী?” সামনের তোরণে জি-৮ সম্মেলনের পাশাপাশি বিশ্বব্যাংকের সৌজন্যে দেয়া হচ্ছে জলবায়ু ঋণের বিজ্ঞাপন। দুইপাশে শতাধিক তরুণ ব্যানার প্ল্যাকার্ডে উন্নত বিশ্বের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।

আসন্ন জাতিসঙ্ঘ জলবায়ু সম্মেলনে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার দাবিতে মঙ্গলবার খুলনার রূপসা নদীর চরে প্রতীকী জি-৮ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে এ বিষয়ে শিল্পোন্নত ও অগ্রসর উন্নয়নশীল দেশগুলোর নীরবতার প্রতিবাদ করলো তিনটি পরিবেশবাদী সংগঠন।

উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন), ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)-এর উদ্যোগে এ প্রতীকী প্রতিবাদ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, প্যারিস চুক্তি অনুসারে শিল্পোন্নত ও অগ্রসর উন্নয়নশীল দেশগুলো যে ঐচ্ছিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তাতে পৃথিবীর অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। এই দেশগুলো ঐচ্ছিকভাবে কার্বন নির্গমন কমাবে অথচ সম্মিলিতভাবে তারা পৃথিবীর ৭৭% নির্গমনের জন্য দায়ী।

অপরদিকে, শিল্পোন্নত দেশগুলো সবুজ জলবায়ু তহবিল (জিসিএফ)-এ প্রতিবছর ১০ হাজার কোটি ডলার দেয়ার কথা থাকলেও ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬ বছরে মাত্র ১ হাজার কোটি ডলার দিয়েছে। কিন্তু এই টাকার সঙ্গে বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্ত হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে জিসিএফ থেকে বরাদ্দ দেয়া ১০০ কোটি ডলারের শতকরা ৯০ ভাগ টাকাই আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক পেয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ জনগণ ও দেশগুলোর সরাসরি তহবিল পাবার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। বিশ্বব্যাংক ও এডিবিসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন জলবায়ু খাতে ঋণ দেয়ার জন্য জাতিসঙ্ঘকে ব্যবহার করছে। এভাবে তারা জলবায়ু-দুর্গতদের দুর্ভোগ ব্যবহার করে ঋণবাণিজ্য গড়ে তুলছে।

অপরদিকে বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশগুলোর কোটি কোটি মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে যাবার আশঙ্কার মধ্যে থাকলেও উন্নত বিশ্ব এ বিষয়ে ক্ষমাহীন নীরবতা প্রদর্শন করে যাচ্ছে।

বক্তারা মরোক্কোর মারাকেশ শহরে অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন জলবায়ু সম্মেলনে শিল্পোন্নত ও অগ্রসর উন্নয়নশীল দেশগুলোর নির্গমন কমানোর লক্ষ্যমাত্রা যথেষ্ট মাত্রায় বৃদ্ধি করা; নির্গমন কমানোর পরিমাণ যাচাই করার জন্য পরিবীক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা; প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য অর্থায়ন নিশ্চিত করা; জলবায়ু পরিবর্তন খাতে ঋণদান বন্ধ করা; সবুজ জলবায়ু তহবিলে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর সরাসরি প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা; আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে জলবায়ু তহবিল ব্যবস্থাপনা, বরাদ্দ ও ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা; জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা নিশ্চিত করা; জলবায়ু-বাস্তুচ্যুতদের উন্নত দেশে স্বাধীন ও মর্যাদাপূর্ণ অভিবাসনের অধিকার দেয়া; জলবায়ু-দুর্যোগের তাৎক্ষণিক ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক তহবিল গঠন করা; জলবায়ু বাস্তুচ্যুতদের জন্য জাতিসঙ্ঘের অধীনে বিশেষ সংস্থা গড়ে তোলা এবং জাতীয় জলবায়ু পরিবর্তন কর্তৃপক্ষ গড়ে তোলাসহ ১১ দফা দাবি তুলে ধরেন।

ক্লিন-টিআইবি-সনাক ওয়ার্কিং গ্রুপের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদার সভাপতিত্বে আয়োজিত প্রতীকী প্রতিবাদ সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ক্লিন-এর প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন টিআইবি’র এরিয়া ম্যানেজার ফিরোজ উদ্দীন, ইয়েস সদস্য সুস্মিত সরকার, এসএম মামুনুর রশীদ, ক্লিন-এর নাসিম রহমান কিরন, সূবর্ণা ইসলাম দিশা প্রমূখ।

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer