ঢাকা : প্রকৃতিপ্রেমী মুকিত মজুমদার বাবু। শৈশব কৈশোরের দুরন্ত সময় কেটেছে সোঁদামাটির গন্ধ আর প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্যে। পরিবেশ ও প্রকৃতির সঙ্গে তাই তাঁর গড়ে ওঠে নিবিড় সখ্য। হৃদয় দিয়ে অনুভব করেন পরিবেশ ও প্রকৃতির আনন্দ-উচ্ছ্বাস, দুঃখ-বেদনা।
মঙ্গলবার ছিল প্রকৃতির অকৃত্রিম এই বন্ধুর জন্মদিন। এদিন স্বজন-শুভার্থী ও সহকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন তিনি।
মুকিত মজুমদার বাবু অন্তর দিয়ে অনুধাবন করেন পরিবেশ ও প্রকৃতির ভাষা। তাইতো বিষন্ন পরিবেশ ও প্রকৃতিকে প্রসন্ন করতে তাঁর নিরন্তর পথচলা। এ পথ চলায় তিনি উপলব্ধি করেছেন বাংলার পরিবেশ ও প্রকৃতি আজ অনেকটাই বিবর্ণ। তাই পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণে ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন’।
তাঁরই পরিকল্পনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনায় চ্যানেল আইতে নিয়মিত প্রচারিত হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম পরিবেশ ও প্রকৃতির নতুন মাত্রার গবেষণাধর্মী, তথ্যবহুল ও শিক্ষামূলক প্রামাণ্য অনুষ্ঠান ‘প্রকৃতি ও জীবন’। ইতোমধ্যেই দর্শকনন্দিত অনুষ্ঠানটি ২২৯টি পর্ব প্রচার হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে মুকিত মজুমদার বাবু শুধু প্রামাণ্য অনুষ্ঠানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি।
তিনি পরিবেশ ও প্রকৃতির সমসাময়িক বৈচিত্র্যময় বিষয় নিয়ে প্রকাশিত ত্রৈমাসিক ‘প্রকৃতিবার্তা’র সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি। সম্পাদনা করছেন বহুলপ্রচারিত দৈনিক যুগান্তরে পরিবেশবিষয়ক পাক্ষিক পূর্ণাঙ্গ রঙিন পাতা ‘প্রকৃতি ও জীবন’। পাশাপাশি পরিবেশ ও প্রকৃতিবিষয়ক সুচিন্তিত মতামত, পরামর্শ ও অসঙ্গতি নিয়মিত তুলে ধরছেন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকগুলোতে।
তাঁর নির্বাচিত কিছু লেখা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে-‘আমার অনেক ঋণ আছে’, ‘আমার দেশ আমার প্রকৃতি’ গ্রন্থ। এছাড়া তাঁর সম্পাদিত ও লিখিত আরো কয়েকটি গ্রন্থ রয়েছ। সচেতনতা বৃদ্ধিতে ফাউন্ডেশন থেকে প্রতি বছর প্রকাশিত হচ্ছে ডিভিডি, লিফলেট ও ক্যালেন্ডার। অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রকৃতিমেলা। প্রকৃতি সংরক্ষণে বিশেষ অবদান রাখার জন্য প্রতি বছর ফাউন্ডেশন থেকে দেয়া হচ্ছে ‘প্রকৃতি সংরক্ষণ পদক’।
বন্য প্রাণী অবমুক্তকরণ, পাখিশুমারী, জাতীয় চিড়িয়াখানা ও উদ্ভিদ উদ্যানে গাছের পরিচিতি ফলক সংযুক্তিকরণ, পরিবেশ ও প্রকৃতিবিষয়ক বিভিন্ন গবেষণা কার্যক্রম এগিয়ে নেয়া এবং পরিবেশ সচেতনতাবিষয়ক স্কুল প্রোগ্রাম করাসহ বিভিন্ন গণসচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণের কাজ করে যাচ্ছেন।
ইমপ্রেস গ্রুপের অন্যতম পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা মুকিত মজুমদার বাবু পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিঁড়তে ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। দেশ স্বাধীন হলেও সে যুদ্ধ তাঁর আজো চলমান। এ যুদ্ধ সবুজে সবুজে দেশটিকে ভরিয়ে দিতে, পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ করতে।
পরিবেশবিষয়ক বহুমাত্রিক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ‘জাতীয় পরিবেশ পদক-২০১৫’, ‘ঢাকা আহছানিয়া মিশন চাঁদ সুলতানা পুরস্কার- ২০১৫’, ‘বিজনেস এক্সিলেন্সি এ্যাওয়ার্ড সিঙ্গাপুর-২০১৪’, ‘বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন-২০১৩’, ‘এইচএসবিসি-দি ডেইলি স্টার ক্লাইমেট অ্যাওয়ার্ড-২০১২’ সহ বিভিন্ন সম্মাননা অর্জন করেছেন মুকিত মজুমদার বাবু ও তাঁরই প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন।
স্ত্রী রন্ধনশিল্পী কেকা ফেরদৌসি, মেয়ে সোনালি, জামাতা তারিফ, ছেলে আকাশ ও আদরের নাতি কায়সানকে নিয়ে এই প্রকৃতিপুত্রের সুখের সংসার। প্রকৃতি অন্তঃপ্রাণ এই মানুষটি আজকের দিনে জন্মগ্রহণ করেন।