ছবি : বহুমাত্রিক.কম
গাজীপুর : উৎসব মুখর পরিবশে আসন্ন গাজীপুর সিটি করপোরেশন (জিসিসি) নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের মধ্যে মঙ্গলবার প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গাজীপুর শহরের বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে স্থাপিত রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে দিনব্যাপি রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন মন্ডল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতীক বরাদ্দ করেন। প্রতীক পেয়েই প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিক প্রচারযুদ্ধে নামেন।
প্রথমে নির্বাচনের প্রতিদ্বন্ধী ৭ মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বিতরণ করা হয়। আওয়ামী লীগ প্রার্থী গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম পেয়েছেন দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’। বিএনপি’র প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. হাসান উদ্দিন সরকার পেয়েছেন দলীয় প্রতীক ‘ধানের শীষ’। ইসলামি ঐক্যজোটের প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ফজলুর রহমান পেয়েছেন দলীয় প্রতীক ‘মিনার’।
বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টির কাজী মো. রুহুল আমিন দলীয় প্রতীক ‘কাস্তে’, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো: নাসির উদ্দিন দলীয় প্রতীক ‘হাতপাখা’, বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্টের মো: জালাল উদ্দীন দলীয় প্রতীক ‘মোমবাতি’ পেয়েছেন এবং একমাত্র স্বতন্ত্রপ্রার্থী ফরিদ আহমদ পেয়েছেন ‘টেবিলঘড়ি’। প্রতিদ্ব›দ্বী মেয়র প্রার্থীদের সবাই উপস্থিত থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রতীক গ্রহণ করেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম ও বিএনপি’র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার পাশাপাশি বসেছিলেন। মেয়র প্রার্থীদের পর সংরক্ষিত আসনের কউিন্সিলর পদের ও সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদের প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয় হয়।
প্রতীক বরাদ্দ অনুষ্ঠানে সবাইকে আচরণ বিধি মেনে চলার আহবান জানিয়ে রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন মন্ডল বলেন, আমরা চাই গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন উৎসব মুখর, অবাধ, নিরপেÿ ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হউক। সকল প্রার্থীর জন্য আমরা সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করব। জিরো টালারেন্সের মাধ্যমে যাতে সকল প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীর সমান অধিকার নিশ্চিত করা যায়, সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
নৌকা প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে গাজীপুর সিটির চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় গাজীপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার মিয়ার বাসভবনে যান। এ সময় তিনি নেতাকর্মীদের নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে সবাইকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান।
উপস্থিত জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ নৌকার পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দেন এবং মহানগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী একযোগে প্রচার প্রচারণা চালানোর অঙ্গীকার করেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব এম এম নিয়াজ উদ্দিন, পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য মো. শরিফুল ইসলাম, মহানগর সাধারণ সম্পাদক মো. জয়নাল আবেদিন, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুকসেদ আলী, মহানগর আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল, মহানগর যুব সংহতির সভাপতি মো. জাকির হোসেন, সাধারণ সম্পাদক দুলাল মৃধা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সেখান থেকে জাহাঙ্গীর আলম প্রচারণার জন্য সিটি করপোরেশনের টঙ্গী যান। দুপুর ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত টঙ্গীর দত্তপাড়া হাউজ বিল্ডিং, বনমালা রেলগেট, আলম মার্কেট এলাকায় নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে গণসংযোগ করেন তিনি। সেখানে তিনি টঙ্গীর হাজী মার্কেট এলাকার মো. আবুল বাশারের বাড়িতে একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা কাজী মোজাম্মেল হক, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মো. ইলিয়াস আহমেদ, মজিবুর রহমান, টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রজব আলী, থানা যুবলীগের সভাপতি আঃ সাত্তার মোল্লা প্রমুখ।
ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার জেলা শহরের দলীয় কার্যালয়ে যান। সেখান থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেন। এ সময় তিনি প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা, প্রার্থীদের সমান সুযোগ এবং কালো টাকার ছড়াছড়ি বন্ধের দাবিও জানান। এছাড়া ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের ঘরে ঘরে গিয়ে তার সালাম এবং ধানের শীষের পক্ষে ভোট চাওয়ার আহবান জানান।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজুলুল হক মিলন, সাধারণ সম্পাদক সায়েদুল আলম বাবুল, নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. মাজহারুল আলম, শ্রমিক দলের কেন্দ্রিয় কার্যকারী সভাপতি সালাউদ্দিন সরকার, বিএনপি নেতা মো. সোহরাব উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সেখান থেকে তিনি টঙ্গীর বাসভবনে চলে যান। সেখানে বিভিন্ন দলের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে মত বিনিময় করেন। হাসান সরকারের মিডিয়া সেলের প্রধান ডা. মাজহারুল আলম জানান, আজ সকালে তিনি সিটি করপোরেশনের গাছা থেকে প্রচারণা শুরু করবেন।
এদিকে প্রতীক পাওয়ার পর শহরের শ্মশানঘাট, উত্তর ছায়াবীথি, স্টেডিয়াম এলাকায় ভোটারদের সাথে কুশলাদি বিনিময় করেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. জালাল উদ্দিন ভান্ডারী (মোমবাতি)। দুপুরে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ফরিদ আহমেদের (টেবিল ঘড়ি) পক্ষে মাইকে প্রচারণা শোনা গেছে শহরের উনিশে চত্বর-থানা রোড এলাকায়।
শহরের লক্ষীপুরা থেকে গণসংযোগ শুরু করেন ২৫,২৬ ও ২৭ নং ওয়ার্ড থেকে সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে প্রতিদ্ব›দ্বীতাকারী অ্যাডভোকেট শাহনাজ আক্তার ও তার সমর্থকরা। প্রার্থীর ভাই সাদেক আলী জানান বলেন, প্রতীক পাওয়ার পর থেকে তারা ২৫ এবং ২৭ নং ওয়ার্ডে প্রচারণা চালিয়েছেন এবং ভোটাররা আশানুরূপ সাড়া দিচ্ছেন।
রিটার্নিং অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ১০ জন, সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ২৯৪ জন প্রার্থী ও সংরক্ষিত আসনে কাউন্সিলর পদে ৮৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। যাচাই-বাছাইয়ে মেয়র পদে একজনের, সাধারণ আসনের কাউন্সির পদে ১৯ জনের এবং সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৩ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। এর মধ্যে আপিল করে প্রার্থীতা ফিরে পান সাধারণ আসনে কাউন্সিলর পদে ১২ এবং সংরক্ষিত আসনে কাউন্সিলর পদে ৩ জন। মনোনয়নপ্রত্র প্রত্যাহার করে নেন মেয়র পদে দুইজন, সাধারণ আসনের কাউন্সির পদে ৩১ জন এবং সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৩ জন। ফলে এ নির্বাচনে মেয়র পদে ৭ জন, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সির পদে ৮৪ জন, সাধারণ আসনের কাউন্সির পদে ২৫৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›দ্বীতা করছেন।
উল্লেখ্য, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল গত ৩১ মার্চ ঘোষণা করা হয়। তফসিল অনুযায়ী- ১২ এপ্রিল ছিল মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ছিল ২৩ এপ্রিল। গাজীপুর সিটির মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ এবং ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১ জন মহিলা ভোটার। আসছে ১৫ মে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ।
বহুমাত্রিক.কম