Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৪ ১৪৩০, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রায় থাকবে বিগত বছরের উল্লেখযোগ্য মোটিফ

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:১৮, ৮ এপ্রিল ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রায় থাকবে বিগত বছরের উল্লেখযোগ্য মোটিফ

ঢাকা : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নিতে এবার বিশাল পরিসরে মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছে।

ইউনেস্কো বর্ষবরণের এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দেয়ায় চারুকলা অনুষদ বিগত ২৮ বছরের উল্লেখযোগ্য মোটিফগুলো এবারের শোভাযাত্রায় রাখার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

শনিবার দুপুরে অনুষদের ডিন অধ্যাপক নেসার হোসেন বলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রা বিশ্ব স্বীকৃতি পাওয়ায় শিল্প-সাহিত্যাঙ্গণের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ চাচ্ছেন অন্যান্যবারের চেয়ে এবার আলাদা কিছু হোক।

সবার চাওয়া এবং এ শোভাযাত্রার প্রতি দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্খা ও ভালবাসাকে গুরুত্ব দিয়ে এবার বড় পরিসরে মঙ্গল শোভাযাত্রা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, স্বীকৃতির কারণেই কবি গুরুর গানের একটি লাইনকে এবারের শোভাযাত্রার থিম হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে। সেটি হলো ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর...’।

ডিন বলেন, এ থিম দিয়ে দেশের অর্জন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পাশাপাশি মঙ্গল শোভাযাত্রার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি সবই বোঝানো হয়েছে। থিমটি নির্বাচন করেছেন আমাদের বিশ্ববিদ্যলয়েরই শিক্ষক ড. আজিজুল হক।

তিনি বলেন, বরাবরের মতো এবারও শোভাযাত্রায় লোকজ ঐতিহ্যই তুলে ধরা হবে। তবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতির কারণে বিগত ২৮ বছরের উল্লেখযোগ্য কিছু মোটিফ এবারের শোভাযাত্রায় থাকবে।

নেসার হোসেন বলেন, ১৯৮৯ সালে প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রায় সামরিক শাসনামলের প্রতিরূপ হিসেবে একটি কালো হাতি ব্যবহার করা হয়েছিল, এবার সেটি থাকবে শোভাযাত্রার আরম্ভকালের প্রতীক হিসেবে। তেমনি, বাংলাদেশ সরকারের সমুদ্র অঞ্চল বিজয় স্মরণে শোভাযাত্রায় স্থান পাওয়া ময়ূরপঙ্খী নাওয়ের প্রতিরূপ হিসেবে থাকবে জলযান, যুদ্ধাপরাধী ছাড়াও ঘাতকরূপী জঙ্গীর থাবা হিসেবে বিগত শোভাযাত্রায় স্থান পাওয়া কালো হাতের প্রতিরূপ হিসেবে একটি নেগেটিভ মোটিফও থাকবে।

তিনি আরো বলেন, শোভাযাত্রার এবারের থিম ও দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে তৈরি করা হচ্ছে মূল মোটিফ সূর্য। সূর্যের যেমন একদিক আলো এবং অন্যদিক অন্ধকার থাকে।

তেমনি আমাদের মোটিফেরও একদিকে থাকবে হাস্যোজ্জ্বল মুখ, অন্যদিকে থাকবে কুৎসিত কদাকার একটি রূপ।

নেসার বলেন, হাস্যোজ্জ্বল মুখ দিয়ে বোঝানো হচ্ছে দেশের অর্জন, সমৃদ্ধি ও মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হওয়ার পথে এগিয়ে যাওয়া। আর কদাকার মুখ দিয়ে বোঝানো হচ্ছে জঙ্গিবাদের আষ্ফালন। তবে অন্ধকার তাড়িয়ে যেন আলোয় ভরে ওঠে দেশ, সেটিও মিন করা হবে এ মোটিফ দিয়ে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা প্রাঙ্গণ ঘুর আজ দেখা যায় বর্ষবরণের নানামুখী তৎপরতা। বাঙালির প্রাণের উৎসবকে বরণ করতে তৈরি হচ্ছে মঙ্গল শোভাযাত্রার নানা মোটিফ, তৈরি হচ্ছে রং-বেরঙের মুখোশ। তাতে লাগছে শিল্পীর রং-তুলির আঁচড়। বিপুল উৎসাহ নিয়ে শোভাযাত্রার কাজ করছেন চারুকলার ১৮তম ও ১৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। জয়নুল গ্যালারির সামনে, অনুষদের খোলা প্রান্তরে সর্বত্রই তারা তৈরি করছেন বৃহৎ আকারের নানা মুখোশ, মোটিফ ইত্যাদি।

এ প্রসঙ্গে ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আরিফ মাহমুদ হিমেল বলেন, অন্ধকারের বিরুদ্ধে এবার থাকছে নানা শৈল্পিক প্রতিবাদ। শোভাযাত্রায় সূর্যের মুখের কাঠামো ছাড়াও থাকবে হাতি, ঘোড়া, শখের হাড়ি, টেপা পুতুল ইত্যাদি।

তিনি বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও মঙ্গল শোভাযাত্রার খরচ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা নিজেদের শিল্পকর্ম বিক্রি করে সংগ্রহ করছেন। আর সে পর্বের সূচনা হয়েছে অধ্যাপক রফিকুন নবী’র ছবি দিয়ে।

এছাড়া অধ্যাপক সৈয়দ আবুল বারক্্ আলভী, শিশির ভট্টাচার্যসহ অনেক বড়মাপের শিল্পীরা তাদের ছবি দিয়েছেন বিক্রির জন্য। এছাড়া শিক্ষার্থীরা সরাচিত্র এঁকে ও বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করছেন।

একদিকে শিল্পকর্ম যেমন বিক্রি হচ্ছে, অন্যদিকে তেমনি বিক্রিলব্ধ অর্থ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে মঙ্গল শোভাযাত্রার নানা অনুষঙ্গ।

বিশ্ব ঐতিহ্যে পরিণত হওয়া চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রাটি প্রথম যাত্রা শুরু করে ১৯৮৯ সালে। প্রথম বছরেই এ শোভাযাত্রা সকলের নজর কেড়ে নেয়। এরপর থেকে এটা বাংলা বর্ষবরণের অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে ওঠে। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer