Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৩ ১৪৩০, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

চুকনগর গণহত্যা দিবসে ১০ হাজার মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের কর্মসূচি

শেখ হেদায়েতুল্লাহ, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১:০৫, ২০ মে ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

চুকনগর গণহত্যা দিবসে ১০ হাজার মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের কর্মসূচি

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

খুলনা : ২০ মে চুকনগর গণহত্যা দিবস। ১৯৭১’র এইদিনে খুলনার চুকনগরে ঘটে নারকীয় হত্যাকান্ড। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও চুকনগর গণহত্যা স্মৃতিরক্ষা পরিষদ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তবে এবার রাজধানীর কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারে ২০ মে গণহত্যা স্মৃতিস্তম্ভে ১০ হাজার মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হবে।

এছাড়া চুকনগর গণহত্যা স্মৃতি রক্ষা পরিষদের আয়োজনে বধ্যভূমি স্থলে থাকছে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা ও স্মরণসভা , মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন।

খুলনা জেলার তৎকালিন ডুমুরিয়া থানাধীন এই চুকনগরেই পরদিন ২০ মে ঘটেছিল সম্ভবতঃ পৃথিবীর ইতিহাসে একক বৃহত্তম নর হত্যাযজ্ঞ। চুকনগর ছিল প্রকৃতপক্ষে পলায়নপর মানুষের ট্রানজিট। খুলনা-যশোর-সাতক্ষীরা জেলার সীমান্তবর্তী ভদ্রা নদীর কোলঘেঁষা চুকনগরেই হাজার হাজার পরিবার মে মাসের ১৯ তারিখে রাত কাটায়। পরদিন (২০ মে) সকালে ঘটে নারকীয় এই হত্যাযজ্ঞ।

ওইদিন তাদের দলবদ্ধভাবে ভারতে আশ্রয় নেযার জন্য রওয়ানা হওয়ার কথা ছিল। বেলা সাড়ে দশটা নাগাদ শুরু হওয়া এই বর্বরতম হত্যাকান্ডটি ঘটে প্রায় সন্ধ্যা অবধি। গুলি-বেয়নেটের আঘাত ও নদীপথে নৌকাযোগে পলায়নরত নর-নারী-শিশুর সলিল সমাধিতে কতো মানুষের যে মৃত্যু হয়েছে তার সঠিক হিসাব কেউ বলতে পারে না।

একাত্তরের ২০ মে চুকনগরের গণহত্যাযজ্ঞ থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষেরা আজও সেই যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছেন। স্বজন হারানোর ব্যথা তাঁদের বুকেই চেপে আছে। এই দিনটি এলে তাঁরা স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন। ঘৃণায় বুক বেঁকে ওঠে। পাকি হায়েনাদের গালি দেন।

জানা যায়, বটিয়াঘাটা, দাকোপ, বাগেরহাট, পিরোজপুর, মংলা, মোড়েলগঞ্জ প্রভৃতি এলাকা থেকে প্রাণভয়ে পালানো ভীতসন্ত্রস্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা বেশীরভাগ নদীপথে নৌকাযোগে, কেউ সড়ক পথে ছুটছিল ভারতের দিকে। একারণে এখানকার হত্যাযজ্ঞে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরাই শহীদি মৃত্যুর শিকার হন। সেদিনের চুকনগর আর আজকের চুকনগর থেকে অনেক পার্থক্য। তখন তিনদিকে ছিল নদী। নদীপথেই আসা মানুষেরা এখানকার পাতাখোলা বিলসহ গোটা এলাকায় বিশ্রাম নেয়। নদীর পাশে ছিল মন্দির। তার পাশে ছিল বিশাল বটগাছ। পাশে বাজার। গোটা এলাকা জুড়েই ছিল মানুষ।

পাক সেনাদের ওপর তেড়ে যাওয়া চুকনগরের চিকন মোড়লকে হত্যা করে এখানকার হত্যাযজ্ঞ শুরু। শহীদের ছেলে এরশাদ আলী মোড়ল আজও সেইদিনের কথা মনে হলে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তিনি বলেন, ওরা (পাকি সেনারা) মানুষ না, মানুষ কোনদিন মানুষরি এইভাবে মারতি পারে! জানের (প্রাণের) মায়ায় যারা পালায় যাচ্ছিল, সেই সব মানুষরি ওরা পাখির মত গুলি কইরে মারলো। গাছে চইড়ে (উঠে) , পানিতি নাইমে মানুষ বাঁচতি পারিনি।’ আজ দীর্ঘ বছর পর হলেও সেই অত্যাচারী, হত্যাকারী, ধর্ষণকারীদের বিচার হচ্ছে। শাস্তি হচ্ছে তাই মৃত্যুর আগে মনে শান্তি ফিরে পাচ্ছি।
সেই সময়ের কিশোর প্রত্যক্ষদর্শী, চুকনগর গণহত্যা ৭১ স্মৃতি রক্ষা পরিষদের সভাপতি চুকনগর কলেজের অধ্যক্ষ এবিএম শফিকুল ইসলাম বলেরন, এই সংখ্যা কোনক্রমে দশ হাজারের কম নয়, বরং বেশী বলে মনে করেন। সেই হত্যাকান্ডের লাশ ফেলেছিলেন চারজন। এরা হলেন কাওসার আলী, দলিল উদ্দীন, আনসার সরদার ও ইনছান সরদার।

তিনি বলেন, এলাকার ওহাব মোল¬া তাদেরকে লাশগুলো ভদ্রা নদীতে ফেলার কথা বলে। পাকিরা আদেশ জারি করেছিল, সব লাশ নদীতে ফেলে গ্রাম সাফ-সুতরো করতে হবে। বাঁশের মাঝে লাশ রেখে দুইজন টেনে আবার লাশের পা ধরে টেনে-হিচড়ে নদীতে ফেলা হয়। লাশের সংখ্যা দশ-বারো হাজারের কম হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের একজন বিয়াল্লিশ শ’ পর্যন্ত লাশ গুনেছিল। আর গুণতে পারেনি। লাশের গন্ধে নদীর পানিতে দুর্গন্ধ হয়। অনেক লাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল আশে-পাশের বিলে। চুকনগর কলেজ প্রতিষ্ঠার সময়ও সেখানে হাড়গোড় পাওয়া গেছে চুকনগর গণহত্যাস্থলে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হলেরও এখনও পূর্ণাঙ্গতা পায়নি এ জন্য তিনি ক্ষুব্ধতা প্রকাশ করেন।

অধ্যক্ষ এবিএম শফিকুল ইসলাম জানান, দিবসটি উপলক্ষ্যে এবার রাজধানীর কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারে ১০ হাজার মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হবে। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ড . সারোয়ার আলী ও সাবেক সচিব মিহির কান্তি মজুমদার। এছাড়া চুকনগর বদ্ধভুমি স্থলের স্মৃুিতস্মম্ভে সকালে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পন, আলোচনা ও স্মরণ সভা, সন্ধ্যায মোমবাতি প্রজ্জ্বলন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

 

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer