Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৪ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪

কাঁঠালিয়ায় চাই-বুছনা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগর

মোঃ আমিনুল ইসলাম, ঝালকাঠি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০১:২৭, ১৩ আগস্ট ২০১৮

আপডেট: ০১:৩০, ১৩ আগস্ট ২০১৮

প্রিন্ট:

কাঁঠালিয়ায় চাই-বুছনা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগর

ছবি : বহুমাত্রিক.কম

ঝালকাঠি : ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়া উপজেলার চেচঁরীরামপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ চেচঁরী গ্রাম চাই-বুছনার জন্য বিখ্যাত। এ এলাকায় এখন অন্যান্য ব্যবসার পাশাপাশি চাই- বুছনা কারিগরেরা পিছিয়ে নেই কোন ক্ষেত্রে। তাঁদের প্রচেষ্টা চলছে জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে।

এখন শ্রাবণ মাস। খাল-বিল, নদী-নালায় নতুন পানি উঠতে শুরু করেছে। সেই সাথে দেশীয় মাছের প্রজনন হওয়ায় মাছের সংখ্যাও বাড়ছে। দেশীয় মাছের স্বাদ নিতে গ্রামের খালে এবং উম্মুক্ত জলাশয়ে চাই-বুছনা (এক ধরণের মাছ ধরার ফাঁদ) পেতে মাছ ধরছে গ্রামের মৎস্যজীবি, হতদরিদ্র সহ বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ। তাই চাহিদার সামাল দিতে এবং মৌসুমী আয়ে চাই-বুছনা তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছে কারিগররা। শুধু ঘরের কর্তা ব্যক্তি নয়, বুনন কাজে সহযোগিতা করছে স্ত্রী, পুত্র, ভাই, বোন, বৃদ্ধ মা ও বাবা। তাঁদের সহযোগিতায় অনেকটাই এগিয়ে যায় এ বুননের কাজ।

এ উপজেলার কারিগররা বিভিন্ন এনজিও ও ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে আবার কেউ কেউ বড় ব্যবসায়ীদের কাছ খেকে দাদন নিয়ে ১৫০/১৭০ টাকা করে প্রতিটি বাঁশ কিনে তিনটি চাই অথবা দু’টি বুছনা তৈরী করে থাকেন। প্রতিটি চাই গড়াসহ বাজারে বিক্রি করেন ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা। আর দিয়েই চলে অনেকের সংসার। ছেলে মেয়েদের লেখা- পড়া সহ পারিবারিক বিভিন্ন ব্যয়। উপজেলার জমাদ্দার হাটে প্রতি সপ্তাহের রবি ও বুধবার বিকেলে বসে চাই-বুছনা বিক্রির হাট। উপজেলার আশপাশের এলাকা থেকেও আসে বিক্রেতারা।

চাই-বুছনা বুননের কারিগর উপজেলার দক্ষিণ চেচঁরী গ্রামের কবির হোসেন জানান প্রতি বছর মাঘ মাসে চোখের দৃষ্টিতে অনুমান করে ১৫০ থেকে ১শ ৭০ টাকার প্রতিটি বাঁশ কিনতে হয়। এরপর বাঁশ সাইজ মত কেটে পানিতে ভিজিয়ে রেখে শলা তৈরী করতে হয়। প্রতি সপ্তাহের ৩ দিন বাঁশ থেকে শলা তৈরী করে এবং বাকি ৪ দিন দিনমজুরি দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। প্রতিটি বুছনা তৈরীতে ২শ ২০ থেকে ২শ ৫০ টি শলা লাগে। একটি ভালো বাঁশ থেকে ৩ টি বুছনা তৈরী করা যায়। মাঘ মাস থেকে এ কাজ শুরু করেছে আশ্বিন মাস পর্যন্ত চলবে। এ কাজে সহযোগিতা করছে ভাই জামাল।

উপজেলার বটতলা বাজারে প্রতি সপ্তাহের শনি ও বুধবারে ১০০ টি চাই নিয়ে বিক্রি করি। আমার কাছ থেকে অন্য বিক্রেতারা পাইকারী কিনে নেয়। সংসারের খরচ, পিতা-মাতার চিকিৎসা খরচ, ছেলে-মেয়ের পড়াশুনার খরচ এবং ঋণ শোধ করে সব মিলিয়ে বছরের আয়-ব্যয় সমান সমান থাকে। সরকারী সহায়তায় সহজ শর্তে এবং বিনা সুদে ঋণ পেলে একটু ভালোভাবে জীবন কাটানোর আশা প্রকাশ করেন কবির হোসেন ও তার পরিবার। শুধু কবির নন, এভাবে অনেক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছে এ মৌসূমী আয় থেকে। বেচা বিক্রিও করছে কারিগররা।

কথা হয় বামনা থেকে আসা চাই বিক্রেতা তাওহিদ মিয়ার সাথে। তিনি জানান, প্রতিটি চাই গড়াসহ ১২০/১২৫ টাকা করে বিক্রি করছে। গড়া বাদে বিক্রি করছে ১শ টাকায়। নিজে চাই না বানিয়ে কারিগরদের কাছ থেকে কিনে এনে বাণিজ্যিক ভাবে বিক্রি করে সংসার ও ছেলে-মেয়ের লেখা- পড়ার খরচ চালানোর জন্য এ মৌসুমী ব্যবসা করেন বলে জানান তিনি।

উপজেলার দক্ষিন চেঁচরী গ্রামে চাই বুছনা তৈরীর কারিগর মোঃ জাকির হোসেন জানান, গ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে বাঁশ কিনে চাই বুছনা বানানোর কাজ করি। ১৫০/১৭৫ টাকার একটি বাঁশে ২ টি চাই অথবা ১টি বুছনা তৈরী করা সম্ভব হয়। ১টি বুছনা তৈরীতে পূর্ণ ১ দিন সময় লাগে। একা কাজ করে আগাতে পারিনা। তাই স্ত্রী ও স্কুলগামী ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী সুমি ও এ কাজে সহায়তা করে। একটি চাই সর্বোচ্চ ২ শত টাকায় এবং বুছনা ৪৫০ থেকে ৫শত টাকায় বিক্রি করেন। চাহিদা মত বাঁশ কিনতে না পারা এবং চাই বুনানোর সুতোর দাম বৃদ্ধি বলে হতাশা প্রকাশ করেন মোঃ জাকির হোসেন।

স্থানীয় শিক্ষানুরাগী অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আলহাজ¦ মো. রেজাউল করিম জানান, চাই-বুছনা তৈরী কুটির শিল্পের আওতায় পড়ে। আর্থিক সমস্যার কারণে জেগে উঠতে পারছে না এ শিল্প। সরকারী সহায়তা পেলে তারা আরো স্বচ্ছল হতে পারত।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer