Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৪ ১৪৩০, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

কাশ্মীর সংকট: ভারতীয় কমান্ডারের মন্তব্য নিয়ে তোলপাড়

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:০৮, ২১ আগস্ট ২০১৬

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

কাশ্মীর সংকট: ভারতীয় কমান্ডারের মন্তব্য নিয়ে তোলপাড়

ঢাকা : কাশ্মীর সঙ্কটের সমাধানে সব পক্ষেরই সংযত হয়ে আলোচনার টেবিলে বসা উচিত–ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক ঊর্ধ্বতন কমান্ডার নজিরবিহীনভাবে এই মন্তব্য করার পর তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। খবর বিবিসি বাংলা’র 

কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার প্রকাশ্যে এ নিয়ে কিছু না-বললেও ভারত-শাসিত কাশ্মীরের বিরোধী নেতারা এই মন্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছেন।

এমন কী মিরওয়াইজ ওমর ফারুকের মতো বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারাও বলছেন, সেনাবাহিনীর এই বক্তব্যই প্রমাণ করে দিচ্ছে কাশ্মীরে রাজনৈতিক সমাধান আশু দরকার।

কাশ্মীরে গত দেড় মাস ধরে চলা তীব্র সহিংসতা সামলাতে সামরিক পন্থা যে কাজে আসছে না, সেনাবাহিনীর এই বক্তব্যে তারও ইঙ্গিত আছে বলে কাশ্মীর বিশেষজ্ঞরা কেউ কেউ মনে করছেন।
কাশ্মীর উপত্যকায় বা সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণরেখায় বিপুল সংখ্যক ভারতীয় সেনা স্থায়ীভাবে মোতায়েন থাকলেও সেনা কর্মকর্তারা কাশ্মীরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলছেন, এমনটা প্রায় ঘটে না বললেই চলে।

ফলে গত দেড় মাস ধরে কাশ্মীরে টানা চরম অস্থিরতার পটভূমিতে নর্দার্ন আর্মি কমান্ডার লে: জেনারেল ডি এস হুদা যখন ‘সবাইকে নিয়ে বসে’ সমাধান খোঁজার কথা বলেন, তখন তা অনেককেই অবাক করেছিল।

লে: জেনারেল হুদা সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘‘আমরা যদি সবাই সমস্যাটা স্বীকার করি এবং একসঙ্গে বসে এটা মেনে নিই যে এর সমাধান খোঁজা প্রয়োজন তাহলে হয়তো এর উত্তর পেলেও পেতে পারি।’’

‘‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে কারও কাছেই এই সঙ্কটের কোনও সহজ উত্তর নেই–তবে অনেকগুলো স্তরেই বিষয়টা দেখার আছে, কীভাবে যুবকদের এনগেজ করা যাবে, নানা রাজনৈতিক গোষ্ঠীর প্রতি কী অবস্থান হবে, সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড এখানে কী ভূমিকা পালন করবে ইত্যাদি ইত্যাদি"।

কাশ্মীরে সর্বোচ্চ আর্মি কমান্ডারের এই বক্তব্য নিয়ে শ্রীনগর বা দিল্লিতে সরকার এখনও মুখ খোলেনি, তবে কাশ্মীরের বিরোধীরা এই কথাকে প্রায় লুফে নিয়েছেন।

বিচ্ছিন্নতাবাদী হুরিয়ত নেতা মিরওয়াইজ ওমর ফারুক, যাদেরকে আলোচনায় সামিল করার ইঙ্গিত আছে সেনা কর্মকর্তার বক্তব্যে, তিনিও একটি টেক্সট মেসেজে জানিয়েছেন কাশ্মীরের জনতার ইচ্ছাকে মর্যাদা দিয়ে কাশ্মীর সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান খোঁজা যে ‘জরুরি ও অনিবার্য’ – এই মন্তব্য তারই প্রতিফলন।

এমন কী ভারত-শাসিত কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার নেতৃত্বেও বিরোধীদের একটি দল দেশের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে বলে এসেছেন, যে কথা কাশ্মীরের রাজনৈতিক নেতৃত্বের বলা উচিত ছিল, তা এখন শোনা যাচ্ছে সেনা কর্মকর্তাদের মুখে।

ওমর আবদুল্লার কথায়, ‘‘জম্মু ও কাশ্মীরের সমস্যা একটি রাজনৈতিক সমস্যা – প্রশাসনিকভাবে এর সমাধান সম্ভব নয়। একটা মানবিক সঙ্কট চাপিয়ে দিয়ে এই আন্দোলনকে দমানো যাবে না, অথচ সরকার ঠিক সেটাই করে চলেছে। কাশ্মীরে আজ টানা দেড় মাস ধরে কারফিউ চলছে, পেট্রল-ডিজেল বেচাকেনা নিষিদ্ধ, অ্যাম্বুলেন্সের চলাচল অবধি বাধা পাচ্ছে – আর তাতে আরও বেশি সংখ্যায় মানুষ রাস্তায় নেমে এসে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন"।

বস্তুত কারফিউ জারি করে, পেলেট গান বা কাঁদানে গ্যাসের শেল ব্যবহার করে এই আন্দোলনে যে রাশ টানা সম্ভব হচ্ছে না – সেনাবাহিনীর বক্তব্যে সেই ইঙ্গিতও আছে বলে মনে করছেন কাশ্মীর বিশেষজ্ঞ ও মেইনস্ট্রিম পত্রিকার সম্পাদক সুমিত চক্রবর্তী।

চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘এতদিন ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাশ্মীরে যে আন্দোলন চলছে তাতে স্পষ্ট যে স্ট্রং আর্ম পদক্ষেপ দিয়ে সেখানে কিছু করা যাবে না। এটা বোঝাই যাচ্ছে যে কাশ্মীরে পলিটিক্যাল ডায়ালগ শুরু করতেই হবে – আর সেটা সব পক্ষকে নিয়ে।’’

তবে নর্দার্ন আর্মি কমান্ডার যেভাবে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদেরও আলোচনায় সামিল করার কথা বলেছেন, তাতে সরকারের প্রচ্ছন্ন সায়ও থাকতে পারে বলে কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ মনে করছেন।
তাদের ধারণা, সেনাবাহিনীর মুখ দিয়ে সে কথা বলিয়ে সরকার হয়তো এ ব্যাপারে মানুষের মনোভাবটা আঁচ করতে চাইছে, তারপর পরিস্থিতি অনুকূল হলে সেই লক্ষ্যে হয়তো নির্দিষ্ট পদক্ষেপও দেখা যাবে।

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer