Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৬ ১৪৩১, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪

চা বাগানে ক্ষেতল্যান্ড শ্রমিকরা রেশন সুবিধা বঞ্চিত

নূরুল মোহাইমীন মিল্টন, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:১২, ২১ অক্টোবর ২০১৭

আপডেট: ১৮:১৩, ২১ অক্টোবর ২০১৭

প্রিন্ট:

চা বাগানে ক্ষেতল্যান্ড শ্রমিকরা রেশন সুবিধা বঞ্চিত

ছবি : বহুমাত্রিক.কম

মৌলভীবাজার : দুটি পাতা একটি কুঁড়ির কারিগর চা শিল্পের ক্ষেতল্যান্ড (জমি চাষাবাদকৃত) শ্রমিকরা রেশন সুবিধা বঞ্চিত রয়েছেন। কোম্পানি চা বাগানে যেসব শ্রমিকদের কৃষিজমি বরাদ্ধ দিয়েছে তাদের বছরে ১৬৮ কেজি পরিমাণ রেশন কর্তন করছে। ফলে রেশন সুবিধা বঞ্চিত শ্রমিক পরিবার সদস্যরা অভাব অনটনে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলে অভিযোগ করেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, চা বাগানের শ্রমিকরা দৈনিক সর্ব্বোচ্চ মজুরি পান ৮৫ টাকা। এই ৮৫ টাকা মজুরির সাথে সপ্তাহে রেশন হিসাবে শুধুমাত্র আটা বা চাল পান প্রায় ৩ কেজি ৩শ’ গ্রাম। তবে বাগান কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যেসব শ্রমিক কৃষি জমি নিয়ে চাষাবাদ করছেন তাদের এই রেশন কর্তন করা হচ্ছে। মালিক পক্ষের সাথে চা শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদিত চুক্তি মোতাবেক এই রেশন কর্তন করা হয়। তবে শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ চুক্তিনামা থেকে রেশন কর্তনের বিষয়টি বাদ দেওয়ার দাবি করছেন।

চা বাগানে কোম্পানির কাছ থেকে চাষাবাদকৃত কৃষিজমি বরাদ্ধ পাওয়া শ্রমিকরা ফসল চাষাবাদের জন্য ৪৫ শতক বা দেড় কিয়ার পরিমাণ জমির ভূমি করের বিপরীতে বছরে ১৬৮ কেজি রেশন কর্তন হচ্ছে। আর কোম্পানি বর্তমানে এক কিয়ার জমির বিপরীতে ভূমি অফিসে কর প্রদান করছে ৯০ টাকা এবং একরে ৩শ’ টাকা। ফলে একজন শ্রমিকের দেড় কিয়ার জমির বিপরীতে বর্তমান বাজারে আটার নুন্যতম কেজি ১৫ টাকা ধরে বছরে ২৫২০ টাকার রেশন কোম্পানি কেটে নিচ্ছে বলে শ্রমিকরা অভিযোগ তোলেন।

আলীনগর বাগানের কালাচান নায়েক, রাজদেও কৈরী, দেওছড়া চা বাগানের দেওরাজ রবিদাস, সুনছড়া চা বাগানের দিবা শুক্ল বৈদ্য সহ বিভিন্ন বাগানের শ্রমিকরা বলেন, দৈনিক ৮৫ টাকা মজুরি দিয়ে পাঁচ, সাত সদস্যের পরিবারের সংসার চালিয়ে যাওয়া কঠিন। বাগানের পরিত্যক্ত জমি চাষাবাদ করেও সর্ব্বোচ্ছ দুই থেকে তিন মাসের খাবার যোগানোও যায়। তাছাড়া চা বাগানে লেক ও ছায়া ঘেরা জমিতে ভালো মনের ফলনও হয় না। এ অবস্থায় চুক্তিনামার দোহাই দিয়ে রেশন কর্তনের সে বিষয়টি চুক্তিনামা থেকে বাদ দেওয়া উচিত।

কমলগঞ্জ ইউনিয়ন ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, চা বাগানের জন্য ভূমি কর ১৪১৮ সনে ৫ টাকা এবং এর পূর্বে ছিল এক টাকা দশ পয়সা। ১৪২২ সন থেকে চা বাগানের আওতাধীন জমি শতক প্রতি ৩ টাকা করে খাজনা নির্ধারণ করছে সরকার এবং এই হারে চা বাগান কর্তৃপক্ষ খাজনা প্রদান করছে।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী বলেন, চা বাগানের জমি ভোগচাষ করলে এভাবে রেশন কর্তন করার নিয়ম দীর্ঘদিনের। তবে আমরা এর পক্ষে নই। চুক্তির বদৌলতে মালিক পক্ষ রেশন কর্তন করে নিচ্ছে। ধান ক্ষেতের বিপরীতে রেশন কর্তন বন্ধ করার দাবি চুক্তিপত্রে আমরা বলেছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যবস্থাপক বলেন, চুক্তি মোতাবেক চা শ্রমিকদের রেশন কাটা হচ্ছে। চুক্তির বাইরে কোন রেশন কাটা হয় না। ন্যাশনাল টি কোম্পানি (এনটিসি) এর ডিজিএম মো. শাহজাহান রেশন কর্তনের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, শুধুমাত্র খাজনার বিপরীতে রেশন কাটা হচ্ছে না। কৃষি চাষাবাদের জন্য বরাদ্ধকৃত শ্রমিকরা ওয়ার্কার হিসাবে এই রেশন কাটা হয়। তবে শ্রমিকরা কৃষিজমি চাষাবাদ করে অনেক লাভবান হচ্ছেন এবং বর্তমানে শ্রমিকরা কৃষিজমি ছাড়তেও রাজি হচ্ছেন না। একর প্রতি ৫শ’ টাকা ও ভ্যাটযুক্ত করে খাজনা দিতে হয় বলে তিনি জানান।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer