Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৪ ১৪৩১, শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

এবার জামাই বাড়িতে ইফতারি দেওয়া হয়নি হাওরবাসীর

জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়া, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৮:০১, ৯ জুন ২০১৭

আপডেট: ১৮:০৬, ৯ জুন ২০১৭

প্রিন্ট:

এবার জামাই বাড়িতে ইফতারি দেওয়া হয়নি হাওরবাসীর

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের হাওরবাসীর মাঝে অতিথি আপ্যায়নে রয়েছে সুখ্যাতি। রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্যের পরম্পরা। আপন মহিমায় হাওরপাড়ের মানুষ গুলো সকল প্রতিকুলতা কাটিয়ে সবসময় উদ্ভাসিত থাকে। এবার অকালে একের পর এক হাওর ডুবে যাওয়ায় জেলার ৯০শতাংশ বোরো ধান পানিতে তুলয়ে গেছে।

জেলার দিরাই, শাল্লা, জগন্নাথপুর, ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, দোয়ারা বাজার, ছাতক, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলা সহ ১১টি উপজেলার দ্বীপ স্বদৃশ্য গ্রামগুলোয় রয়েছে গ্রামীন জীবনযাপনে নিজস্ব সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য। রয়েছে আতিথেয়তা ও চালচলনের স্বাতন্ত্র্য। কিন্তু বার বার হাওরপাড়ের কৃষক পরিবারগুলো আকাল বন্যায় বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় নেই কোন আনন্দ উচ্ছাস। নেই হাতে নগদ টাকা কড়ি।

শুন্য গোলা, শুন্য গোয়াল, শুন্য পকেট-তাই নেই আগের মত রমজান মাসের শুরুতেই বিভিন্ন রকমের ইফতারি নিয়ে মেয়ের জামাই বাড়িতে ধাপে ধাপে যাওয়ার রীতি। প্রতি বছরেই হাওরাঞ্চলের ঐতিহ্য পবিত্র রমজান মাসে মেয়ের শশুর বাড়িতে ইফতারি নিয়ে যাওয়ায় রেওয়াজ। বর্তমানে চিরাচরিত পুরোনো এ রীতি এখন ম্লান হয়ে গেছে।

ইফারির আয়োজন রমজানের প্রথম দশ দিনে একবার ও পরের দশ রমজানের একবার ছেলে, মেয়ে বা খুব নিকট আত্মীয় মাধ্যমে সকল আয়োজন সম্পন্ন করেন হাওর পাড়ের কৃষক পরিবারে মা-বাবারা।

আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক ভাবে মেয়ের জামাই বাড়িতে রমজান মাসেই ইফতারির দেয়ার রীতি আবহমান কাল ধরে চলে আসছে। হাওরাঞ্চলে মেয়ের জামাই বাড়িতে যাওয়ার জন্য শহরের নামী-দামি ধনাঢ্য পরিবারের লোকজনদের মত আপ্যায়ন না করতে পারলেও হাওর পাড়ের তৈরী করা নানান সব পিঠা, পায়েস সহ বিভিন্ন ফল-ফলাদি নিয়ে হাজির হয়। এই ইফতারির আয়োজন কয়েক দফা হয়।

রমজানের শেষ দশ দিনে মধ্যে মেয়ের বাবা শেষ সাপ্তাহ ইফতারির আয়োজন নিয়ে হাজির হয়। আর এই সময় মেয়ের শশুর বাড়ির সবাইকে দাওয়াত দেয়। আর এর পর পরেই মেয়ের জামাই ও শশুর-শাশুড়ি, নানা-নানী, দাদা-দাদি সহ বাড়ির সবার জন্য ইফতারি, নতুন কাপড় সহ ঈদের দাওয়াত দেওয়ার জন্য হাজির হয়। মেয়ের জামাই আসায় আনন্দের বন্যা বয়ে যায় পরিবারের সবার মাঝে।

হাওর পাড়ের লোকজন জানান, এবার ত সব শেষ। হাওর ডুবে যাওয়ায় এখন মেয়ের শশুর বাড়ি যাওয়া খুবেই কষ্টের হয়ে গেছে। গরিব হলেও প্রতি বছর রমজান মাসে আমরা হাওর পাড়ের মেয়ের মা-বাবারা মেয়ের সম্মান ও খুশির জন্য তার শশুর বাড়িতে ধুমধামের সাথেই ইফতারি নিয়ে যাই। সাথে থাকে অনেক আয়োজন। আবার কোথাও কোথাও মেয়ের জামাই, মেয়ের শশুড়-শাশুড়ি মেয়ের জা-দের জন্য আলাদা করেও থালা সাজিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। নতুন বিয়ে হলে মেয়ের শশুড় বাড়ি একটু আলাদা করেই যাওয়া হয়।

তারা জানান, এসব আয়োজনে থাকে-মিষ্টি, জিলাপি, হান্দেশ, ছই পিঠা, চিতল পিঠা, তালের পিঠা সহ নানান রকমের পিঠা। এছাড়াও বিভিন্ন রখমের ফল, দামী ঈদ কাপড় সহ নানান আয়োজন। এবার সব শেষ কি করব ভাবতে পারছি না। এক ফসলী বোরো ধান আমাদের এক মাত্র সম্পদ পর পর দু বছর ধরেই পানিতে তলিয়ে গেছে কি করে জীবন আর সংসার চলবে ভেবে পাই না।

পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক পিযুস পুরকায়স্থ টিটু বলেন, এই সময় হাওরবাসীরা মহা আনন্দের সাথে মেয়ের শশুর বাড়িতে জাকঁজমকপূর্ন ভাবেই ইফতারি নিয়ে যেত কিন্তু এবার তা হয় নি। এই ৬ মাস বেকার জনগোষ্টীকে সম্পদে পরিণত করার জন্য মিল-কলখারকানা স্থাপন, কুটির শিল্পের সাথে যুক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করলে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল হতে পারত অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখত এই হাওরবাসীরাই।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কারুজ্জামান কামরুল জানান, প্রতি বছরেই মেয়ের শশুর বাড়িতে ইফতারি নিয়ে যায় হাওরবাসী এবার তা হয় নি জাঁকজমকভাবে অনেক পরিবার যায় নি এখনও মেয়ের শশুর বাড়িতে। কিভাবে যাবে যাওয়ার মত সামর্থ্য নেই এবার বোরো ফসলহানির কারণে। যদি হাওরবাসীর জন্য এখানে বিকল্প কাজের ব্যবস্থা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে হাওরবাসীরা তাদের জীবন মানের উন্নয়ন গঠাতে সক্ষম হত।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer