Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৩ ১৪৩০, বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪

খাদ্যাভাস

ওট নিয়ে যতো কথা

ড. আলিয়া মমতাজ

প্রকাশিত: ১১:০৯, ২৬ আগস্ট ২০১৪

আপডেট: ২২:১২, ৩০ জানুয়ারি ২০১৫

প্রিন্ট:

ওট নিয়ে যতো কথা

যুক্তরাষ্ট্র থেকে: সুসাহিত্যিক সুকুমার রায়ের রচনা শিশুতোষ হলেও তাতে স্থান পেয়েছে বৈশ্বিক চমকপ্রদ সব বিষয়াদিও। বিশ্বসভ্যতা-সংস্কৃতি, জীবনাচার, খাদ্যাভাস-এর সবকিছুর উপস্থিতি মিলবে তাঁর লেখনিতে। খাদ্যাভাস নিয়ে দেশে দেশে যে বৈচিত্র্য তাও স্পর্শ করেছেন তিনি। নীচের লেখাতে সেই পরিচয় মিলবে-

‘‘ডাল ভাত তরকারি ফলমূল শস্য,
আমিষ ও নিরামিষ, চর্ব্য ও চোষ্য,
রুটি লুচি, ভাজাভুজি, টক ঝাল মিষ্টি,
ময়রা ও পাচকের যত কিছু সৃষ্টি,
আর যাহা খায় লোকে স্বদেশে ও বিদেশে-
খুঁজে পেতে আনি খেতে- নয় বড় সিধে সে!
জল খায়, দুধ খায় যত পানীয়,
জ্যাঠাছেলে বিড়ি খায়, কান ধরে টানিও।
ফল বিনা চিঁড়ে দৈ, ফলাহার হয় তা,
জলযোগে জল খাওয়া শুধু জল নয় তা।
ব্যাঙ খায় ফরাসিরা (খেতে নয় মন্দ),
বার্মার ‘ঙাম্পিতে’ বাপরে কি গন্ধ!
মান্দ্রাজি ঝাল খেলে জ্বলে যায় কন্ঠ,
জাপানেতে খায় নাকি ফড়িঙের ঘন্ট!
আরশুলা মুখে দিয়ে সুখে খায় চীনারা,
কত কি যে খায় লোকে নাহি তার কিনারা’’

দানা জাতীয় খাবার  “ওট” নিয়ে এই লেখার অবতারণা । ওট ( বাংলা নাম সম্ভবত নাই, বৈজ্ঞানিক নাম Avena sativa ) ধান/গম পরিবারের অর্ন্তভুক্ত দানা জাতীয় শস্য, মূলত  শীতপ্রধান এলাকায় জন্মায় । ওট খুব উপকারি একটি দানা জাতীয় শস্য, এর খাদ্য হিসাবে যেমন রয়েছে অনেক গুণাগুণ  তেমনি প্রসাধণ সামগ্রীতেও  এর জুড়ি মেলা ভার। নিজেদের খাবারের জন্য এবং গৃহপালিত  পশুদের খাবারের চাহিদা পূরণের জন্য মানুষ প্রায় ৪০০০ বছর ধরে ওট চাষ করে আসছে ।

Oat_2মানুষের শরীরের প্রতিদিনের চালিকাশক্তির জন্য সুষম খাবারের গুরত্ব অপরিসীম । এই সুষম খাবারে থাকতে হবে শর্করা  জাতীয় খাবার থেকে শুরু করে সব প্রয়োজনীয় খাদ্যাপাদান । আমরা শর্করা জাতীয় খাবার প্রাকৃতিক ভাবে বিভিন্ন উদ্ভিদ থেকে পেয়ে থাকি যেমন দানা জাতীয় শস্য, শিকড় জাতীয় সবজি, ফল, ডাল, দুধ ইত্যাদি । শর্করা/কার্বোহাইড্রেট হতে পারে – সিম্পল (যেমন চিনি) বা যৌগিক আকারে (যেমন স্টার্চ ও ফাইবার -সবজি, শস্য, ডাল জাতীয় থেকে প্রাপ্ত) ।

সিমপল কার্বোহাইড্রেট খুব সহজে হজম হয়ে যায় এবং এদের গ্লাইসেমিক্স ইন্ডেক্সও  বেশি ( যে খাবার তাড়াতাড়ি  হজম হয়ে রক্তে দ্রুত গ্লুকোজ মিশিয়ে দেয় তাদের গ্লাইসেমিক্স ইনডেক্স বেশি ) । এদের তুলনায় যৌগিক আকারের (পলিস্যাকারাইড) কার্বোহাইড্রেট বেশ ধীরে ডাইজেস্ট/হজম হয়, গ্লাইসেমিক ইনডেক্সও কম। এজন্য যৌগিক কার্বোহাইড্রেট শরীরের জন্য খুব ভাল এবং কার্বোহাইড্রেটকে চিনে নেয়াটা মানুষের সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরত্বপুর্ণ । Oat_03

মানুষের খাদ্য হিসাবে ওটঃ

স্বাস্থ্যকর খাবার হিসাবে ওটের অবস্থান উপরের দিকে। অন্যান্য খাদ্যশস্য থেকে ওটে দ্রবীভূত আঁশ/ফাইবার জাতীয় অংশ অনেক বেশি  থাকায় এটি ধীরে ধীরে হজম হয়। গবেষণা  থেকে দেখা গেছে, ওটের ব্রানে (coarse outer layer) উচ্চ মাত্রায় সহজে দ্রবণীয় ‘বেটা-গ্লুকান’ (একধরনের পলি স্যাকারাইড) আছে, এন্ডোস্পার্মে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন (globulin or legume-like protein, avenalin, as the major (80%) storage protein) সহ অন্যান্য খাদ্যোপাদান।Oat

গবেষণার  ফলে বৈজ্ঞানিকরা এখন একমত যে, বেটা-গ্লুক্যান খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখে যা সংগত কারণে হৃদরোগ কমাতে সহায়ক। এই ফলাফলকে ইউরোপ এর বিভিন্ন দেশের ফুড এজেন্সি এবং USAএর FDAও অনুমোদন দিয়েছে ।

ওটে উপস্থিত উচ্চমানের ফাইবার শরীরের চর্বি কমাতেও সাহায্য করে। গবেষনা তে আরও দেখা গেছে, ওটমিল (β-glucan in oatmeal had higher molecular weight, radius of gyration and viscosity than other cereals) খেলে ক্ষুধাও  কম লাগে (Oatmeal suppressed appetite, increased satiety and reduced food intake compared to other cereals)।

ওটে আরো কিছু কিছু উপাদান আছে যেমন ‘আলফা-টোকোটেরিওনল’ এবং ‘আলফা-টোকোফেরল’, যা এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে এবং হৃদযন্ত্র কে সুস্থ রাখতে, আলজেইমার রোগ, গ্লুকোমা এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার ইত্যাদি প্রতিহত করতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে।

সাধারণত অনেক ভাবেই ওট দিয়ে মানুষের খাবার তৈরি করা হয়। প্রাচীনকাল থেকে মানুষ ওটকে চিড়ার মত করে বানিয়ে, অথবা একটু ভেঙ্গে (ক্রাশড) পরিজ বানিয়েই খেয়ে আসছে। এছাড়াও ওটের আটা দিয়ে কুকি, কেক, ব্রেড ঘরে ও বানানো যেতে পারে। বিভিন্ন ফুড কোম্পানি কুকি সহ বিভিন্ন ধরনের সিরিয়াল, সিরিয়ালবার ইত্যাদি বানিয়ে বাজারজাত করেছে।

খাবার গ্রহণের ব্যাপারে  যারা সচেতন, ওট তাঁদের খাদ্য তালিকায় স্থান পাবার যোগ্যতা রাখে, যারা খাবার  গ্রহণে উদাসীন তাঁদের অনেককে আফসোস করে যেন বলতে না হয়, - খাল কেটে কেটে কুমির এনেছি ও চোখ সর্বনাশা। Oat_7

ত্বকের যত্নে ওটের ব্যবহারঃ
আরো একটা কারনে ওট খুব গুরত্বপুর্ণ, তাহল – ‘কলোইডাল ওট এক্সট্রাক্ট’ ত্বকের মসৃণতা বৃদ্ধিতে, enhance general skin health, and soothe irritation and inflammation সহায়তা করে, এজন্য সৌন্দর্য্য পিয়াসীদেরও ওটের প্রসাধন সামগ্রী খুব পছন্দের। এটা অনেক প্রসাধন সামগ্রীতে, ক্লিঞ্জার, মাস্ক, ফেসিয়াল ক্রিম হিসাবে ব্যাবহৃত হয়। ত্বককে শুষ্কতা, বিভিন্ন ধরণের, র‍্যাশ, কালো দাগ, একজিমা, সানবার্ণ, ইত্যাদি থেকে রক্ষা করতে এর জুড়ি নেই। সাধারণত পিএইচ এর মাত্রা বেড়ে গিয়ে ত্বককে ইরিটেট করে তোলে ।

Oat_4কলোইডাল ওট এক্সট্রাক্ট ত্বকের পিএইচ লেভেল কে স্বাভাবিক অবস্থায় এনে ত্বকের সুদিং ভাব টা এনে দেয় এবং এতে রয়েছে “এভাসিন” নামে একটি যৌগিক পদার্থ যেটা ছত্রাকনাশক হিসাবে কাজ করে, আর আছে “স্যাপোনিন”, যেটি ক্লিঞ্জিং হিসাবে এবং আরো রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড কমপাউন্ড যা সূর্যের ক্ষতিকারক ইউভিএ রশ্মিকে শোষণ  করে ত্বককে রক্ষা করে।

ড. আলিয়া মমতাজ: উদ্ভিদ প্রজনন ও জীবপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। যুক্তরাষ্ট্রের একটি বহুজাতিক খাদ্য উৎপাদন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।

ইমেইল: [email protected]

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer