Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৫ ১৪৩১, শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

কাশ্মীর নিয়ে ভন্ডুল হতে পারে সার্কই

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:০৫, ১৮ আগস্ট ২০১৬

আপডেট: ০৪:০৫, ২০ আগস্ট ২০১৬

প্রিন্ট:

কাশ্মীর নিয়ে ভন্ডুল হতে পারে সার্কই

ঢাকা : ভারত-পাকিস্তান চলতি ছায়াযুদ্ধের জেরে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে সার্ক শীর্ষ বৈঠক। নভেম্বরে ইসলামাবাদে হওয়া এই শীর্ষ বৈঠকে ভারত আদৌ যোগ দেয় কি না, তার ওপরই নির্ভর করছে সব কিছু।

দিল্লি ও ইসলামাবাদের ছায়াযুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দু অবশ্যই সেই কাশ্মীর। চার সপ্তাহ হয়ে গেল লাগাতার কার্ফু, প্রাণহানি ও সংঘর্ষ চলছে উপত্যকায়। এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ভারত-বিরোধী প্রচার চালানোর কৌশল নিয়েছে পাকিস্তান। পাল্টা হিসাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লাল কেল্লার মঞ্চ থেকে বালুচিস্তানের প্রসঙ্গ তোলায় দ্বৈরথ নতুন মাত্রা পেয়েছে।

পাকিস্তান কালই দাবি করেছিল, বিদেশসচিব পর্যায়ে কাশ্মীর নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসুক দিল্লি। পাক বিদেশসচিব আইজাজ আহমেদ চৌধুরির এই দাবির আজ কড়া জবাব দিয়েছেন বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর। এ দিন তিনি বলেন, ইসলামাবাদে গিয়ে আলোচনায় বসতে তাঁর কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু সে আলোচনা হবে সীমান্তপারের সন্ত্রাস নিয়ে। এটাই এখন জ্বলন্ত সমস্যা। তবে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিয়ে অন্য কোনও দেশের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে না। কারণ এটা একেবারেই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ বিষয়ে পাকিস্তানের নাক গলানোর কোনও অধিকারও নেই ।

নভেম্বরে শীর্ষ বৈঠকের আগে অক্টোবরে সার্ক দেশগুলির অর্থমন্ত্রীদের সম্মেলন হওয়ার কথা। গত কালই নয়াদিল্লি সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে এই সম্মেলনে পাঠানো হবে না। কূটনৈতিক শিবিরের আশঙ্কা— ভারত এবং পাকিস্তানের সম্পর্কের এই টানাপড়েনে শেষ পর্যন্ত সার্ক শীর্ষ বৈঠকই না ভন্ডুল হয়ে যায়। কেন না সার্ক-এর নিয়ম অনুসারে গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির যে কোনও এক জন রাষ্ট্রপ্রধান উপস্থিত না-হলেই শীর্ষ বৈঠক বাতিল হয়ে যায়। এর আগে কার্গিল যুদ্ধ এবং পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ অরাজকতার জেরে ১৯৯৯ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত স্থগিত ছিল সার্ক শীর্ষ বৈঠক।

এই মুহূর্তে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, শেষ পর্যন্ত এ বারের সার্ক শীর্ষ বৈঠকে ভারত যাক বা না-যাক, ভারত-পাকিস্তানের সংঘাতের ঠেলায় নভেম্বরের ওই সম্মেলন এখনই কার্যত গুরুত্বহীন হয়ে গিয়েছে। অথচ দু’বছর আগে ক্ষমতায় আসার পরেই প্রতিবেশী নীতিকে তাঁর কূটনীতিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বার বার ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রথম গন্তব্য হিসাবেই বেছে নিয়েছিলেন নেপালকেই। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ডেকেছিলেন সার্ক দেশগুলির রাষ্ট্র নেতাদের। প্রত্যেকটি সার্ক-রাষ্ট্রে মোদী নিজে সফর করেছেন। এর আগে কাঠমান্ডুর সার্ক শীর্ষ বৈঠকে মোদী তাঁর বক্তৃতায় ঘোষণা করেছিলেন— দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক বোঝাপড়া ও যোগাযোগ আরও বাড়িয়ে গোটা অঞ্চলের সমৃদ্ধিকে নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য করিডর, সার্ক মেডিক্যাল ভিসা, টিবি এবং এডস-এর জন্য সার্ক রিজিওনাল ল্যাবরেটরি তৈরি ইত্যাদি বেশ কয়েকটি উদ্যোগের ঘোষণা করেছিলেন তিনি।

কিন্তু কেন্দ্র হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর সার্ক সংক্রান্ত উদ্যোগগুলি বাস্তবায়নের আশু সম্ভাবনা নেই। এ কথা বুঝতে পারছে নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলিও। নেপালের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী রমেশনাথ পাণ্ডের বক্তব্য, ‘‘ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের অগ্রগতি না-হওয়া পর্যন্ত আঞ্চলিক সহযোগিতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ছোট দেশগুলি পড়ে পড়ে মার খাবে।’’

তিনি আরও বলেন, নিজেদের স্বার্থেই ছোট দেশগুলির উচিত ভারত ও পাকিস্তানকে এক জায়গায় আনার চেষ্টা করা। তাঁর পরামর্শ, ‘‘সার্ক-এর বর্তমান সদর দফতর কাঠমান্ডুতে। ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে একটা সেতু বানাতে তাই নেপালই এগিয়ে আসুক।’’

ভারতের প্রাক্তন বিদেশসচিব ললিত মান সিংহের কথায়, ‘‘সার্ক-এর চার্টারেই রয়েছে যে এখানে দ্বিপাক্ষিক বিষয় তোলা যাবে না। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের জেরে বার বার প্রভাবিত হচ্ছে সার্ক।’’ তাঁর কথায়, কতটা ক্ষতি হয়েছে তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না, কারণ সে ভাবে অগ্রগতিই হয়নি কোনও বিষয়ে !  

আনন্দবাজার পত্রিকা

 

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer