ছবি-সংগৃহীত
কুষ্টিয়া : বাতিল ও ঝুঁকিপূর্ণ সিলিন্ডার রং করে তাতে ভরা হচ্ছে এলপি গ্যাস। এরপর তা বিশেষ চক্রের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে গ্রাহকদের কাছে।
কুষ্টিয়া শহরে এমন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে কালীশংকরপুরের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বিপুল পরিমাণ নকল সিলিন্ডারের অস্তিত্ব পেয়েছেন। দুজন ব্যবসায়ীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। এ চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক জহির রায়হান বলেন, যারা মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করে তাদের মার্জনা করা যায় না। তাদের শুধু অর্থদ-ই নয়, কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। এ ধরনের কর্মকা- মোটেও বরদাশত করা হবে না। স্থানীয় সূত্র জানায়, নকল সিলিন্ডারে গ্যাস বিক্রির এ কারবারে নেতৃত্ব দিচ্ছে কালীশংকরপুরের রাজু ও তাজু নামের সহোদর। তাদের মালিকানাধীন দুটি প্রতিষ্ঠানসহ আরো অনেকের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার ঘরে ঘরে ঢুকে পড়ছে।
অনেকটা প্রকাশ্যে এ কারবার চললেও গত এক বছরে তা বন্ধ করা যাচ্ছিল না। রাজু ও তাজু চট্টগ্রামের বিভিন্ন মার্কেট থেকে পরিত্যক্ত সিলিন্ডার সংগ্রহ করে তা কুষ্টিয়ায় নিয়ে আসে বলে জানা গেছে। এরপর সিলিন্ডারে রঙের প্রলেপ দিয়ে চকচকে করা হয়। যমুনা গ্যাসের নাম লিখে তা নেওয়া হয় যমুনা গ্যাসের ডিপোতে। গ্যাস ভরে তা আসল সিলিন্ডারের মতো বাজারজাত করা হয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, মানসম্মত এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ১৪ থেকে ১৫ শ টাকা। সে ক্ষেত্রে অসাধু ব্যবসায়ীরা চার-পাঁচ শ টাকায় পুরনো ও বাতিল সিলিন্ডার সংগ্রহ করছে। যার ফলে ক্রেতাদের কাছে তারা তুলনামূলক কম দামে গ্যাস বিক্রি করতে পারছে। সিলিন্ডারসহ গ্যাস ২১-২২ শ টাকার নিচে বিক্রি সম্ভব নয়। কিন্তু বিশেষ চক্র ১৯ শ’ টাকায়ও তা বিক্রি করছে। এতে গ্রাহকদের পাশাপাশি শহরের প্রকৃত গ্যাস বিক্রেতারা মারাত্মকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
কুষ্টিয়ার সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি রফিকুল আলম টুকু বলেন, এ ধরনের কর্মকা- অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো সময় পুরনো গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে দুর্ঘটনাসহ প্রাণহানি ঘটতে পারে। তাই এদের সামান্য জরিমানা করে ছেড়ে দিলেই চলবে না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম মাযহারুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানতে পারি পুরনো গ্যাস সিলিন্ডারে রং করা হচ্ছে কালীশংকরপুর এলাকায়। তখন অভিযুক্ত রাজু ও তাজুর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তাদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, শুধু অসাধু ব্যবসায়ী নয়, যমুনা গ্যাস কম্পানির অসৎ কর্মীরাও এ চক্রে জড়িত। কম দামে গ্যাস বিক্রির কারণে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা যেমন মুনাফা পাচ্ছেন, তেমনি নকল সিলিন্ডারের মাধ্যমে যমুনা গ্যাস কম্পানির বিক্রি বাড়ছে।
অভিযুক্ত রাজু ও তাজুর মালিকানাধীন এন এস রোডের রাজু সাইকেল স্টোর ও আখলাক স্টোরসহ একই সড়কের লাল মহাম্মদ তেলকল, টিকেপাড়া মসজিদ ও স্টেডিয়াম এলাকার দোকানে এ ধরনের বাতিল সিলিন্ডার বিক্রির অভিযোগ রয়েছে।
বহুমাত্রিক.কম