শশই, বিজয়নগর(বাহ্মণবাড়িয়া) থেকে ফিরে: নিজ গ্রামবাসীর ভালোবাসায় সিক্ত হলেন জীববিজ্ঞানী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক এম. তোফাজ্জল ইসলাম শাহীন।
সম্মানজনক বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি স্বর্ণপদকের জন্য মনোনীত হওয়ায় তাঁকে এই গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়। শুক্রবার বিকেলে শশই গ্রামে এই সংবর্ধনায় পার্শ্ববর্তী কয়েকটি ইউনিয়নের বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ অংশ নেয়। অংশ নেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিশিষ্ট নাগরিকরাও।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শাহীনের স্কুল সহপাঠী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোশাররফ হোসেন এলাকার কৃতি সন্তান জীববিজ্ঞানী এম. তোফাজ্জল ইসলাম শাহীনের গৌরবোজ্জ্বল এই পদক প্রাপ্তিতে গ্রামবাসীর পক্ষে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ‘‘তোফাজ্জল ইসলাম শাহীন শুধু শশই গ্রামেরই নন, তিনি বিজয়নগর তথা পুরো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গর্ব। একজন গবেষক হিসেবে তাঁর অসাধারণ সাফল্য আমাদের যেমন গর্বিত করে, তেমনি অনুপ্রাণিতও করে। আশা করবো আগামীতে তাঁর সাফল্য অব্যাহত থাকবে।’’
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলঅম ভুঁইয়া বলেন, ‘‘এই অঞ্চলের বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্ম শাহীনকে অনুসরণ করে এগিয়ে যাবে। স্কুল জীবন থেকে শিক্ষা ও কর্মজীবনের প্রতিটি স্তরেই শাহীন অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে। আমাদের মুখ উজ্জল করেছে।’’
‘‘অনেক আগেই শাহীনকে আমাদের স্বীকৃতি জানানোর উচিৎ ছিল। দেরিতে হলেও তাঁকে এ সম্মান জানাতে পেরে আমরা সম্মানিত’’ বলেন বুধন্তি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুল ইসলাম।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক মমিনুল ইসলাম দুলাল বলেন, ‘‘এই অঞ্চলের প্রতি ঘরে ঘরে যাতে একজন শাহীনের জন্ম হয় আমরা সেই প্রত্যাশাই করি। নতুন প্রজন্মের মধ্যে সেই প্রেরণা সৃষ্টির জন্যই এ সংবর্ধনার আয়োজন।’’
সংবর্ধিত অতিথি অধ্যাপক এম. তোফাজ্জল ইসলাম শাহীন বলেন, ‘‘এ সম্মানে আমি সত্যিই অভিভূত, বিস্মিত। গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনে বিশ্বের ৪০টির মতো দেশে গিয়েছি, বহু সম্মাননা-পদক পেয়েছি। কিন্তু আজকের এ সম্মান আমার কাছে অনেক তাৎপর্যের। আমার জীবনের বড় সব অর্জনের অংশীদার এই গ্রাম, কেননা এটা আমার শেকড়।’’
‘‘আমাদের দেশের মাটি যেমন উর্বর, মস্তিষ্কও তেমনি উর্বর। আমার প্রত্যাশা, এই গ্রামের ভবিষ্যত প্রজন্ম আমাকেও ছাড়িয়ে যাবে, আমি যা করতে পারিনি, তারা তা করে দেখাবে।’’-বলেন অধ্যাপক তোফাজ্জল।
গ্রামোন্নয়নে ব্যক্তিগত পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তোফাজ্জল ইসলাম শাহীন বলেন, ‘‘সিলেট থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত বিশাল একটি অঞ্চল যেখানে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। এলাকার পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হলে শিক্ষক হিসেবে আমি তাতে সর্বাত্মক সহযোগীতা দেওয়ার চেষ্টা করবো। এছাড়া আমার গ্রামকে শিক্ষার আলোতে আলোকিত করতে একটি ফাউণ্ডেশন করার পরিকল্পনাও আমার রয়েছে।’’ এজন্য সকলের সহযোগীতা প্রত্যাশা করেন তিনি। বিশেষ করে অভিবাসী শ্রমিকদের এলাকার শিক্ষা ও মানবসম্পদের উন্নয়নে সহায়তার আহ্বান জানান তিনি।
হাজী নান্নু মিয়ার সভাপতিত্বে সংবর্ধনায় অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলাম শাহীনকে শুভকামনা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন, কাইজার আলী, তাজুল ইসলাম, হাসান তসলিম, মুজিবুর রহমান, কাজী রফিকুল ইসলাম, শাহজালাল মাহমুদ, আবুল কালাম আজাদ আকাশ, ইউনুস মিয়া, সালাউদ্দিনসহ অন্যরা।
অধ্যাপক এম. তোফাজ্জল ইসলাম শাহীন
জীব বিজ্ঞানী এম. তোফাজ্জল ইসলাম শাহীন ১৯৬৬ সালের ২০ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তি ইউনিয়নের শশই গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। বাবা বজলুর রহমান ও মা খালেদা খানম। কৃষক পরিবারের মেধাবী সন্তান শাহীন শিক্ষা জীবনে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেন। উচ্চশিক্ষা শেষ করে নিবেদিত গবেষক হিসেবেও তাঁর সাফল্য ঈর্ষণীয়। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগে কর্মরত।
অধ্যাপক এম. তোফাজ্জল ইসলাম শাহীন এ পর্যন্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অসংখ্য সম্মানজনক পদকে ভূষিত হয়েছেন। সম্প্রতি তিনি জীববিজ্ঞানের মৌলিক গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য জেষ্ঠ শ্রেণীতে বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি স্বর্ণ পদকের জন্য মনোনয়ন লাভ করেন। ২০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে এই পদক প্রদান করবেন।
বহুমাত্রিক.কম