Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১১ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪

চামড়ার দাম কমলে কওমী মাদ্রাসার আয় কমে যাবে

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:১৫, ২০ আগস্ট ২০১৮

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

চামড়ার দাম কমলে কওমী মাদ্রাসার আয় কমে যাবে

ঢাকা : পশুর চামড়ার সরকার নির্ধারিত মূল্য কমানোর সিদ্ধান্তের ফলে কওমী মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে অভিযোগ করেছে কওমী মাদ্রাসাগুলোর সংগঠন কওমী ফোরাম।

কওমী ফোরামের সমন্বয়ক মুফতি সাখাওয়াত হুসাইন আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে চামড়ার দাম কমার কারণে অনেক কওমী মাদ্রাসার আয় কমে যাবে, যার ফলে সেসব মাদ্রাসায় পড়ালেখা করা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে।

সাখাওয়াত হুসাইন বলেন, "সাধারণ মানুষের দানের পাশাপাশি যাকাত, ফিতরা ও কোরবানির সময় দান করা চামড়া বিক্রির আয়ে ওপরই নির্ভরশীল অধিকাংশ মাদ্রাসার পরিচালনা ব্যয়।"

প্রতি বছর কুরবানির পর বাড়ি বাড়ি গিয়ে তারা এই চামড়া সংগ্রহ করেন। অথবা অনেকে নিজ দায়িত্বে তা মাদ্রাসায় দিয়ে আসেন।

চামড়ার দাম বৃদ্ধির ফলে সেসব মাদ্রাসার কার্যক্রম চালানো কঠিন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন মি. হুসাইন।মি. হুসাইন বলেন, "কিছু মাদ্রাসা আছে যারা দানের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। তাদের ক্ষতি হবে সবচেয়ে বেশী।"

২০১৪ সাল থেকে প্রতি বছরই বাংলাদেশে চামড়ার সরকার নির্ধারিত মূল্য কমানো হয়েছে।

মি. হুসাইন জানান চামড়ার দাম প্রতিবছর কমতে থাকায় এরই মধ্যে বহু ক্ষুদ্র মাদ্রাসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কওমী ফোরামের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ২০১৩ সালে সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণ যুক্ত গরুর চামড়া ৯০ টাকা পর্যন্ত দরে কেনা হয়।

ঢাকার বাইরে তা ছিল ৮০ টাকা পর্যন্ত। তা প্রতি বছর কমানো হচ্ছে।

এবছর তা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি বর্গফুটে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা।

প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী গত বছর কুরবানি উপলক্ষে সারা দেশে এক কোটি পাঁচ লাখের মতো গবাদি পশু বিক্রি হয়েছে।

কওমী ফোরাম আরো বলছে যে সরকার কর্তৃক ঘোষিত মূল্যের চেয়ে বাংলাদেশের বাজারে সবসময় বেশি দামে বিক্রি হয়।

কিন্তু কয়েক বছর সরকার ঘোষিত মূল্যে তা বিক্রি করা যাচ্ছে না। তাদের দাবি এর কারণ হল চামড়া ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট।

অন্যদিকে চামড়া পাচার হচ্ছে বলেও তারা দাবি করছেন।

চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের ব্যবসায়ীরা কী বলছেন?
তবে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন পশুর চামড়ার দাম কমানোর মূল উদ্দেশ্য আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়াজাত পণ্যের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা নিশ্চিত করা।

আহমেদ বলেন, "আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়া শিল্প পড়তির দিকে। তাই স্থানীয় বাজারে যদি বেশী দামে আমরা চামড়া কিনি তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়াজাত পণ্যের দাম বেশী হবে এবং বিক্রি কমে যাবে।"

চামড়া-জাত পণ্যের রপ্তানি দিনদিন কমে যাওয়ায় পশুর চামড়ার দাম কমানোর সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্য শিল্পের উন্নয়নের কথা মাথায় রেখেই নেয়া হয়েছে বলে মনে করেন মি. আহমেদ।

একই ধারণা পোষণ করেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তাসলিমা মিজি, যিনি চামড়াজাত পণ্য তৈরি করে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহ করে থাকেন।

তাসলিমা. মিজি বলেন, "আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দাম পড়তির দিকে, কাজেই চামড়ার দাম কমানোর সরকারি সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী।"

তবে পশুর চামড়ার দাম কমানোর এই সিদ্ধান্তের সুফল পেতে সীমান্ত দিয়ে চামড়া চোরাচালান বন্ধে সরকারের বিশেষ উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন মিজি।

মিজি বলেন, "ভারতে সম্প্রতি গরু জবাই করার বিষয়ে নানা ধরণের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়ায় চোরাচালান করা চামড়ার চাহিদা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এই চামড়ার সিংহভাগই পাচার হয় বাংলাদেশ থেকে।"

তালসিমা মিজি মনে করেন সরকারিভাবে চামড়ার দাম কমানোর ফলে চামড়া চোরাচালানকারীরা বেশী দামে ভারতে চামড়া পাচার করতে আগ্রহী হবে।

বিবিসি বাংলা 

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer