Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৯ ১৪৩১, বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪

কলেজ ছাত্রী বর্ণালী হত্যা : দন্ডপ্রাপ্ত ৪ আসামির আত্মসমর্পণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১:৩৬, ৯ অক্টোবর ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

কলেজ ছাত্রী বর্ণালী হত্যা : দন্ডপ্রাপ্ত ৪ আসামির আত্মসমর্পণ

খুলনা : বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার চিত্রা গ্রামে বহুলালোচিত চাঞ্চল্যকর খুলনা কমার্স কলেজ ছাত্রী বর্ণালী ঘোষ গণধর্ষণ ও এসিড দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা মামলার যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত ৪ আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে।

রোববার খুলনা বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের তারা আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালতের বিচারক এম এ রব হাওলাদার তাদের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়ছেন।

যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত ৪ আসামি হলেন বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার চিত্রা গ্রামের আকর হোসেনের ছেলে হাসান আলি শেখ (২৫), আব্দুল মান্নান মুন্সীর ছেলে মাহবুবুর রহমান মুন্সী (২২), রনসেন গ্রামের আব্দুল খালেক শেখের ছেলে নাহিদ শেখ (২৫) ও বুজবুনিয়া গ্রামের আব্দুর রউফ ইজারাদারের ছেলে নাজমুল ইজারাদার (২৪)।

২০১০ সালের ৩০ আগস্ট তদকালীন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. সিকান্দার আলী বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার রাজনগর গ্রামের মো. কামাল হোসেন হাওলাদার (৩২) ও চিত্রা গ্রামের আব্দুল মজিদ শেখের ছেলে মোক্তার হোসেন মুক্তকে (২৫) ফাঁসি দিয়েছে দিয়েছিলেন।

অপর ৪ আসামি হাসান, মাহাবুব, নাহিদ ও নাজমুলকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়েছিল। এ মামলার বাকি ৬ আসামিকে বেকসুর খালাস পায়। রায়ের পর সকল আসামি উচ্চ আদালতে আপিল করেন। এমামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. কামাল হোসেন হাওলাদার কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছেন। অপর আসামি মোক্তার হোসেন মুক্তকে মৃত্যুদন্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে উচ্চ আদালত। যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত ৪ আসামির ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।

আদালতের উচ্চমান বেঞ্চ সহকারী শেখ জাহিদুল ইসলাম নথির বরাত দিয়ে জানান, মামলার আসামি রাজুর সঙ্গে বর্ণালীর সম্পর্কের জের ধরে ২০০৭ সালের ৩০ জুন রাতে আসামি মুনমুন বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে আসে বর্ণালী ঘোষকে। এরপর বর্ণালীকে মুখ বেধে নিয়ে যাওয়া হয় মাহবুবের ব্যাটারীর দোকানে। সেখানে তাকে গণধর্ষণ করে অজ্ঞান অবস্থায় ফেলে রাখা হয়। ধর্ষণের পর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা জামিল হোসেন জামুর পরামর্শে অচেতন বর্ণালীকে নিয়ে যাওয়া হয় জলিল মুন্সির বাগানে। সেখানে বর্ণালীকে এসিড দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়।

এদিকে বর্ণালীকে না পেয়ে ৩ জুন থানায় সাধারণ ডায়েরী করে তার পিতা। কিন্তু পুলিশ কোন পদক্ষেপ নেয়নি। খোঁজাখুজির একপর্যায়ে ১১ জুন জলিল মুন্সির বাগানে কঙ্কাল দেখে বর্ণালীর বাবা বিপুল চন্দ্র ঘোষ বাদি হয়ে দুই জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন যার নং-১১। পরবর্তীতে আসামি মোক্তার হোসেন মুক্ত ধরা পড়ার পর সে আদালতে ১৬৪ ধারায় সব কথা স্বীকার করে।

এ ঘটনার পর মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সহযোগিতায় মামলার রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ। নিহতের পিতা বিপুল চন্দ্র ঘোষ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এবং এসিড আইনে পৃথক দু`টি মামলা দায়ের করেন।

নারী নির্যাতন মামলার আসামি করা হয় সুজিত কুমার ওরফে রাজু, পারভীন সুলতানা ওরফে মুনমুন, চেয়ারম্যান জামিল হাসান জামু, মোক্তার হোসেন মুক্ত, মো. কামাল হোসেন হাওলাদার, ওয়াজেদ শেখ, নাজমুল ইজাদার, নাহিদ শেখ, মাহাবুবুর রহমান মুন্সি, হাসান আলী শেখ, আকবার হোসেন আকু, মনোজ ও সুব্রত। এর মধ্যে মুক্ত, রাজু, মনোজ এসিড মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়। এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান জামিল হোসেন জামুর বিষয়টি উচ্চ আদালতের নির্দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা স্থগিত ও এসিড দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় অব্যাহতি পায়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মামলা দুটি বাগেরহাটের আদালত থেকে খুলনা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।

এসিড মামলায় ৩৬ জনের মধ্যে ২২ জনের এবং নারী নির্যাতন মামলায় ৩৬ জনের মধ্যে ১৯ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। এঘটনায় দায়েরকৃত এসিডে পোড়ানো মামলা থেকে সকল আসামীকে খালাস দেয়া হয়েছে। রায়ে হাসান, মাহবুব, নাজমুল ও নাহিদ শেখকে পৃথক দুটি ধারায় মোট এক লক্ষ দশ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয় অনাদায়ে তাদের আরো ৬ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া মাহবুব ও হাসানকে অপর একটি ধারায় অতিরিক্ত ৫ বছরের কারাদন্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুই মাসের সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়।

 

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer