Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৩ ১৪৩০, বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪

এ দূর্ভোগের শেষ কোথায় ?

তুহিন আহামেদ, গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০১:৪৮, ৮ জানুয়ারি ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

এ দূর্ভোগের শেষ কোথায় ?

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

গাজীপুর : সরু রাস্তা, ময়লা আবর্জনার স্তুপ, সকাল-সন্ধ্যা হাটু অবধি পানি, স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতে হয় মহল্লার মানুষদের। বহু প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছুটিয়ে নাগরিকদের ভোট নিয়ে মেয়র-কাউন্সিলর হন, পরিবর্তন হয় কারো কারো ভাগ্যেও, তবে মহল্লাবাসীর দূর্ভোগের শেষ হয় না।

চিত্রটি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ১৭ নং ওয়ার্ডের বনরুপা সড়কের পার্শ সড়ক চান্না মহল্লার। এ সড়কটি দিয়ে মহল্লার প্রায় ৩০-৪০টি বাড়ির লোকজনসহ আশপাশের বিভিন্ন মহল্লার চলাচলের রাস্তা এটি। সড়কটি দিয়ে আশপাশের প্রায় ১০-১৫ টি শিল্প-কলকারখানার শ্রমিক, কয়েকটি স্কুল, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সহ নানা শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার লোকের চলাচল। অথচ এমন ব্যস্ততম রাস্তার বেহাল দশা। এক প্রকার বাধ্য হয়েই সাধারণ মানুষ দূর্ভোগ সহ্য করে চলাচল করছে রাস্তাটি দিয়ে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকা-মংমনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর মহানগরীর শাখা সড়ক বনরুপা সড়কটির মধ্য এলাকা চান্না বাজার যাওয়ার রাস্তাটি একেবারে চলাচল অযোগ্য। সরু রাস্তার একদম নাজেহাল অবস্থা। রাস্তার অনেকাংশে খানাখন্দে ভরপুর। একেতো সরু তারপর আবার রাস্তায় সবসময় পানি জমে থাকে। আশপাশের ময়লা-আবর্জনার পানি প্রবাহিত হয় এই রাস্তাটি দিয়েই। ফলে রাস্তার সবসময় ময়লা-আবর্জনা ভাসমান অবস্থায় থাকে।

রাস্তাটি দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার মানুষের প্রতিনিয়ত চলাচল করতে হয়। রাস্তার পাশে নেই কোন ড্রেনেজ ব্যবস্থা। ফলে সারাদিনই রাস্তায় ময়লাযুক্ত পানি জমে থাকে। এ অবস্থায় রাস্তা দিয়ে চলাচল করলে ময়লাযুক্ত পানির প্রভাবে চলাচলকারী সাধারণ মানুষের রয়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। সেই সাথে অনেকে রাস্তার বিভিন্ন খানা খন্দে পড়ে মারাত্মক ভাবে আহত হয়।

গার্মেন্টস শ্রমিকরা সঠিক সময়ে বাসায় আসা-যাওয়া করতে পারে না। রাস্তার এমন অবস্থার কারণে যেখানে তাদের ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় লাগতো এখন রাস্তায় পানি থাকার কারণে ৩০-৪০ মিনিট ঘুরে অন্য রাস্তা হয়ে গন্তব্যস্থলে যেতে হচ্ছে। এছাড়া অনেক সময় রাস্তাটি দিয়ে চলাচল করতে গেলে কাপড় নষ্ট হয়ে যায়। ফলে চরম দূর্ভোগের শিকার হতে হয় খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের।

রাস্তাটির এমন অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার কারণ হিসাবে সঠিক ড্রেনেজ ব্যবস্থাকেই দায়ী করছে স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের অভিযোগ, সঠিক সময়ে পৌর কর, গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা হলেও তারা এক প্রকার নির্যাতিত।

কোন বাড়ির বিদ্যুৎ এর সমস্যা হলে পল্লী বিদ্যুৎ এর লোকজন এ রাস্তা দিয়ে অপরাগতা দেখায়। রাস্তা ঠিক করলে তারপর বিদ্যুৎ লাইন ঠিক করা হবে এমন কথা বলে তারা। এমন অবস্থা চলতে থাকলে বসবাস করাই অযোগ্য হয়ে পড়ছে।

সবচেয়ে বেশী সমস্যায় পড়তে হয় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। রাস্তার এমন খারাপ অবস্থার কারণে সঠিক সময়ে মালামাল আনা নেওয়ার জন্য পড়তে হয় বিপাকে। অনেক সময় রাস্তার খানা খন্দে পড়ে নষ্ট হয়ে যায় মালামাল। অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবসায়ীরা।

