ছবি-সংগৃহীত
ঢাকা: কলকাতার রবীন সন ষ্ট্রীটের সাইকো কাণ্ডে চাঞ্চল্যকর মোড়। পার্থ দের চিরকুট, ডায়েরি থেকে বেরিয়ে এসেছে নুতন তথ্য। তদন্তকারী দল মনে করছে দে-র পরিবারের সদস্যরা পরস্পর পরস্পরের প্রতি যৌনতায় লিপ্ত ছিলেন।
দিদির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল পার্থ দে। সেই সম্পর্কের আভাস পান তাদের মা। তারপরই টানাপোড়েন শুরু হয় পরিবারের। পার্থ দের হাতে লেখা ওই ডায়েরি এবং চিরকুটে যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তা পড়ে এমনটাই মনে করছে পুলিশ।
ডায়েরিতে পার্থ দে লিখেছেন, `আমার দিদি আস্তে আস্তে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে, সে ধীরে ধীরে জোর খাটাচ্ছিল। মা একটা সময় দিদিকে হিংসা করতে শুরু করে। আমরা যখন দীঘা যাই, মা হোটেলের বাথরুমে দিদিকে বিবস্ত্র করেন`।
ওই ডায়েরিতে পার্থ দে আরও লিখেছেন, `যা আমরা করেছি, তা আমাদের কাছে সঠিক। মা ভাবতেন আমি শারীরিকভাবে অক্ষম। মা ওই জন্যে আমার ঘরে একজন পরিচারিকাও রেখেছিলেন। যাতে তাঁর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করি। কিন্তু মায়ের ধারণা ভুল ছিল`।
পার্থ দের শারীরিক পরীক্ষার সময় এটা কিছুটা প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি বিকৃত মস্তিষ্কের। এই বিকৃতির পেছনে যৌনতা সংক্রান্ত বিষয়কেই দায়ী করছেন চিকিৎসকরা। শুক্রবার সরকারি হাসপাতালে পার্থ দের শারীরিক পরীক্ষার সময় মহিলা চিকিৎসককে কুপ্রস্তাব দেন তিনি। চিকিৎসককে বিবস্ত্র হওয়ার কথা বলেন তিনি। এরপরই মনোবিদদের কাছে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়ে যায়।
এদিকে, পার্থ দে’র পরিবারকে প্রতিবেশিরা চিনতেন না। কাগজওয়ালা মুখ দেখেনি। খাবার আসত বাইরে থেকে। আর প্রতিমাসে ডাস্টবিনে জমা হত টেডিবিয়ার? একাধিক অসলগ্ন ঘটনা, রহস্যের মোড়ক দে পরিবারের আনাচে কানাচে।
আঁস্তাকুড়ে পুরনো টেডিবিয়ার। থাকতেই পারে। কিন্তু, যদি বলা হয়, এই টেডিবিয়ার দিয়েই ঘেরা ছিল একটি মৃতদেহ? মনের কোণে রহস্য উঁকিঝুঁকি মারবেই। এমনই অসংখ্য রহস্যে মোড়া দে পরিবার।
প্রায় পনের বছর পাশাপাশি বসবাস। তবু প্রতিবেশির সঙ্গে হাই-হ্যালোর সম্পর্ক নেই। প্রতিদিন বাড়ির দরজায় ইংরেজি দৈনিক গুঁজে আসা কাগজওয়ালা বাড়ির কারও মুখ দেখেননি। দে পরিবারকে জড়িয়ে একের পর এক রহস্য।
পুলিস তদন্তে জানত পেরেছে, খাটে দেবযানীর কঙ্কাল ঘেরা থাকত টেডিবিয়ার দিয়ে। টেডিগুলি পুরনো হয়ে গেলে ফেলে দেওয়া হত ডাস্টবিনে। বাড়িতে রান্নার পাট ছিল না। বাইরে থেকে অর্ডার দিয়ে খাবার আনানো হত। সিকিওরিটি গার্ড মারফত সেই খাবার পৌছত ঘরে। বাইরে থেকে আনানো খাবার, দিদি দেবযানী রেঁধেছে মনে করেই খেতেন পার্থ।
রহস্য মোড়া এই জীবনযাত্রা লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে যেত আরও কয়েকদিন। যদি না, উদ্ধার হত পার্থ দে’র অরবিন্দ দে`র অগ্নিদগ্ধ দেহ। বলছে পুলিস।
তিন নম্বর রবিনসন স্ট্রিট। চার তলা বাংলোর তিন তলায় থাকত দে পরিবার। গৃহকর্ত্রী মারা গিয়েছেন আট বছর আগে। মেয়ে দেবযানীকে আর ছেলে পার্থকে নিয়ে থাকতেন অরবিন্দ দে। ছিল পোষ্য একটি কুকুরও। গত বছর অগস্টে কুকুরটি মারা যায়। আর তার পর থেকেই এপরিবারে যা যা ঘটতে থাকে তা অস্বাভাবিক তো বটেই, রীতিমতো শিউরে ওঠার মতো।
পোষ্য কুকুর মরে যাওয়ায় ভেঙে পড়েন দেবযানী। কুকুরটির সত্কার না করে মৃতদেহ রেখে দেওয়া হয় ঘরেই । আর সেই সঙ্গে, কুকুরের শোকে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেন দেবযানী।
অনাহারে থাকতে থাকতে ডিসেম্বরে মারা গেলেন দেবযানীও।
রোমহর্ষক ঘটনা প্রবাহের নতুন পর্ব শুরু হয় এবার। কেন্দ্রীয় চরিত্র- দেবযানীর ভাই পার্থ। একমাত্র সাক্ষী বাবা অরবিন্দ দে।
এক সময় বহুজাতিক সংস্থায় চাকরির সুবাদে আমেরিকায় থাকতেন পার্থ। চাকরি ছেড়ে কলকাতায় চলে আসেন মা-র মৃত্যুর পর। দিদির মৃত্যুর পর, দিদি আর প্রিয় পোষ্যের দেহ ঘরেই শুইয়ে রেখে দেন পার্থ। কেটে যায় প্রায় সাত মাস। দেহ দুটি পরিণত হয়েছে কঙ্কালে।
পুলিশকে পার্থ জানিয়েছেন, তিনি বাড়ি থেকে বেরোতেন না। প্রতি রাতে প্ল্যানচেট করতেন। বিশ্বাস করতেন, দিদির আত্মা এসেছে। আর এরপরই কঙ্কালের সামনে বসেই খাবার খেতেন তিনি। খাবার দিতেন কঙ্কালকেও।
কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পাননি বাড়ির ভিতর কী চলছে! দেবযানী আর কুকুর সম্পর্কে প্রশ্ন এলেই এড়িয়ে যেতেন বাবা-ছেলে।
পার্থ পুলিশকে জানিয়েছে, বিষয়টা ক্রমশ অসহ্য হয়ে উঠেছিল তার বাবার। বুধবার রাতে তাই গায়ে আগুন দেন তিনি। দাবি পার্থর। বাবাকে দাউ দাউ করে জ্বলতে দেখেও পার্থ বিচলিত হননি এতটুকু। বিভিন্ন ঘরের মিউজিক সিস্টেম চালিয়ে পায়চারি করছিলেন বাড়ির ভিতরেই। প্রতিবেশীদের থেকে আগুনের খবর পেয়ে এক সময় পৌছয় দমকল। তখনই সামনে আসে হাড় হিম করা এই ঘটনা।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের হাতে এসেছে অরবিন্দ দের সুইসাইড নোট। শেষ চিঠিতে তিনি লিখেছেন, স্বেচ্ছায় এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। তার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। ছেলে পার্থর উদ্দেশে তিনি বলেছেন ,``আমি চললাম। ভগবান সকলের ভাল করুন। তোমাকে ভালবাসি। ভালবাসি...ভালবাসি...ভালবাসি.``
তদন্তকারীদের সন্দেহ, মানসিক ভারসাম্যহীন পার্থ দে। এ ঘটনায় রীতিমতো তাজ্জব দে পরিবারের প্রতিবেশী থেকে আত্মীয়রা। এও কী আবার হয়?
-জিনিউজ