Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৩ ১৪৩০, বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪

ছয়চিরি দিঘী পাড়ের চড়ক পূজা ও মেলা সম্পন্ন

নূরুল মোহাইমীন মিল্টন, কমলগঞ্জ থেকে

প্রকাশিত: ০০:০৪, ১৬ এপ্রিল ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

ছয়চিরি দিঘী পাড়ের চড়ক পূজা ও মেলা সম্পন্ন

ছবি : বহুমাত্রিক.কম

মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের ছয়চিরী দিঘীর পারে প্রাচীন ঐতিহ্য লালিত চড়ক পূজা ও মেলা সম্পন্ন হয়েছে। দুইশত বছরের ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা ও মেলাকে কেন্দ্র করে হিন্দু সম্প্রদায়সহ ছয়চিরির আশেপাশের এলাকার মানুষের মধ্যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করে।

দু’দিনব্যাপী এ চড়ক পূজা ও মেলা শেষ হয় শনিবার। ঐতিহ্যবাহী চড়ক উৎসব দেখতে দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে হাজারো লোকের ঢল নামে। ছয়চিরি দিঘীর পাড়ে পুঞ্জিকা মতে প্রতিবছরের চৈত্র সংক্রান্তিতে দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে চড়ক পূজা উৎসব।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চড়ক পূজা উৎসবের কয়েকদিন পূর্ব থেকে বিভিন্ন এলাকার পূজারীর মধ্যে ৪০/৫০ জন সন্ন্যাস ধর্মে দীক্ষিত হয়ে গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিব-গৌরীসহ নৃত্যগীত সহকারে ভিক্ষাবৃত্তিতে অংশ নেন। এ ক’দিন তারা পবিত্রতার সহিত সন্যাস ব্রত পালন করে নিরামিষ ভোজি এবং সারাদিন উপবাস পালন করেন। পূজার দু’দিন পূর্বে পূজারীরা শ্মশানে গিয়ে পূজা অর্চনা করেন ও শেষে গৌরীর বিয়ে, গৌরী নাচ ও বিভিন্ন গান গেয়ে ঢাকের বাজনায় সরগরম করে গোটা এলাকা।

ছয়চিরি দিঘীর পাড়ে ভক্তরা নৃত্য করার জন্য কলাগাছ ও বাঁশের খুটি বেষ্টিত মন্ডলী তৈরী করে। পূজার প্রথম দিন নিশি রাতে তান্ত্রিক মন্ত্র ধারা কাচ পড়া দিয়ে জলন্ত ছাইয়ের (আঙ্গার) উপর মানুষরুপী কালী সেজে নৃত্য করে। অন্য ভক্তগণ নৃত্যের তালে তালে, ছন্দে ছন্দে ঢোলক, কাশি, করতাল বাঁজান। এসময় দর্শনার্থীরা জয়ধ্বনি এবং নারীদের কন্ঠে হুলুদ ধ্বনি দিতে থাকেন। জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে এই ‘কালীনাচ’ অত্যন্ত আকর্ষনীয় এবং তান্ত্রিক মন্ত্র দিয়ে ৭টি বলিছেদ (লম্বা দা) এর উপর শিব শয্যা করেন।

শিবের উপর উঠে কালী ভয়ানক এক অদ্ভুত রুপ ধারন করেন। কালীনাচ শেষ হওয়ার পর সকালে পূজারীরা পূজা করে পান বাটা দিয়ে চড়ক গাছকে নিমন্ত্রণ জানানো হলে পার্শ্ববর্তী ঐতিহাসিক ছয়চিরি দিঘী থেকে ভেসে উঠে ১০০ ফুট লম্বা চড়ক গাছ। এ গাছের চুড়া থেকে মাচা পর্যন্ত চারটি পাখার (ডানার) মতো করে বাধা হয় চারটি মোটা বাঁশ এবং তাতে যুক্ত করা হয় মোটা লম্বা রশি। আগের বছর উৎসব শেষে এই দিঘীতে ডুবিয়ে রাখা হয় চড়ক গাছ। দিঘীর পাড়ে গর্ত খুড়ে সোজা এবং খাড়া করে পোঁতা হয় এ গাছ।

গত শুক্রবার দুপুর থেকে নারী পুরুষ দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে উৎসবস্থলে। বিকেলে মন্ডলীতে বলিছেদ দিয়ে নৃত্য, শিবের নৃত্য ও কালীর নৃত্য দেখানো হয় ভক্তদের। নৃত্য শেষে ছয়চিরি দিঘীতে স্নান করে ভক্তদেরকে লোহার শিকড় শরীরের বিভিন্ন অংশে পিষ্ট (গাঁথা) করা হয়। জিহ্বা ও গলায় গেঁথে দেয়া হয়। নৃত্যের তালে তালে চড়ক গাছ ঘুরানো হয়। দেবতার পূজা-অর্চনা শেষে অপরাহ্নে মূল সন্ন্যাসী ৪ জন ভক্তের (জ্যান্ত মানুষের) পিঠে লোহার দু’টি করে বিরাট আকৃতির বড়শি গেঁথে রশিতে বেঁধে ঝুলিয়ে চড়ক গাছ ঘুরানো হয়।

শনিবার ফেরা চড়ক পূজায় দেবতার পূজা অর্চনা করা হয়। ছয়চিরি দিঘীর চার পাড়ের মধ্যে দিঘীর চতুর্পাশে চারটি চড়ক গাছ স্থাপন করে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। চড়ক পূজা উপলক্ষে মেলায় গ্রামীণ ঐতিহ্যের বিভিন্ন রকমারী জিনিসপত্রের সয়লাব ঘটে।

চড়কপূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অসমঞ্জু প্রসাদ রায় চৌধুরী জানান, রহিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের সার্বিক সহযোগিতায় চড়কপূজা ও মেলার সুন্দরভাবে সমাপ্তি ঘটে।

 

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer