Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ২ ১৪৩১, বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪

কুষ্টিয়ায় বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

এস এম জামাল, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০২:৩৮, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

কুষ্টিয়ায় বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ায় বেসরকারি হাসপাতাল ও প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোর বিরুদ্ধে চরম অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। চলছে মালিক-চিকিৎসকের স্বেচ্ছাচার ও চিকিৎসার নামে প্রতারণা। স্বাস্থ্যসেবা এখন একটি মুনাফা অর্জনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভুয়া ডিগ্রিধারী ডাক্তার দিয়ে রোগী দেখা, টেস্টের নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, দালালের দৌরাত্ব্য চরমে ও অধিকাংশ ক্লিনিকে রমরমা দেহ ব্যবসাও চালিয়ে যাচ্ছে দেদারছে। এর ফলে হুমকির মুখে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবা।

সম্প্রতি কুষ্টিয়া শহরের মজমপুরে একতা হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে শ্লীলতাহানির ঘটনায় রনি খাতুন (২৫) নামের এক গৃহবধূর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।

সুত্রে জানা যায়, ‘স্ত্রীর বুকে ব্যথার চিকিৎসার জন্য বৃহস্পতিবার সকালে তাঁকে নিয়ে কুষ্টিয়া শহরের মজমপুরে একতা হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যান রনির স্বামী মাসুম আলী। এসময় চিকিৎসক রনিকে আল্ট্রাসনোগ্রাম করার পরামর্শ দেন। বেলা দেড়টার দিকে আমরা সনোলজিস্ট রবিউল ইসলামের কক্ষে যাই। পরীক্ষার জন্য রনিকে একটি কক্ষে নেওয়া হয়। প্রায় ২০ মিনিট পর রনি কাঁদতে কাঁদতে বের হয়ে আসেন। জিজ্ঞাসা করলে রনি বলেন, ডাক্তার (সনোলজিস্ট) তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন। সেখানকার চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাই।

তাঁরা বলেন, এখানে পুরুষ চিকিৎসক দিয়েই আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়। পরে বাড়ি ফিরে আসি।’ জানা যায়, কুষ্টিয়া শহর থেকে শুরু করে মফস্বল বাজারেও ব্যাঙের ছাতার মতো অসংখ্য বেসরকারি ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। শতকরা ৬০ ভাগ অপ্রয়োজনীয় ও ভুয়া ডিগ্রিধারী ডাক্তার দ্বারা এসব হাসপাতাল-ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা পরিচালিত হচ্ছে। এসব হাসপাতালে নেই বিদ্যমান আইনের কোনো প্রয়োগ।

মালিক-চিকিৎসকদের ইচ্ছাই চলে ঐ স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিচালনার আইন। তারা রোগীদের থেকে ইচ্ছামতো ফি আদায় করছেন। ভাল ভাল ডাক্তাররাও কমিশনের লোভে নির্দিষ্ট ক্লিনিকে টেস্ট করার জন্য প্রেসক্রিপশনে উল্লেখ করে দেন। শুধু তাই নয়, এসব ক্লিনিক ও প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে নামী দামী ডাক্তারের সাইনবোর্ড দেওয়া থাকলেও সেসব ডাক্তাররা সেই ক্লিনিকে রোগী দেখেন না।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ থেকে জানা যায়, সেবার নামে অনেক প্রতিষ্ঠান অধিক অর্থ আদায়, প্রতারণা, ভুল চিকিৎসা ও নিয়ন্ত্রণহীনভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে। চিকিৎসা ফি, বেড ও কেবিন ভাড়া, অপারেশন, প্যাথলজি টেস্টের ফি ইত্যাদিও প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই নির্ধারণ করছেন। নতুন প্রযুক্তি, আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপনা খরচের নামে তারা চিকিৎসার খরচ বাড়াচ্ছেন। ফলে মালিকরা স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন। সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা চিকিৎসাসেবা, ওষুধ আমদানিতে সরকারি ভর্তুকিও পেয়ে থাকেন। অথচ প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হচ্ছে সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কুষ্টিয়া পৌরশহরে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক রয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক। এর মধ্যে অবৈধ ক্লিনিকের সংখ্যা অনেক। সার্বক্ষণিক চিকিৎসক রাখার নিয়ম থাকলেও ফোনে ডাক্তার ডেকে এনে চিকিৎসা করানো হয়। এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা ব্যবসার শিকার হচ্ছেন অসহায় রোগীরা।

এছাড়া অধিকাংশ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের নীতিমালা অনুযায়ী উপকরণ নেই। এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অস্ত্রোপচার হলেও থিয়েটার, দরকারি যন্ত্র, লোকবল নেই। প্রতি ক্লিনিক-হাসপাতালের জন্য চার থেকে পাঁচ জন দালাল নিয়োগ দেওয়া থাকে। এই দালালরা গ্রাম থেকে রোগী আসলে টানাটানি শুরু করে দেয়। কারন রোগী ভর্তি করলেই কমিশন।

এছাড়াও দেখা যায় কিছু ক্লিনিকগুলোতে রোগী একজনও নেই অথচ সেই ক্লিনিকে সব সময় পাঁচ থেকে আট জন নার্স থাকে আসলে এই নার্সগুলো কি করে। কুষ্টিয়া জেলা সিভিল সার্জন ডা: নাজমুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোর চিকিৎসাসেবায় অনিয়মের অভিযোগ পেলে অবশ্যই এই হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer