গাজীপুর : দেশের অন্যতম শিল্প নগরী হিসেবে এরই মধ্যে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছে গাজীপুর জেলা। দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রয়েছে গাজীপুরের সুনাম। দেশের প্রায় বেশির ভাগ অঞ্চলের লোকের অভয়ারণ্য এই গাজীপুর জেলা।
জেলাটিতে রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য লিল্প-কারখানা, রয়েছে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারিসহ রয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এসবের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হচ্ছে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ি।
অথচ কোনাবাড়ি-কাশিমপুর ও জিতারমোড়-জিরানী সড়কের বেহাল দশা দীর্ঘ দিন ধরেই। সড়কের বেশিরভাগ অংশেই পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা, রয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় খনা-খন্দ। দীর্ঘ দিন ধরে এমন অবস্থা চলতে থাকলেও নেয়া হয়নি কোন কার্যকরী ব্যবস্থা। ফলে এসড়ক দিয়ে চলাচলরত ছোট বড় দূর্ঘটনা। দূর্ঘটনার কবলে পড়ে অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। এরপরও এক প্রকার বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে এ সড়ক কেন্দ্রিক বসবাসরত মানুষজন। ফলে জন দূর্ভোগ এখন চরমে গিয়ে পৌঁছেছে।
শিল্প কারখানার শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ চলাচল করে কোনাবাড়ী-কাশিমপুর ও জিতারমোড়-জিরানী সড়ক দুটি দিয়ে। ওই সড়ক দুটিতে চলাচল করে যাত্রীবাহী লেগুনা, রিকশা, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, ইজিবাইক, কাভার্ডভ্যান, বাস ও ট্রাকসহ শিল্প কারখানার যানবাহনসহ যাত্রীবাহী বিভিন্ন পরিবহন।
সড়ক দুটি’র এমন বেহাল দশা যে যানবাহন তো দূরের কথা পায়ে হেঁটে চলাচল করাও মুশকিল। একটু বৃষ্টি হলেই সড়কের অধিকাংশ স্থানে পানি জমে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা, বেশির ভাগ স্থানেই রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য খনা-খন্দ। দু’টি সড়কের প্রায় সম্পূর্ণ অংশে কার্পেটিং উঠে গেছে। সড়ক দু’টির বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হলেই পানি জমে খালে পরিণত হয়। ফলে যানবাহন চলাচল প্রায় একেবারে বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে প্রায় সময়ই বিকল হয়ে পড়ছে যানবাহন।
এতে করে সড়কের দু’পাশে সৃষ্টি হয় যানজটের । ফলে একদিকে পড়তে হচ্ছে বিড়ম্বনায় অন্যদিকে সম্মুখীন হতে হচ্ছে আর্থিক ক্ষতির। অনেক সময় শিল্প-কারখানার মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়া, গাড়ির বিভিন্ন অংশের ক্ষতি হচ্ছে একমাত্র সড়কের এমন বেহাল দশার কারণে।
সড়ক দু’টিতে বেশির ভাগ সময়েই পানি ও কর্দমাক্ত থাকায় পথচারীরা পায়ে হেঁটে চলাচল করতে বেক পেতে হচ্ছে। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগছে। ফলে বিপাকে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষদের। সড়ককে ঘিরে বিভিন্ন দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও সমস্য হচ্ছে। কাঁদা পানি ছিটকে যাচ্ছে ওইসব দোকানের ভেতর। এতে করে নষ্ট হচ্ছে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীরা।
সড়ক দু’টির বেহাল এমন বেহাল অবস্থা হওয়ায় প্রতিদিনই শতশত পরিবহন চালক, যাত্রী, পথচারী, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী এবং হাজার হাজার পোশাক শ্রমিকসহ নানা পেশার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাই এলাকাবাসি সহ সকল পেশার মানুষের প্রাণের দাবি সড়ক দু’টি যত দ্রত সম্ভব মেরামত করা হোক।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কোনাবাড়ী-কাশিমপুর, জিতারমোড়-জিরানী সড়কের কাশিমপুর বাজার, যমুনা কারখানা এলাকা, জরুণ বাজার, কেয়া স্পিনিং মিলের সামনের অংশ, হরিণাচালা, কাজি মার্কেট, জিতারমোড়, হাতিমারা, সারদাগঞ্জ, ও চক্রবর্তীসহ বিভিন্ন এলাকার বসবাসরত জনগণের প্রতিদিনের দূর্ভোগের নাম সড়ক দু’টি।
কথা হয় কোনাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো: লতিফের সাথে তিনি জানান, সড়কে সবসময় পানি জমে থাকে। কর্দমাক্ত সড়কে চলাচল একেবারে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আগের চেয়ে প্রায় দিগুন সময় নিয়েও সঠিক গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে।
কোনাবাড়ি-কাশিমপুর সড়কে এক ইজিবাইক চালক রুবেল বলেন, এই সড়কে দিন কিংবা রাত্রি বেশির ভাগ সময়েই ইজিবাইক চলাচল বেশি করে। ইজিবাইক চালিয়েই তার সংসার চলে। তাছাড়া বেশিরভাগ মানুষই ইজিবাইক করেই গন্তব্যে পৌঁছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি, কাদা, খানা-খন্দের কারণে ইজিবাইক চালাতে সমস্যা হয়।
তিনি বলেন, অনেক সময় যাত্রীরা ইজিবাইক থেকে পড়ে গিয়ে ব্যথাও পান। তাছাড়া খানা-খন্দে ভরপুর রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে প্রায় সময়ই গাড়ির যন্ত্রপাতির বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। ফলে আয়ের চেয়ে ব্যয় টাই বেশি হয়। এমন অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
এছাড়া সড়কটিতে চলাচলকারী কয়েকজন পথচারীর সাথে কথা বলে জানা যায়, সড়ক দু’টির অবস্থা খুবই করুন। তারা জানান কোন অসুস্থ ব্যক্তিকে এই রাস্তা দিয়ে হাসপাতালে নেয়া প্রায় অসম্ভব। কোন জরুরি দরকারে এ রাস্তা কখনও ব্যবহার করা সম্ভব হয়না। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময় নিয়ে বের হলেও সঠিক গন্তব্যে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যায়।
জিতার মোড়-জিরানী সড়কে এক কাভার্ডভ্যান চালক মো. খাইরুল ইসলাম জানান, রাস্তার এমন অবস্থা যে মনে হয় নদীতে গাড়ি চালাচ্ছি। কোথায় যে ভাল আর কোথায় যে খারাপ তা বোঝার উপায় নাই। সামনে চলমান কোন অটোরিকশাকে দেখে দেখে গাড়ি চালাতে হয়। যাতে বড় কোনো গর্তে পড়ে না যাই। অনেক সময় গাড়ি আটকে যায়। প্রতিদিনই এমন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। অনেক সময় গাড়ি গর্তে পড়ে যন্ত্রপাতির ক্ষতি হয়।
মো. মাহামুদুল হাসান রিপন নামের এক শিক্ষানবিশ আইনজিবী জানান, এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন শত শত রিকশা-ভ্যান, অটোরিকশা, সিএনজি, কভারভ্যানসহ নানা যানবাহন চলাচল করে। এছাড়া এ সড়কের দু’পাশে রয়েছে অনেকগুলো শিল্প-কারখানা বা পোশাক কারখানা। সেই সাথে রয়েছে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব কারখানা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করে। আর এ সড়কটি দিয়েই ওই সকল শ্রমিকদেরকে চলাচল করতে হয়। কিন্তু রাস্তার এমন অবস্থা প্রতিদিনই তাদের ঝুকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। এর প্রতিকারের কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। অচিরেই যেন এ সড়কের মেরামত করা হয় এমনটিই দাবী তার।
এব্যাপারে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পারভিন আক্তার জানান, জিতারমোড়-জিরানী বাজার সড়কের মেরামত কাজের টেন্ডার এরই মধ্যে হয়ে গেছে। তবে প্রথম ঠিকাদার চলে যাওয়ায় পরবর্তীতে অন্য একজন ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। আশা করছি অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এ সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু হবে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল ফোরলেন সড়কের কাজ শুরু হওয়ায় ওই সড়ক দু’টি বাইপাস হিসেবে অনেকেই ব্যবহার করছে। যার ফলে সড়ক দু’টির এ রকম খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে কোনাবাড়ী-কাশিমপুর সড়কের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
এছাড়া অন্যান্য সড়কগুলোর কাজও টেন্ডারের মাধ্যমে দ্রুত মেরামত করা হবে বলেও জানান ভারপ্রাপ্ত মেয়র। তিনি সাধারণ জনগণকে ধৈর্য্য ধরার আহ্বানও জানান।
বহুমাত্রিক.কম