ছবি: বহুমাত্রিক.কম
মৌলভীবাজার : চা গাছের রোগব্যাধি নিবারণ, পোকামাকড় দমন, উৎপাদন বৃদ্ধি ও ঘাস মারার জন্য ক্ষতিকর কীটনাশক ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হচ্ছে। কীটনাশক ব্যবহারের দু’এক দিনের মধ্যেই কচি পাতা উত্তোলন করে তৈরি হয় চা।
এরপর বাজারজাতকৃত এসব চায়ের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করছে মারাত্মক বিষক্রিয়া। এছাড়াও নদী কিংবা জলাভূমিতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার পতিত হয়ে জলজ জীববৈচিত্র্য মারা যাচ্ছে। হুমকির মুখে পড়েছে মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ডানকান ব্রাদার্স, ন্যাশনাল টি কোম্পানি (এনটিসি) ও ব্যক্তিমালিকানাধীন মৌলভীবাজার জেলায় ৯২টি এবং কমলগঞ্জ উপজেলায় ১৪টি চা বাগান আর ফাঁড়ি মিলিয়ে ২২টি চা বাগান রয়েছে। এসব চা বাগানে চায়ের টিলাভূমিতে চা গাছে রোগবালাই, পোকামাকড় দমন, উৎপাদন বৃদ্ধি ও ঘাস মারার জন্য নির্বিচারে বিষাক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হচ্ছে।
কীটনাশক প্রয়োগের সপ্তাহ, দশদিন পর্যন্ত এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকলেও দ্রুত কচি পাতা গজানোর কারনে অনেক ক্ষেত্রে দু’তিনদিনের মধ্যেই উত্তোলন করে সরাসরি ফ্যাক্টরিতে নিয়ে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে চা তৈরি হচ্ছে। পরবর্তীতে এগুলো বাজারজাত করা হয়। এই চা পান করার মাধ্যমে শরীরে মারাত্মক বিষক্রিয়া প্রবেশ করছে।
রেজিষ্টার, স্টলস্টার নামীয় বিভিন্ন ধরণের বিষাক্ত কীটনাশক চা বাগানে প্রয়োগ করা হয়। রাসায়নিক সার মিশ্রিত কীটনাশক ব্যবহারের পর ছড়া, নদী ও পানির মাধ্যমে ছড়িয়ে, ছিটিয়ে জলাভূমিতে গিয়ে পড়ছে। ফলে মাছ, ব্যঙ, সাপসহ জলজ জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কীটনাশক চা গাছকে রক্ষা করলেও ধ্বংস করছে পরিবেশ প্রতিবেশ। অন্যদিকে অব্যাহতহারে কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহারের ফলে দিনে দিনে ক্ষতিকর পোকামাকড় ও জীবানু কীটনাশক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে।
আদিবাসী নেতা ও মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির হেডম্যান জিডিসন সুচিয়ান বলেন, চা বাগানে বিষাক্ত কীটনাশক ব্যবহারের পর অধিকাংশ ক্ষেত্রে দু’তিন দিনের মধ্যে পাতি উত্তোলন করে প্রক্রিয়াজত করনের মাধ্যমে চা উৎপাদন হয়। ফলে এগুলোতে বিষক্রিয়া থেকে যাচ্ছে। ফলে আমি নিজেও চা পান করি না। এজন্য অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করেন।
কমলগঞ্জের এনটিসির মাধবপুর চা বাগান ব্যবস্থাপক বিদ্যুৎ কুমার রায় বলেন, চা বাগানের সারা বৎসর বিশেষত: চায়ের মশা, লাল মাকড়সা (রেডস্পাইডার) রোগের বেশি আক্রমন হয়ে থাকে বলে পরিমিতভাবে কীটনাশক ব্যবহৃত হয়। বিটিআরআই থেকে মাঝেমধ্যে কীটনাশকের এমআরএল এর ভ্যালু মূল্যায়ন করা হয়। ফলে এগুলো মানব স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি নয়।
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট এর উধ্বর্তন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (কীটতত্ত্ব) মোহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, উত্তোলিত ও প্যাকেটজাত চা বিভিন্ন সময়ে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা ও গবেষণা হয়েছে। এ্যানালাইসিস করে যতোদূর সম্ভব দেখেছি কিছু কিছু ক্ষেত্রে হালকা মানের কীটনাশকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তবে এগুলো মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়। তাছাড়া বাগান কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে কীটনাশক প্রয়োগের এক সপ্তাহ পর পাতি উত্তোলন করার জন্য।
তিনি আরও বলেন, কীটনাশক সরকার অনুমোদিত থাকায় চা বাগানে পোকামাকড় দমনে প্রয়োগ করতে হয়। ফলে জলজ প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটি থেকে বিকল্প পদ্ধতি অবলম্বনে পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
বহুমাত্রিক.কম