ঢাকা : বাংলাদেশের চট্টগ্রামে শতবছরের বেশি সময় ধরে চলছে জব্বারের বলী খেলা। এ প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে বেশিবার জয়ী হয়েছেন যিনি তাকে সবাই চেনে দিদার বলী নামে।
গত দেড় দশক ধরে তিনি চট্টগ্রাম এলাকায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী হেসেবে বলী খেলে এসেছেন। সম্প্রতি বলী খেলা ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন ৩৩বছর বয়সী মি আলম। কি করে তিনি সেরা বলী হয়ে উঠলেন?
প্রকৃত নাম দিদারুল আলম। কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার দিদারুল আলম বলেন, বলী মানে মোটা মানুষের খেলা। সে কারণে খেলার নাম ধরে `বলী` শব্দটি প্রতিযোগীদের নামের সাথে লাগিয়ে দেয়া হয়। যেমনটি হয়েছে তার বেলাতেও।
১৯ বছর বয়সে জব্বারের বলীয় খেলার আসরে প্রথম প্রতিযোগিতা করেন দিদার বলী। তবে তারও আগে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় পহেলা বৈশাখের মেলায় বলী খেলা দেখে তার প্রথম আগ্রহ হয়। হাজার হাজার মানুষ সেখানে ভিড় করে দেখত। নিজের পরিবারে আর কেউ এই খেলার সাথে যুক্ত না থাকলেও প্রতিবেশীদের দেখে উৎসাহ পান।
"আমি মোটাসোটা ছিলাম। লেখাপড়ার মাঝে মাঝে বলী খেলা শুরু করলাম। পরে চট্টগ্রামে আব্দুল জব্বারের কুস্তি প্রতিযোগিতায় অংশ নেই। এরপর যখন প্রস্তুতি ভালো হলো তখন জব্বারের বলী-খেলায় অংশ নিলাম"।
দিদার বলী বলেন, "মানুষ একেকটা খেলা নিয়ে সাধনা করে, কষ্ট করে। অনেক আশা থাকে। আমারও একটাই আশা ছিল, সাধনা ছিল দীর্ঘ দিন যাবত কিভাবে আমি সাফল্য ধরে রাখতে পারি, চ্যাম্পিয়ন থাকতে পারি সেজন্য শারীরিক প্রস্তুতি, ব্যায়াম, খাওয়া-দাওয়া, ট্রিটমেন্ট সব করতে হয়েছে"।
কি ধরনের খাবার-দাবার খেতে হয়েছে জানতে চাইলে দিদারুল আলম বলেন, "প্রতিদিন চারটি করে কবুতর, নাহলে দুটি দেশীয় বড় মুরগী, শিং-মাছ, মিঠাপানির মাগুর মাছ, কই মাছ, ডিম এসব খেতে হয়"।
ডিম খেলে একবেলায় অন্তত দশটা করে খান তিনি।
প্রতিদিন ব্যায়ামের জন্য অন্তত দুই ঘণ্টার বেশি সময় দিয়েছেন।
"জিমনেশিয়ামে ব্যায়ামের যন্ত্র দিয়ে ব্যায়াম এবং দৌড়, এটা যেহেতু দমের খেলা। সেজন্য দৌড়াতে হয় "।
এই যাবত তাকে কোনও লড়াইতে কেউ পরাজিত করতে পারেনি বলে জানান মি আলম।
দিদার বলী নামে পরিচিতি পাওয়া মি আলম জানান, চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের অন্যান্য এলাকাতেও তিনি বলী খেলায় অংশ নিয়েছেন।
সম্প্রতি তিনি এই খেলা থেকে অবসর নেয়ার কথা জানিয়েছেন। জানালেন, এরপর থেকেই তাকে পড়তে হচ্ছে নানা প্রশ্নের মুখে। যেমন অনেকেই মনে করছেন, বিয়ের পরিকল্পনা করছেন বলে তিনি বলী খেলা ছেড়ে দিচ্ছেন।
কিন্তু মি. আলম জানালেন, বিয়ের সাথে খেলার বা অবসরে কোনও সম্পর্ক নেই। নতুনদের জায়গা করে দিতেই তার এই সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত।
৩৩ বছর বয়সী দিদারুল আলম অবশ্য বলেন, অনেক সময় খেলার সাথে সংশ্লিষ্টরাও চান নতুন কাউকে তুলে আনতে। সেটা তিনিও বুঝতে পারেন।
"বারবার যখন আমি চ্যাম্পিয়ন হই তখন কমিটিও চায় একজন নতুন খেলোয়াড় উঠে আসুক। তারা তখন কিভাবে খেলা পরিচালনা করছে আমি তো বুঝতে পারি। তাই আমি সম্মানটা নিয়েই চলে আসার চিন্তা করি"।
এ নিয়ে তার ওপর কেউ চাপ সৃষ্টি করেছে কিনা জানতে চাইলে অবশ্য তিনি বলেন, "না না আসলে আমিও চাই নতুন কেউ উঠে আসুক"।কখনও ব্যথা পেয়েছেন কী-না বা আহত হয়েছে কী-না এমন প্রশ্নে দিদার বলী বলেন, কক্সবাজারের টেকনাফে একবার বলী খেলার স্থানীয় প্রতিযোগীকে পরাজিত করার পর তাকে মারধোর করে তার সহযোগীরা এবং তিনি সেসময় আহত হয়েছিলেন। সেটাই একমাত্র ঘটনা যখন তিনি আহত হন।
এখন বলী খেলা ছেড়ে কি করতে চাইছেন?
দিদারুল আলম বলেন, মুদির দোকান রয়েছে তার সেই ব্যবসাটি চালিয়ে যাবেন। আর সুযোগ পেলে বলী খেলা পরিচালনার বা রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করবেন।
বিবিসি বাংলা