Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৪ ১৪৩০, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

কেসিসির ফুটপাতে কি হকারদের দৌরাত্ব থামবে না?

শেখ হেদায়েতুল্লাহ, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩:৩৩, ৮ এপ্রিল ২০১৮

আপডেট: ১৪:০৮, ৮ এপ্রিল ২০১৮

প্রিন্ট:

কেসিসির ফুটপাতে কি হকারদের দৌরাত্ব থামবে না?

ফাইল ছবি

খুলনা : নগরীর নিরালা এলাকার বাসিন্দা মাহবুব হোসেন এসেছেন ঔষধ মার্কেট বলে পরিচিত হেরাজ মার্কেটের হাসান ফার্মেসীতে ওষধ কিনতে। হাসান ফার্মেসির সামনে মাহবুব হোসেন তার মোটর সাইকেলটি রেখেছিলেন। ঔষদ কিনে তিনি নীচে নামার সাথে সাথে এক ব্যক্তি তাকে মোটরসাইকেল সরাতে বলেন। তিনি জানতে চান কেন সরাতে হবে।

এ প্রশ্নের জবাবে ওই ব্যক্তি তেড়ে এসে বলেন দোকান দিব। তখন মাহবুব হোসেন ওই ব্যক্তিকে বলেন মোটর সাইকেল তো আমি একা রাখিনি। একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে মাহবুব হোসেনকে মারতে উদ্যত হয় ওই অজ্ঞাত নামধারী হকার।

এরপর এসে মাহবুব হোসেনের মোটর সাইকেলটি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এই ঘটনাটি রোববার সকাল সোয়া ১০টার দিকে। শুধু মাহবুব হোসেনই নন এমন শত শত ক্রেতা প্রতিদিন ফুটপাত দখলকারী কথিত হকারদের হাতে লাঞ্ছিত হয়ে থাকেন।

হকারদের দখলবাজি ও দৌরাত্বে নগরীতে আসা নারী, পুরুষদের ভোগান্তির শেষ নেই। হকার দখলমুক্ত করতে কেসিসি ও মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক কার্যত অসহায়।

গত ৩ মার্চ খুলনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনের লক্ষ্যে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ফুটপাতগুলো থেকে হকার ও মৌসুমী ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করে খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি)। সে সময়ে সাধারণ মানুষ নির্বিঘ্নে ফুটপাত দিয়ে চলাচল করার সুযোগ পান।

প্রধানমন্ত্রীর খুলনায় আগমনে কয়েকদিন আগে থেকেই ফুটপাত দখলমুক্ত করতে প্রশাসনের সকলেই ছিল তৎপর। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ৩ মার্চের জনসভার পর থেকেই খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ফুটপাত ও সড়ক চলে গেছে হকারদের দখলে।

কেসিসির গুরুত্বপূর্ণ ফুটপাত ও সড়কগুলো হচ্ছে ডাকবাংলো মোড়, শিববাড়ি মোড়, ময়লাপোতা মোড়, আইনজীবী সমিতির সামনের সড়ক, বড় বাজার, হেলাতলা, থানা মোড়, পিকচার প্যালেস মোড়, জলিল টাওয়ার ও হাজী মালেক মাকের্টের সামনের স্যার ইকবাল রোড , শহীদ হাদিস পার্ক, জেলা পরিষদের সামনের ফুটপাথ ও সড়ক, সামসুর রহমান রোড, সাউথ সেন্ট্রাল রোড, মুজগুন্নী এলাকা, আবু নাসের হাসপাতাল সড়ক, যশোর রোড, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মোড়, সহ শহরের বিভিন্ন সড়ক ও ফুটপাতগুলো হকারদের দখলে চলে গেছে। ফলে নগরীর যত্রতত্র যানজট সৃষ্টি যেমন হচ্ছে তেমনি ফুটপাত দিয়েও পথচারিদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। শুধু তাই নয় নগরীর এমন কোন সড়ক নেই যেখানে ফুটপাতে হকারের অবস্থান নেই। ফুটপাত দখলে যাওয়ার কারণে মানুষ রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। রাস্তায় মানুষ চলাচলের কারণে সৃষ্টি হয় যানজট।

শহরের স্থানীয় বাসিন্দা তরুন কান্তি দেবনাথ বলেন, হকারদের যন্ত্রণায় রাস্তায় চলাফেরা করা যায় না, রাস্তাঘাটে ভ্যান বসিয়ে জটলা তৈরি করে। প্রায়ই দেখি কেসিসির পক্ষ থেকে হকারদের উচ্ছেদ অভিযান করা হয়। কিন্তু কয়েক ঘন্টা যেতে না যেতেই পুনরায় সেই একই রূপ দেখা যায়।

অপর স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ কবির হোসেন আক্ষেপ করে বলেন, প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযান শুধু আই ওয়াস ছাড়া কিছুই না। আজ উচ্ছেদ করবে এর ঘন্টাখানেক পরেই পুনরায় দখল হচ্ছে। এতে কিছু অসাধু কর্মকর্তা, হকার্স সমিতির নামের কতিপয় সংগঠণের নেতারা লাভবান হচ্ছে। হকারদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের সুযোগ পাচ্ছেন। ওই অসাধু কর্মকর্তারাই অভিযানে নামার আগেই তারা ওই সব ফুটপাত দখলকারীদের জানিয়ে দিচ্ছেন। এই অভিযান চালিয়ে কোন লাভ নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। যারা হকারদের থেকে মাসিক চাঁদা নিয়ে হকারদের আশ্রয় দিত, প্রশাসনের উচিত সেই চাঁদাবাজদের ধরে আইনের আওতায় আনা বলে মনে করেন নগরীর স্থানীয় বাসিন্দারা।

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের স্টেট অফিসার মো: নুরুজ্জামান বলেন নগরী থেকে ফুটপাত ও সড়কের অবৈধ দখলদার ও হকারদের উচ্ছেদে কেসিসি সব সময় তৎপর। উচ্ছেদ অভিযান চলমান রয়েছে বলেও তিনি জানান।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো: কামরুল ইসলাম বলেন ফুটপাত ও নগরের সড়কের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের দায়িত্ব খুলনা সিটি কর্পোরেশনের। উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে সিটি কর্পোরেশন পুলিশের সহায়তা চাইলে দেয়া হবে। তিনি বলেন মেট্রোপলিটন এলাকার সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশও হকার উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতায় রাখে।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer