Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১০ ১৪৩১, বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪

কারাগারে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন বন্দিরা

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ০২:১৬, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

কারাগারে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন বন্দিরা

ঢাকা : দীর্ঘ অপেক্ষা ও অনুসন্ধানের পর অবশেষে কারাগারে থেকেই বাইরের স্বজনদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন দেশের ৬৮ কারাগারের আটক ৭৫ হাজারের বেশি কারাবন্দী। রিপোর্ট দৈনিক জনকণ্ঠ’র 

কারাবন্দী থাকায় কয়েদি এবং বিচারাধীন বন্দীদের মাঝে সৃষ্ট হতাশা ও বিষাদগ্রস্ততা দূর, বন্দীর দর্শনার্থী সংখ্যা কমানোর পাশাপাশি কারাগারকে শুধু শাস্তির স্থান নয় সংশোধনাগার ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতেই কারা কর্তৃপক্ষ এ বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

এ লক্ষ্যে কারা কর্তৃপক্ষ ‘কারাগারে মোবাইল ফোন বুথ নির্মাণ ও পরিচালনা’ একটি নীতিমালা তৈরি করেছে। নীতিমালা ভঙ্গ করে আসামি বা ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তি কোন কথা বললে উভয়ের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলা করবে কারা কর্তৃপক্ষ। বিশ্বের প্রায় সব উন্নত দেশের কারাগারে আটক বন্দীরা মুঠোফোনে দেশে ও বিদেশে তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে পারলেও বাংলাদেশে উদ্যোগ এই প্রথম। এজন্য কারাগারে বিশেষ মোবাইল ফোন বুথ স্থাপন করা হবে।

পাইলট প্রকল্প হিসেবে সরকার গৃহীত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে দেশে প্রথমবারের মতো কারাবন্দী বিচারাধীন ও কয়েদিরা তাদের স্বজনদের সঙ্গে নির্দিষ্ট দিন পরপর মোবাইল ফোনে নির্দিষ্ট সময় কথা বলতে পারবেন। নতুন এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে কারাবন্দীরা তাদের সন্তান, মা-বাবা কিংবা স্ত্রী ও স্বজনদের সঙ্গে ভাগ করতে পারবেন তাদের সুখ-দুঃখের নানা কথা। অপর প্রান্তের স্বজনরাও নিমিষেই জানতে পারবেন আটক স্বজনের সর্বশেষ খবর। প্রতি বন্দী ১৫ মিনিট পর্যন্ত কথা বলতে পারবেন। শুধু স্থানীয় নম্বরে ও আটক দেশী বন্দীরা কথা বলার এ সুযোগ পাবেন। তবে বিদেশী বন্দীরা শর্তসাপেক্ষে দূতাবাসের নির্দিষ্ট নম্বরে কথা বলতে পারবেন।

প্রাথমিকভাবে পাইলট প্রকল্প হিসেবে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে আটক বন্দীরা এ সুযোগ পাবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। কারাসূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে এ টু আই প্রকল্প থেকে ২৫ লাখ টাকা কারা অধিদফতরকে প্রদান করা হয়েছে। পাইলট প্রকল্পটি সফল হলে পরবর্তীতে দেশের সকল কারাগারে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে।

কারাবন্দীদের মানবিক দিক বিবেচনায় দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ নির্দেশে কারা প্রশাসনের উদ্যোগে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বর্তমানে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য চূড়ান্ত অনুমোদন পর্যায়ে রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংসদীয় কমিটির অনুমোদনের পরপরই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের “এ টু আই” প্রকল্পের মাধ্যমে উদ্যোগটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করবে কারা অধিদফতর।

কারাসুত্র জানায়, পাইলট প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় করা হবে ২৫ লাখ টাকা। যার অর্থ প্রদান করবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। অপর একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও কারা অধিদফতর এ বিষয়ে কয়েকদফা আলোচনা শেষে নির্দিষ্ট অর্থ প্রদান করতে সম্মতি জ্ঞাপন করেছে। এজন্য কারা প্রশাসন বিশেষ এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে তাদের প্রস্তুতির কাজ চূড়ান্তভাবে সম্পন্ন করেছে।

কারাসুত্রে জানা গেছে, কারাবন্দীদের কথা বলা নিয়ে কারা অধিদফতরের উদ্যোগে একটি নীতিমালা তৈরি করা হয় এবং কারা কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অনেকদূর এগিয়ে যায়। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকে এ উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় বলে মতামত দেয়ায় প্রকল্পটির কাজ প্রাথমিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়।

এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ১০ এপ্রিল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বন্দীদের মানবিক দিক বিবেচনায় বিশেষ উদ্যোগ হিসেবে মোবাইল ফোনে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার ব্যবস্থা করা হবে বলে ঘোষণা দেন। এরই প্রেক্ষিতে কারা অধিদফতর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি প্রদান করে। এরপর কারা প্রশাসন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক্সেস টু ইনফরমেশন (এ টু আই) প্রকল্পের মাধ্যমে কয়েক দফায় বৈঠক করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে।

কারাসূত্র জানায়, আদালতের নির্দেশে আটক ঘোষিত হওয়ার পর কারাগারে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্দীকে এ সুবিধা গ্রহণের জন্য তার আত্মীয় বা অভিভাবক হিসেবে ২ জনের মোবাইল নম্বর প্রদান করতে হবে। আটককালীন ঐ ২ নম্বরেই কেবল মোবাইল ফোনে কথা বলতে পারবেন বন্দীরা। তবে কারা নিরাপত্তা তথা জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার মতো কোন কথা বলা বা যে কোন ধরনের ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করলে কারাবন্দীর শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রতি বন্দী ১৫ মিনিট পর্যন্ত কথা বলতে পারবেন। শুধু স্থানীয় নম্বরে ও আটক দেশী বন্দীরা কথা বলার এ সুযোগ পাবেন। তবে বিদেশী বন্দীরা শর্তসাপেক্ষে দূতাবাসের নির্দিষ্ট নম্বরে কথা বলতে পারবেন। অবশ্য এজন্য দূতাবাসের লিখিত অনুমতি নিতে হবে সংশ্লিষ্ট বন্দীকে।

মোবাইল ফোনে কথা বলার মাধ্যমে কারাভ্যন্তরীণ স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে না। প্রিয় সন্তানকে একনজর দেখার জন্য বৃদ্ধ বাবা-মাকে অতি দূর থেকে আর কষ্ট করে দেখা করতে কারাফটকে আসতে হবে না। শ্রম ও সময় বাঁচবে বন্দীর আত্মীয়ের। প্রতিমাসের নির্দিষ্ট তারিখে বন্দীর ধরন বুঝে একবার বা কোন কোন ক্ষেত্রে একাধিকবার ফোনে কথা বলার সুযোগ দেয়া হবে। খবরটি অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি হতে যাচ্ছে। কারাগারে বসেই মোবাইল ফোনে কথা বলার পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষ। কারাগারকে শুধু শাস্তির স্থান নয় সংশোধনাগার ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতেই কারা কর্তৃপক্ষ এ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।

বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, নির্দিষ্ট কয়েক প্রকার বন্দী ছাড়া সারাদেশে আটক প্রায় ৭৫ হাজারের বেশি বন্দী কথা বলার সুযোগ পাবেন। এ লক্ষ্যে কারা কর্তৃপক্ষ ‘কারাগারে মোবাইল ফোন বুথ নির্মাণ ও পরিচালনা’ নামে একটি নীতিমালা তৈরি করেছে। সরকারের নীতি অনুযায়ী ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশ হিসেবে ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা দেশের সাধারণ মানুষের ন্যায় কারাবন্দী নাগরিকদের হাতের নাগালে সহজলভ্য করাই এর অন্যতম লক্ষ্য। কারাবন্দীর মাঝে হতাশা ও বিষাদগ্রস্ততা তৈরি হয়। এতে অনেকেই আত্মহত্যা করতে চায় বা পলায়ন প্রবণতার দিকে ঝুঁকে পড়ে। এই বিষাদগ্রস্ততা দূর করে বন্দীদের মাঝে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য স্বজনের সঙ্গে নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর কথা বলতে পারলে তা দূর হতে পারে চিন্তা করে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, আদালত কর্তৃক বা সরকার ঘোষিত কোন শীর্ষ সন্ত্রাসী এবং অপহরণ ও চাঁদাবাজি মামলায় অভিযুক্ত কোন ব্যক্তি মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুযোগ পাবেন না। একজন বন্দী সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট কথা বলতে পারবেন। মোবাইল ফোনে বলা সকল কথা রেকর্ড করা হবে। সকল ভয়েস কলের মূল্য স্বাভাবিক কলের ন্যায় হবে। কথা বলার সময় কোন বন্দী অবোধগম্য বা সাংকেতিক ভাষায় কথা বলবে না, সকল কলের রেজিস্টার সংগ্রহ করবে সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষ।

রেকর্ডকৃত ভয়েস ডাটা পরবর্তী ১ মাস কারা কর্তৃপক্ষ সংরক্ষণ করবে। তবে কারিগরি ত্রুটি বা যে কোন কারণে কথা রেকর্ড করতে সমস্যার সৃষ্টি হলে উক্ত কারাগারে এ সেবা প্রদান কার্যক্রম বন্ধ রাখা হবে। যে ফোনে বন্দী কথা বলবে সেই ফোনে শুধু আউটগোয়িং সুবিধা থাকবে সকল প্রকার ইনকামিং সুবিধা ব্লক করা থাকবে। এছাড়া ফোন কল ছাড়া এসএমএম, ইন্টারনেট ডাটা ব্যবহারসহ অন্যান্য সুবিধা বহাল থাকবে। ফলে কোন লোক এ ফোনে কল করতে বা মেসেজ পাঠাতে পারবে না।

কারা নিরাপত্তা রক্ষায় ডিউটি অফিসার বা জেলার, সুপার কর্তৃক সিস্টেমের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে যে কোন বন্দীর লাইভ কল বা সরাসরি কথোপকথন যে কোন সময় বুথ নম্বর ভিত্তিক শোনা ও প্রয়োজনে কল বাতিল করতে পারবেন। ফলে সন্দেহজনক যে কোন কথা বা সংকেত পাওয়ামাত্রই কথা বলা বন্ধ করা সহজ হবে। মোবাইল ফোনে কথা বলার আগেই এই ফোনটি যে কারাগার থেকে করা হয়েছে অপর প্রান্তের ব্যক্তি তা বুঝতে কারা সংশ্লিষ্ট ভয়েস মেসেজ আকারে ব্যাকগ্রাউন্ড সংযোজন করা হবে এবং সকল কথা যে রেকর্ড ও মনিটর করা হচ্ছে তা বলা হবে। কোন বিদেশী বা অস্বাভাবিক নম্বরে কথা বলা যাবে না। এজন্য শুধু দেশী নম্বরে কথা বলতে পারবেন। তবে বিদেশী বন্দীদের ক্ষেত্রে অনুমতি সাপেক্ষে শুধু নির্দিষ্ট দূতাবাসে ফোন করতে পারবেন।

প্রতিটি বন্দীকে মোবাইল ফোনে কথা বলার জন্য কারাগার কর্তৃপক্ষ তাকে ২টি পিন নম্বর সরবরাহ করবে। যা ব্যবহার করেই বন্দীর কেবল ফোন করা সম্ভব হবে। পিন নম্বর হারিয়ে গেলে কোনক্রমেই কথা বলা সম্ভব হবে না। একজন কারাগারে প্রবেশের পর পর প্রদেয় দুটি নাম্বারের লোকের সঙ্গে তার সম্পর্কের ধরন কি তা উল্লেখ করতে হবে। পাশাপাশি উক্ত ব্যক্তির সঙ্গে বন্দী কথা বলতে চাইলে তার কোন আপত্তি নেই এ মর্মে তাদের কাছ থেকে প্রত্যয়ন এনে কারা কর্তৃপক্ষকে জমা দিতে হবে। এর পরই কেবল মোবাইল ফোনে কথা বলতে পারবেন বন্দী।

উল্লেখ্য, বন্দী প্রদত্ত দুটি নম্বর প্রতি ৬ মাস অন্তর কারা কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদনের মাধ্যমে পরিবর্তনের সুযোগ পাবেন। ফিক্সড ডায়ালিং নম্বর সুবিধা ব্যবহার করে ওই টেলিফোন সেটের মাধ্যমে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট নম্বরে কল করার ব্যবস্থা নেয়া হবে। ফলে ফোন থেকে কারাগারের তালিকাভুক্ত নম্বর ছাড়া অন্য কোন নম্বরে কল করা সম্ভব হবে না। নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি কর্তৃক ওই মোবাইল সেটে কল ফরওয়ার্ডিং, কনফারেন্স কল বা থ্রিওয়ে কল সুবিধা ব্লক থাকবে।

মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কোন বন্দী গণমাধ্যমে সাক্ষাতকার প্রদান করতে পারবে না। এমনকি কোন গণমাধ্যম এ সাক্ষাতকার প্রচার করাও জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা অনুযায়ী নিষিদ্ধ থাকবে। মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় এমন কোন কথা বলা যাবে না যাতে কারাগার তথা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্ন ঘটে। এক্ষেত্রে কোন প্রকার তথ্য আদান-প্রদান করলে আটক বন্দী ও অপর প্রান্তে অবস্থানরত ব্যক্তি তার বা উভয়ের সহযোগী ব্যক্তির বিরুদ্ধে কারা কর্তৃপক্ষ ফৌজদারি আইনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

কিভাবে ফোন বুথ গঠন ও স্থাপন করা হবে ॥ ফোন বুথ গঠন ও স্থাপন সম্পর্কে নীতিমালায় বলা হয়েছে, সাক্ষাত কক্ষের মতো ৩ দিক সাদা গ্লাসযুক্ত একটি স্বচ্ছ ফাইবার কাচের ঘর বুথ হিসেবে ব্যবহার করা হবে। এতে কারাগার বুঝে প্রয়োজনীয়সংখ্যক বুথ তৈরি করা হবে। মোবাইল ফোন ব্যবহারের পরিবর্তে সিমকার্ড সুবিধাযুক্ত ফিক্সড ল্যান্ডফোন ব্যবহার করা হবে।

প্রতি ৫০০ বন্দীর জন্য একটি বুথ তৈরি করা হবে। পুরুষ ও মহিলা বন্দীর জন্য কথা বলার পৃথক কক্ষ বা বুথ থাকবে। সকাল নয়টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত কথা বলার সুযোগ পাবেন তবে মধ্যাহ্ন বিরতির জন্য দুপুর বারোটা থেকে একটা পর্যন্ত কথা বলা বন্ধ থাকবে। বিশেষ দিবসে বা অন্য কোন প্রয়োজনবোধে সিনিয়র জেল সুপার বা জেল সুপার পূর্বানুমতি সাপেক্ষে এ সময়ের হ্রাস বা বৃদ্ধি করতে পারবে ন। কোন বিশেষ কারণে এ সুবিধা বন্ধ থাকলে তা কারা কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট বন্দী ও দর্শনার্থীকে জানিয়ে দেবেন।

মোবাইল ফোনে কথা বলতে হলে প্রতিটি বন্দীকে একদিন আগে থেকেই কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিতে হবে এবং সেজন্য সিরিয়াল নেবেন। তবে ওই বন্দীর কথা বলতে চাইলে তার প্রিজনার্স ক্যাশ অর্থাৎ পিসিতে প্রয়োজনীয় অর্থ থাকতে হবে। অন্যথায় ফোন করতে পারবেন না। সার্বিক বিবেচনায় বন্দীকে একটি নির্ধারিত তারিখ, সময় ও বুথ নম্বর কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেবেন।

প্রতি বন্দী ২টি নম্বরে সর্বসাকুল্যে ১৫ মিনিট কথা বলতে পারবেন। এজন্য ওই বন্দী দায়িত্বরত ব্যক্তিকে কোন ফোন নম্বরে কত মিনিট কথা বলবেন তা জানিয়ে দেবেন। তবে একজন হাজতি বন্দীর ক্ষেত্রে ১৫ দিন পর পর এবং সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি বন্দীর ক্ষেত্রে প্রতি একমাসে একবার কথা বলার সুযোগ পাবেন।

নিকট আত্মীয়ের মৃত্যু বা গুরুতর অসুস্থতা ইত্যাদি যুক্তিসঙ্গত কারণে বন্দীর লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে বর্ণিত নিয়মের বাইরেও জেল সুপার বা জেলার কথা বলার সুযোগ দিতে পারবেন। কল রেজিস্টারে সকল তথ্য লেখা থাকবে যেখানে বন্দী ও অপারেটর উভয়ের স্বাক্ষর থাকবে। ওই মোবাইল ফোনের যদি কোন প্রকার অপব্যবহার করা হয় সেজন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা কর্মচারী দায়ী থাকবেন।

বন্দীদের প্রতি দেয়া নির্দেশাবলী সম্পর্কে বলা হয়েছে, পূর্ব নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে বন্দী যদি কথা বলতে না চান তাহলে কারা কর্তৃপক্ষকে আগে থেকেই জানাতে হবে। পরবর্তী সময়ে তিনি কথা বলতে পারবেন। নির্দিষ্ট ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময়ে কথা বলতে না পারলে ঐ দিন সময় থাকা সাপেক্ষে সবার কথা বলা শেষ হলে ইচ্ছে হলে তিনি কথা বলতে পারবেন।

ফোন করার সময় কোন ব্যক্তি চিৎকার করা, বা উচ্চৈঃস্বরে কথা বলা, কাউকে হুমকি দেয়া বা ভীতি প্রদর্শন করা, গালিগালাজ বা অশালীন ভাষা ব্যবহার করতে পারবেন না। কোন বিদেশী বন্দী যৌক্তিক কারণে শুধু দূতাবাস বা কনস্যুলেটে কথা বলতে পারবেন। একজন বন্দী কারাগারে আগমনের পর যত দ্রুত সম্ভব তার পরিচিত ২ ব্যক্তির নাম ও নম্বর প্রদান করবেন। কারা কর্তৃপক্ষকে কথা বলার বুথে সকল কথা রেকর্ড করা হচ্ছে তা বড় আকারে লিখে এবং মোবাইল ফোনে কথা বলার নীতিমালা বুথে দৃশ্যমান আকারে সাঁটিয়ে দিতে হবে, যাতে কেউ নিয়ম ভঙ্গ না করে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) আব্দুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ কারাগারকে সংশোধনাগার হিসেবে প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট। বর্তমানে জনকল্যাণে ও জনস্বার্থে কারাগারকে পরিচালনা করা হচ্ছে। কারা বিভাগের কার্যক্রম সহজীকরণের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বন্দীদের মোবাইল ফোনে কথা বলার সুযোগ প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক্সেস টু ইনফরমেশন (এ টু আই) প্রকল্পের আওতায় উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এটি বর্তমানে চূড়ান্ত অনুমোদনের পর্যায়ে রয়েছে। এর ফলে কারাগারের বন্দীদের জীবনমান বর্তমানের চেয়ে আরও উন্নত হবে। পাইলট প্রকল্প হিসেবে এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫ লক্ষ টাকা। যার অর্থ প্রদান করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ টু আই প্রকল্প থেকে। প্রাথমিকভাবে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারের বন্দীরা এ সুযোগ পাবেন। এ জন্য প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। পরে সফল হলে পর্যায়ক্রমে দেশের সকল কারাগারেই এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে।

উদ্যোগটি বাস্তবায়নে নিরাপত্তার বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে অনেক যাচাই-বাছাই শেষে এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। কারাগারকে সংশোধনাগারে পরিণত করার পূর্বশর্ত হলো বন্দীদের মাঝে হতাশা এবং মানসিক অশান্তি দূর করা। এ লক্ষ্যে কারাগারের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কারাবন্দীদের সঙ্গে তার স্বজনের কথা বলা বা নিয়মিত যোগাযোগ করানোই এর মূল উদ্দেশ্য। নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিটি বন্দীর কথা রেকর্ড করা হবে।

প্রতি বন্দী তার দেয়া দুটি নম্বরে সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট পর্যন্ত কথা বলতে পারবেন। যার অর্থ তার প্রিজনার্স ক্যাশে (পিসি) থাকতে হবে। হাজতির ক্ষেত্রে ১৫ দিন ও কয়েদিদের ক্ষেত্রে ৩০ দিন পরপর কথা বলার সুযোগ দেয়া হবে। এতে করে বন্দীদের মাঝে হতাশা ও বিষাদগ্রস্ততা দূর হবে এবং বন্দীদের দর্শনার্থী সংখ্যা কমবে যার কারণে কারাগারে শৃঙ্খলা আরও প্রতিষ্ঠিত হবে।

তবে বন্দী কারা নিরাপত্তা তথা জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার মতো কোন কথা বলা বা যে কোন ধরনের ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। ফলে তার ও অপর প্রান্তের লোকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। কারাগারকে শুধু শাস্তির স্থান নয় সংশোধনাগার ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতেই কারা কর্তৃপক্ষ এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। দৈনিক জনকণ্ঠ

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer