Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৪ ১৪৩০, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

কাবুলে শিশুদের জন্য ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:১১, ২৮ মে ২০১৮

আপডেট: ০১:৩০, ২৯ মে ২০১৮

প্রিন্ট:

কাবুলে শিশুদের জন্য ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি

ঢাকা : নীল রঙের বাসের দরোজা খোলা মাত্রই বেশ কিছু বাচ্চা বই পেতে হুড়োহুড়ি শুরু করে। কার আগে কে বই নেবে এই নিয়ে এসব বাচ্চা উত্তেজনায় অস্থির হয়ে পড়ে। আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে শিশুদের জন্যে এই প্রথম ভ্রাম্যমান লাইব্রেরি চালু করা হয়েছে।

চারমাগজ নামের ভ্রাম্যমান লাইব্রেরিটি কাবুলের ব্যস্ত রাস্তাগুলোতে ছুটে চলে। একটি গণপরিবহণকে ভ্রাম্যমান লাইব্রেরীতে পরিণত করা হয়েছে।

ছাত্র-ছাত্রী ও পথশিশুরা এই লাইব্রেরিতে ঢুকে শিশুদের বই পড়তে পারে। এই লাইব্রেরী কয়েকটি এলাকার বাড়ির কাছে অবস্থান করে যেন শিশুরা সেখানে যেতে পারে।

তালেবান ও ইসলামিক স্টেট দুটি সংগঠনই কাবুলে হামলা জোরদার করেছে। এতে বেসামরিক লোকদের মূল্য দিতে হচ্ছে। অনেক বাবা-মা সংঘর্ষ সহিংসতা ও রক্তপাত দেখে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে। অনেকে প্রকাশ্যে তাদের সন্তানদের আনতে চায় না। কিন্তু ভ্রাম্যমান এই লাইব্রেরী আপাতভাবে সে দৃশ্যপট পালটে দিয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ৩শ’ শিশু এই লাইব্রেরি ব্যবহার করে। কাবুলে এটি একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা।

রাষ্ট্র পরিচালিত একটি বাস কোম্পানি থেকে গাড়িটি ভাড়া নেয়া হয়েছে। সরকারি ভবন, প্রধান সড়ক ও অন্যান্য জনাকীর্ণ এলাকাগুলো এড়িয়ে সতর্কভাবে এটি তার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ওই স্থানগুলোতেই জঙ্গিরা হামলা চালায় বেশি। তিন স্বেচ্ছাসেবীর একজন শিশুদের বলছেন, ‘বাচ্চারা, ছেলেরা পেছনে ও মেয়েরা সামনে বসবে। এটা এই আয়োজনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

তিনি বইগুলো সেলফ থেকে নিয়ে হাতে হাতে বাচ্চাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। সামনের জন পেছনের জনকে দিচ্ছে, সে তার পেছনের জনকে। এভাবে পিছনের সারিতে বসা বাচ্চাদের কাছেও বই পৌঁছে যাচ্ছে।

গতানুগতিক লাইব্রেরীর মতোই এখানে গল্পগুজব ও উঁচু আওয়াজে কথা বলা নিষেধ। বাচ্চারা কার্পেট পাতা মেঝেতে অথবা ডেস্কে বসে বই পড়ছে। আফগান প্রকাশকরা লাইব্রেরিটিতে ৬শ’ বই অনুদান দিয়েছে।

১৩ বছর বয়সী জাহরা বলে, ‘আমি সপ্তাহে একদিন বই পড়তে এই বাসে আসি।’
শিশুটি আরো বলে, ‘আজকে আমি স্বাস্থ্য কিভাবে আরো ভাল করা যায় তা পড়ছি। আমার কি করা উচিত আর কি খাওয়া উচিত, তা পড়ছি।’

জাহরা জানায়, আমি বাড়ি গিয়ে আমার ভাইবোনদের আমি কি পড়লাম তা বলি। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাশ করা ফ্রেশতা করিম ফেব্রুয়ারি মাসে বাসটি চালু করেন। তিনি আফগান শিশুদের গল্পের বই পড়তে ও গল্প বলতে সক্ষম করে তোলার শপথ নিয়েছেন। তিনি ছেলেবেলায় এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিলেন।

করিম (২৬) পাকিস্তানের একটি শরণার্থী শিবিরে বেড়ে উঠেছেন। তালেবান সরকারের পতনের পর ২০০২ সালে তিনি আফগানিস্তানে ফিরে আসেন। এরপর কাবুলে স্নাতক শেষ করে স্কলারশিপ নিয়ে জননীতি বিষয়ে মাস্টার্স অধ্যয়নের জন্য অক্সফোর্ড যান। করিম বলেন, ‘আমি শিশু থাকাকালে লাইব্রেরিতে যেতে পারিনি। আমি যখন শিশু ছিলাম, স্কুলে আমাদের বসার জন্য চেয়ারও ছিল না। আমরা মেঝেতে বসে ক্লাশ করতাম।’

করিম বলেন, লাইব্রেরী বাসটি সপ্তাহব্যাপী স্কুলের কাছে, পার্কে অথবা এতিমখানায় থামে। এতে সুবিধা বঞ্চিত শিশুরা লাইব্রেরী ব্যবহারের সুযোগ পায়। এটা আফগানিস্তানের নিরক্ষরতার নিম্ন হারকে কিছুটা এগিয়ে নিতে সাহায্য করছে। আফগানিস্তানে শিক্ষিতের হার মাত্র ৩৬ শতাংশ।

কাবুলের প্রধান পাঠাগারের সাবেক কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ বলেন, আফগানিস্তানের অধিকাংশ সরকারি স্কুলে লাইব্রেরি নেই। তিনি এখন অলাভজনক একটি সংগঠনে কাজ করছেন। সংগঠনটি শিশুদের জন্য বই প্রকাশ করে।

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer