Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৪ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪

কুড়া-ভুসির দোকানে ডাকঘরের কার্যক্রম!

তুহিন আহামেদ, গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০৩:০৭, ১৪ অক্টোবর ২০১৬

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

কুড়া-ভুসির দোকানে ডাকঘরের কার্যক্রম!

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

গাজীপুর: কুড়া-ভুসির দোকানে চলছে ডাকঘরের কার্যক্রম। এতে চিঠিপত্র আদান-প্রদান, টাকা লেনদেন সহ যাবতীয় কাজ কর্মের ব্যাঘাত ঘটছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাঠানো বিভিন্ন মানুষ ও প্রতিষ্ঠানের পাঠানো মূল্যবান চিঠিপত্র রাখতে হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে।

বলছিলাম গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার আটাবহ ইউনিয়ন পরিষদের বাড়ইপাড়া ডাক ঘরের কথা। নামেই শুধু বাড়ইপাড়া ডাকঘর। এতে ডাক বিভাগের নেই কোন নিজস্ব ঘর বা ভবন। মাষ্টারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেই চলছে ডাকঘরের কার্যক্রম।

সরেজমিনে গিয়ে বাড়ইপাড়া ডাক ঘরের পোষ্ট মাষ্টার মো. খলিলুর রহমান এর সাথে কথা হয়। তিনি জানান, ১৯৮৮ সাল থেকে এ ডাক ঘরের যাত্রা শুরু হয়। আর সে সময় থেকে মাত্র ৩৬০ টাকা বেতনের চাকুরী নিয়ে পোষ্ট মাষ্টার পদে এখন পর্যন্ত চাকুরী করে যাচ্ছি। অবশ্য এখন বেতন ২৫ শত ৬০ এ মাসেই প্রথম উঠিয়েছি।

খলিলুর রহমান আরো জানান, এ ডাক ঘরে প্রতিদিন শত শত চিঠি আদান প্রদান করা হয়। সেই সাথে মাসে প্রায় ৬ থেকে ৭ লাখ টাকার মত মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে লেনদেন হয়ে থাকে। কিন্তু এ ডাক ঘরের বসার কোন নিজস্ব স্থান নেই। তাই বাধ্য হয়ে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কুড়া-ভুসির দোকানে বসেই এর কার্যক্রম পরিচালনা করছি। দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে এভাবেই এ ডাক ঘরের কাজ করে যাচ্ছি। আমার সাথে এখানে পোষ্ট ম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন মজিবুর রহমান।

এছাড়া লোকজনকে অনেক সময় ফিরে যেতে হয়। কারণ রেজিষ্টার্ড জার্ণাল থাকেনা। আবার এটা থাকলে ডাক টিকিট থাকেনা। এছাড়া তিনি অভিযোগ করে বলেন, এখানে ডাক টিকিটের চাহিদা রয়েছে প্রতিমাসে ৬ হাজারেরও বেশী কিন্তু দেয়া হয় এর থেকে অনেক কম। তাই একেক সময় লোকজনকে ফিরে যেতে হয়।

নিজের বেতন সম্পর্কে বলতে গিয়ে দীর্ঘ নিশ্বাষ ত্যাগ করে বলেন, এ মাসেই প্রথম ২৫৬০ টাকা বেতন উঠিয়েছি। এর আগে ৭৬০ টাকা এবং পরে ১২৫০ টাকা মাসিক বেতন পেতাম। এদিয়ে সংসারতো দূরের কথা নিজেই চলেনা। তাই বাধ্য হয়েই কুড়া-ভুসি দোকান দিয়েছি। সেই সাথে ডাক ঘরের কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি আমাদের যেন বেতন বৃদ্ধি করা সহ সরকারি স্কেল অনুযায়ী বেতন দেয়া হয়।

শুধু বাড়ইপাড়া ডাক ঘরই নয় এ ইউনিয়নে রয়েছে আরো তিনটি ডাকঘর। যার প্রত্যেকটি’র একই অবস্থা। ডাক ঘরগুলো হচ্ছে সাহবাজপুর, গোসাত্রা এবং বলিয়াদী। এগুলোও জীর্ণশীর্ণ ভবনে কিংবা ঘরে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়ে থাকে।

এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে কালিয়াকৈর উপজেলা গঠিত। এ উপজেলায় রয়েছে একটি উপজেলা ডাক ঘর, একটি সাব-ডাকঘর এবং এ দুটির অধীনে রয়েছে মোট ১৬টি শাখা ডাকঘর। উপজেলা ডাকঘরটি রয়েছে কালিয়াকৈর বাজারের ভেতর এবং সাব ডাকঘরটি হচ্ছে সফিপুর আনসার একাডেমী ডাক ঘর। সাব-ডাক ঘরের আওতায় রয়েছে সফিপুর বাজার, রতনপুর, চান্দরা ও মৌচাক স্কাউট ক্যাম্প। এছাড়া উপজেলা ডাক ঘরের আওতায় রয়েছে ১২টি শাখা ডাকঘর। যা ৯টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে।

যার মধ্যে উপজেলা ডাক ঘরের অধীনে রয়েছে ১২টি এবং সাব-ডাক ঘরের আওতায় রয়েছে আরো ৪টি ডাকঘর। শাখা ডাকঘর গুলোর কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে নানা সমস্যার কারণে।

জরাজীর্ণ ডাকবক্স

এর মধ্যে বলিয়াদী শাখা ডাকঘরটি বলিয়াদী জমিদার বাড়ির একটি জরাজীর্ণ ভবনের একটি কক্ষে চলছে এর কার্যক্রম। বৃষ্টি হলেই পড়ে বৃষ্টি। এছাড়া রয়েছে আরো নানান সমস্যা।

সফিপুর শাখা ডাকঘরের অবস্থা আরো নাজুক। সফিপুর একটি ঘনবসতিপূর্ণ এবং জনবহুল এলাকা। মৌচাক ইউনিয়ন পরিষদের দেয়া একটি ছোট্ট ঘরে চলছে এর কার্যক্রম। বৃষ্টি হলেই ঘরে পানি পড়ে। এরপরও চলে এর কার্যক্রম।

সফিপুর আনসার ভিডিপি একাডেমীতে রয়েছে উপজেলা সাব-ডাকঘরটি। এ ডাকঘরের অধীনে ৪টি শাখা রয়েছে। যার প্রত্যেকটির কার্যক্রম চলছে জরাজীর্ণ অবস্থায়।

সফিপুর আনসার ভিডিপি একাডেমী ডাক ঘরের পোষ্ট মাষ্টার জাকারিয়া ফেরদৌস জানান, সফিপুর আনসার ভিডিপি ডাকঘরটি উপজেলা সাব-ডাকঘর। এর আওতায় আরো ৪টি শাখা ডাক ঘর রয়েছে। সবগুলির কার্যক্রম চলছে জীর্ণশীর্ণ অবস্থায়। শাখা ডাকঘর গুলোর দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান তিনি।

এব্যাপারে কালিয়াকৈর উপজেলা ডাক ঘরের পোষ্ট মাষ্টার এমএজেড শরীফ বহুমাত্রিক.কম-কে জানান, উপজেলার শাখা ডাক ঘরগুলোর নিজস্ব জমি না থাকার কারণে সমস্যাগুলি হচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে বিষয়গুলি জানানো হয়েছে।

তিনি আরো জানান, শাখা ডাক ঘর গুলোর পাশাপাশি উপজেলা ডাক ঘরেও রয়েছে বিভিন্ন সমস্যা। এ ডাক ঘরে প্রতিদিন গরে এক থেকে দেড় কোটি টাকা লেনদেন হয়ে থাকে। কিন্তু নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। এছাড়া এ ভবনটি জীর্ণশীর্ণ হয়ে গেছে। সীমানা প্রাচীর নেই। রয়েছে জনবল সংঙ্কট। উপজেলা ডাকঘরে তিনজন পোষ্ট ম্যান থাকার কথা রয়েছে একজন। রানার থাকার কথা তিন জন রয়েছে একজন। অপারেটর থাকার কথা তিন জন রয়েছে এক জন। এদিয়ে কোন মতে চালিয়ে যাচ্ছি।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer