খুলনা : শ্রাবণের প্রথমভাগে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে গত ছয়দিনে খুলনা জেলার নয় উপজেলায় হাজার হাজার মৎস্য ঘের, পুকুর ও দীঘি পানিতে ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘেরের অবকাঠামো। অনেক ঘের মালিক সর্বশান্ত হতে বসেছে। অবিরাম বৃষ্টিতে মৎস্য সেক্টরে খুলনায় প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
জানা যায়, মৌসুমী বায়ূ সক্রিয় থাকায় গত বুধবার থেকে সারাদেশের ন্যায় খুলনাতেও অবিরাম বৃষ্টিপাত হচ্ছে। কখনও গুড়ি, গুড়ি, কখনও মাঝারি আবার কখনও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। জেলার অধিকাংশ নদ- নদীর পানি বিপদ সীমার কয়েক ফুট উঁচু দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলার বিভিন্ন উপজেলার খাল নালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি নিষ্কাশিত হতে পারছে না। বৃষ্টির পানি জমিতে আটকে থাকার কারণে এলাকার মৎস্য ঘের, পুকুর ও দিঘী বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেছে। মৎস্য ঘেরের গলদা চিংড়ি, বাগদা চিংড়ি, পুর্ণ বয়স্ক মাছ ও মাছের পোনা ভেসে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার মৎস্য চাষী। মৎস্য ঘের ভেসে গেছে সাড়ে তিনহাজার হেক্টর জমির মৎস্য ঘের। ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। এই ক্ষতি আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার সাহস গ্রামের নারী মৎস্য চাষী রিতা রাণী চৌধুরী বলেন, বাড়ির পাশে এক একর জমিতে গলদা ও সাদা মাছের চাষ করেছিলাম। অতিবৃষ্টিতে ঘের তলিয়ে মাছ ভেসে গেছে। ঘেরের পাশ দিযে ভদ্রা নদী থাকলেও তা ভরাট হয়ে গেছে। বৃষ্টির পানি সরে যেতে পারছে না।
ভেলকামারি বিলের মাছ চাষী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিলের মধ্য দিয়ে যে সকল খাল ছিল তা ভরাট হয়ে গেছে। ভরাট হওয়া খাল যে যার মত দখল করেছে। যে কারণে ঘের হতে বৃষ্টির পানি সরতে পারছে না। তিনি বলেন, বৃষ্টির পানি সরতে না পারায় ঘেরের চিংড়ি, সাদা মাছ ও পোনা মাছ ভেসে গেছে। এতে ক্ষতি হযেছে প্রায ২ লাখ টাকা।
দাকোপ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার জয়দেব কুমার পাল বলেন, এই উপজেলায় সাড়ে তিনশত ঘের অতিবৃষ্টিতে ভেসে গেছে। যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১ কোটি টাকা।
খুলনা জেলা মৎস্য জরিপ কর্মকর্তা বিধান চন্দ্র মন্ডল বলেন, অতিবৃষ্টিতে খুলনার ৯ উপজেলায় পুকুর, দীঘি ও মৎস্য ঘের ভেসে গেছে ৭ হাজার ৩৩০টি। যার জমির পরিমাণ ৩ হাজার ৪৫৪ হেক্টর। ভেসে গেছে ৭৩২ টন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। যার ক্ষতির পরিমাণ ৫ কোটি ৯৫ লাখ। ভেসে গেছে বিভিন্ন প্রজাতির ৩৯ লাখ মাছের পোনা। যার আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। মৎস্য ঘের, পুকুর ও দীঘির অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে আনুমানিক ২ কোটি ২০ লাখ টাকা।
তিনি বলেন, সবমিলিয়ে খুলনায় অতিবৃষ্টিতে মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে ৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। তবে বৃষ্টির এই অবস্থা চলতে থাকলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
বহুমাত্রিক.কম