Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১১ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪

ঐতিহ্যের খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত বদলগাছীর গাছিরা

মশিউর রহমান, বদলগাছী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ৮ নভেম্বর ২০১৭

আপডেট: ০৪:১৫, ৮ নভেম্বর ২০১৭

প্রিন্ট:

ঐতিহ্যের খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত বদলগাছীর গাছিরা

ছবি : বহুমাত্রিক.কম

নওগাঁ : ষড়ঋতুর বৈচিত্র্যে বিশ্বে অতুলনীয়া আমাদের রূপসী বাংলাদেশ। প্রতিটি ঋতুর আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট রয়েছে। তেমনি শীতের একটি বৈশিষ্ট হচ্ছে খেজুর গাছের মিষ্টি রস। নওগাঁর বদলগাছীতে শীতের শুরুতেই কাক ডাকা ভোরে মিষ্টি রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন গ্রাম বাংলার গাছিরা।

শীতরে তীব্রতা এখনো দেখা না দিলেও এর মধ্যে খেজুর গাছের রস সংগ্রহের কাজ শুরু করেছেন অনেকেই। সময় আর কালের বিবর্তনে দিন দিন খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণে এ বছরও চাহিদা অনুযায়ী রস পাওয়া যাবেনা এমনটাই আশঙ্কা করছে, রস সংগ্রহকারী গাছিরা। একটি খেজুর গাছ ৫-৬ বছর বয়স থেকে সাধারণত বেশি রস পাওয়া যায়।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দো-আঁশ ও পলি মাটিতে জন্মানো গাছে বেশি রস হয়। আহরণের মূলত আশ্বিন মাস থেকে শুরু করে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত রস পাওয়া যায়। রসের মান ও পরিমাণ যেমন প্রকৃতির উপর নির্ভর করে ঠিক তেমনি যারা গাছ প্রস্তুত করেন দক্ষতাও অভিজ্ঞতার উপরে তা নির্ভর করে। এক বার গাছ কাটার পর ২-৩ দিন রস পাওয়া যায় আর প্রথম দিনের রসকে স্থানীয় ভাবে বলে জিরেন রস। এই জিরেন রস স্বাদে ও মানের দিক দিয়ে অনন্য।

জিরেন রস দিয়ে তৈরী হয় উন্নত মানের গুড় ও পাটালি। দ্বিতীয় দিনে পাওয়া রসকে দো-কাট ও তৃতীয় দিনের রসকে তে-কাট বলে। এই রস দিয়ে তৈরী হয় নালীগুড়। রসের জন্য গাছ এক বার প্রস্তুত করার পর ৫-৬ দিন বিশ্রাম দেয়া হয়। রোদে কাটা অংশ শুকায়ে গেলে আবার এই অংশ চেছে রস সংগ্রহ করা হয়। যাতে সূর্যের আলো সরাসরি এই কাটা অংশের পড়তে পারে এ জন্য গাছকে পূর্ব দিকে কাটা হয়।

উপজেলা বিলাশবাড়ী ইউনিয়নের হলুদ বিহার গ্রামের কালাম ও মজনু মিয়া জানান, আশ্বিনের শেষের দিকে খেজুর গাছকে প্রস্তুত করতে হয়, রস সংগ্রহের জন্য। গাছের বাকল কেটে রস সংগ্রহের জন্য নির্দিষ্ট স্থান প্রস্তুত করা হয়। কোমরে মোটা রশি বেধে ধারালো গাছি দা দিয়ে সপ্তাহে নির্দিষ্ট সময়ে গাছ কেটে রস আহরন করা হয়। এ সময় গাছের উপরি ভাগের নরম অংশকে কেটে সেখানে বসিয়ে দেওয়া হয় বাঁশের তৈরী নালা আর গাছের কাটা অংশ থেকে চুইয়ে চুইয়ে রস নল দিয়ে ফোটায় ফোটায় জমা হয় মাটির হাড়িতে।

সময়ের ব্যবধানে এখন বসতবাড়ী, ক্ষেত খামার কিংবা রাস্তা ঘাটের পাশে আর আগের মত খেঁজুর গাছ দেখা মিলেনা। অবহেলা আর অসচেতনার কারণে আজ গ্রাম বাংলার প্রচীন ঐতিহ্যবাহী পরিবেশ বান্ধব এই খেঁজুর গাছ বিলুপ্তির পথে।

দুধকুড়ী গ্রামের ময়েন মন্ডল জানান, আমরা জাতে বঙ্গালি খেঁজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা আমাদের অনেক দিনের পুরনো পেশা। বর্তমানে গাছ কমে যাওয়ায় গাছিরা এ পেশা ছেরে দিয়ে ধিরে ধিরে অন্য পেশায় যোগ দিচ্ছে।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer