ছবি : বহুমাত্রিক.কম
খুলনা : ‘না পাইলাম বকেয়া টাকা, না পাইলাম কাজ- জানিনা কি হবে’ ‘আজ না কাল, এই মাস না আগামী মাস এভাবে আট বছর পার হয়ে গেল। এখনও আশায় আছি ফ্যাক্টরি চালু হবে। আবার কাজ পাব’-এভাবেই নিজের ভাগ্যেও দুর্বিপাকের কথা বলছিলেন খুলনার দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরির ওর্য়াকার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এইচ এম শাহাদাত।
তিনি বলেন, ‘ফ্যাক্টরি চালু, বকেয়া বেতন ভাতা ও কাজ ফিরে পাওয়ার আশায় থেকে চাকরি থেকে অবসর নেয়ার বয়সই চলে গেছে।
তিনি বলেন, ‘অনেক ধার-দেনা করেছি। মুদি দোকানদার টাকা পাবে বলে এখন আর বাকিতে পণ্য দেয়না। এখন মালিক পক্ষও টাকা দিতে চায় না। মালিক পক্ষ বলছেন মিলতো সরকার নিয়ে নিযেছে তাহলে আমরা কেন টাকা দেব। মিল চালু হলে কোনভাবে বাঁচতে পারতাম।” ফ্যাক্টরিটি কবে চালু হবে, না-কি আদৌ চালু হবে না এ নিয়ে জনমনে সংশয় দানা বেঁধে উঠছে।
দাদা ম্যাচ ওয়ার্কস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এইচ এম শাহাদাত আরও বলেন বলেন, গত আট বছরে মিলের শ্রমিক কর্মচারীরা সর্বশান্ত হয়ে গেছে। পরিবার পরিজন নিয়ে অমানবিক জীবন কাটাতে হচ্ছে।’ ইতোমধ্যে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন
ওযার্কার্স ইউনিযনের সভাপতি দিলখোশ মিয়াসহ শতাধিক শ্রমিক। এখন আর মিল চালুর আশা করি না। মিলের কাছে বকেয়া পাওনা রয়েছে সাড়ে চার লাখ টাকার মত। টাকাটা পেলে কোন রকমে দেনা শোধ হতে পারতাম। তিনি জানান, মিলটি যখন বন্ধ কওে দেয়া হয় তখন সাড়ে ৭শত স্থায়ী শ্রমিকের বেতন পাওনা ছিল প্রায় ৬ কোটি টাকা।
দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরির শ্রমিক মনির হোসেন জানান, কাজ নেই আট বছর। ধার দেনা করে সংসার চলছিল। এখন আর কেউ ধার দিতে চায় না। মালিক পক্ষ এখন টাকা দিতে চায় না। একই কথা ভরলেন শাহাজান জাহাঙ্গীর, আব্দুর রহমান, আহসান হাবিবসহ অনেকেই।
খুলনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ খুলনা জেলা শাখার সভাপতি শেখ হারুনুর রশিদ বলেন বর্তমান সরকারের দাদাম্যাচ ফ্যাক্টরিটি চালুর ব্যাপারে যথেষ্ট আন্তরিকতা রয়েছে। কিভাবে দ্রুত মিলটি চালু করা যায় এজন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।শিল্পমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এটি পরিদর্শন করেছেন। তিনি বরেন জাতীয় শোকদিবসের কর্মসূচি শেষ হলে মন্ত্রণালয়ে গিয়ে শিল্পমন্ত্রীর সাথে এ বিষয়ে কথা বলব।
খুলনা জেলা প্রশাসক মোঃ আমিনুল আহসান বলেন বন্ধ হয়ে যাওয়া দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরিটি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, মিলটি চালুর বিষয়ে সরকার আন্তরিক। মিলের সম্পদ রক্ষা করার জন্য সেখানে পুলিশ ও আনসার মোতায়েন রয়েছে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব বিরা ও বেখা ( বিরাষ্ট্রীয়করণ ও বেসরকারী খাত) মোঃ অলিউল্লাহ জানান, খুলনার বন্ধ হয়ে যাওয়া দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরিটি চালুর বিষয়ে কাজ চলছে। বর্তমানে ফাইলটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালযের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে রয়েছে।
খুলনা মহানগরীর রূপসা শিল্পাঞ্চলে রূপসা নদীর তীরে ১৯৫৬ সালে ১৮ একর জমির উপর দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি যাত্রা করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণ করা হয় এবং বিসিআইসি’র নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়। ১৯৮৪ সালে এরশাদ সরকার একটি সুইডিশ কোম্পানির কাছে লাভজনক এ শিল্প প্রতিষ্ঠানের ৭০ শতাংশ শেয়ার হস্তান্তর করে।
১৯৯২ সালে সুইডিশ কোম্পানি দাদা ম্যাচ ওয়ার্কস চালাতে অপারগতা প্রকাশ করায় দেশীয় প্রতিষ্ঠান ভাইয়া গ্রুপ এ প্রতিষ্ঠানটির ৭০ শতাংশের মালিক হয়। পরবর্তীতে ভাইয়া গ্রুপ সরকার বা শ্রমিকদের সাথে কোন ধরণের আলোচনা না করে ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। ১৮ আগস্ট ফ্যাক্টরিটি বন্ধ করে দিয়ে বকেয়া পাওনা পরিশোধ না করে প্রায় সাড়ে সাতশ’ শ্রমিক-কর্মচারীকে টারমিনেশন করা হয়।
এরপর থেকে শ্রমিক-কর্মচারীরা মিলটি বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) নিয়ন্ত্রণে নিয়ে চালু করার এবং শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধের দাবি জানিয়ে আসছেন। ২০১১ সালের ৩ মার্চ খুলনার খালিশপুওে এক জনসভায় দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি চালু করার বিষয়ে ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই ঘোষণার সাত বছর কেটে গেছে।
বহুমাত্রিক.কম