রাস্তার এমন খারাপ অবস্থার কারণে অনেক ভাড়াটিয়ারা বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। ফলে বাড়িওয়ালা পড়েছে চরম বিপাকে। রাস্তার ভাল না থাকার কারণে ঘর বাড়ি তুলে তাতে ভাড়া না হলে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে স্থানীয় বাড়িওয়ালারা। তাছাড়া রাস্তাটির সংস্কার কাজ না হলে তাদের নিজেরই এলাকায় থাকাটাও এখন হুমকীর সম্মুখীন।

রাস্তার পাশের বাড়ির আঙ্গিনায় ময়লা-আবর্জনার স্তুপ জমে আছে। ময়লাযুক্ত আবর্জনা থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। রাস্তা দিয়ে চলাচলতো দুরের কথা। বাড়ির ভেতরে দুর্গন্ধের জন্য থাকা যাচ্ছে না। রাস্তাটি দিয়ে কোন প্রকার রিক্সা, ভ্যান চলাচল করতে পারেনা। ফলে লোকজনকে পায়ে হেঁটেই চলাচল করতে হয়।

আবার কেউ যদি অসুস্থ হয়। তখন পড়তে হয় আরো বিড়ম্বনায়। না আসে গাড়ি না যাওয়া যায় পায়ে হেঁটে। ফলে একপ্রকার চরম দূর্ভোগে দিন অতিবাহিত করছে ওই এলাকার সাধারণ মানুষ।

কথা হয় এ এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রশিদ, খোকন মিয়া ও রোবেল মিয়ার সাথে। তারা জানান, শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। এদিন এ মহল্লায় বসবাসরত হাজারো পোশাক শ্রমিক বাসায় থাকার কারণে পানির খরচ বেশী হয় এবং নানা কাজ কর্ম করে থাকেন। কিন্তু এ এলাকার পানি বের হয়ে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকার ফলে পানি কোন দিক দিয়ে বের হতে পারেনা। ফলে এ এলাকার জনগণের চলাচলের একতটি মাত্র রাস্তা। যে রাস্তা দিয়ে স্কুল,কলেজ, মাদ্রাসা ও পোশাক করাখানা সহ নানা স্থানের যেতে হয়। কিন্তু রাস্তাটি নিচু হওয়ার ফলে বৃষ্টির দিন ছাড়াই নোংড়া ও ময়লা-দূর্গন্ধযুক্ত পানিতে ভরে যায়। ফলে এ এলাকার লোকজনদেরকে মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়।

তারা আরও জানান, বৃষ্টি হলে এ দূর্ভোগের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। ময়লা-আবর্জনা যুক্ত পানি শুধু রাস্তাতেই সীমাবদ্ধ থাকে না, তা বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়ে। তবে বৃষ্টির দিন চাড়া প্রত্যেকদিন দুপুরে পর এ রাস্তায় পানিতে ভরপুর থাকে। চান্না মহল্লাবাসির চলাচলের একমাত্র রাস্তা হওয়ার ফলে চরম ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করতে হয় এলাকাবাসিকে।

ইউনুস সিকদার ও কুরবান সরকার নামের এ এলাকার দুই বাসিন্দা জানান, ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকার ফলে বনরুপা রোড এলাকার বাসিন্দাদের বাথরুমের পানি, মলমূত্র, বাসা বাড়ির আবর্জনা সকল কিছু যত্রতত্রভাবে ফেলানোর ফলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া এ এলাকার এ রাস্তাটি অন্যান্য রাস্তার তুলনায় তুলনামূলকভাবে নিচু এবং ড্রেন দিয়ে তা বের না হওয়ার ফলে উপর এলাকার সমস্ত ময়লাপানি এসে এ সড়কে জমা হয়। সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতার।

চান্দনা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্র পারভেজ, গাজীপুর মাইলস্টোন স্কুল এর ৮ম শেণির ছাত্র মাহদিন, অপর এক শিক্ষার্থী সোহানুর রহমান জানায়, স্কুলে যাওয়ার সময় আমাদের এ রাস্তা দিয়ে যেতে হয়। সকালে শুকনো রাস্তা দেখে গেলেও দুপুরের পর বাড়িতে আসার সময় রাস্তায় জলাবদ্ধতা দেখতে হয়। পরে বাধ্য হয়ে জুতা ও প্যান্ট খুলে ময়লা পানির উপর দিয়ে চলাচল করতে হয়।
শিক্ষার্থীরা আরো জানায়, এর আগে বেশ কয়েকবার পিচ্ছিল খেয়ে পড়ে গিয়ে বই-খাতা সহ জামা কাপর নষ্ট হয়ে গেছে। একরকম স্কুলেও যেতে পারিনি এমনটির ফলে।

বেবী রহমান ও সবুজা বেগম নামের দুই বাসিন্দা জানান, এ এলাকায় বিদ্যুৎ বিল দিতে ও রিডিং লিখতে বিদ্যুতের লোকজন আসেনা। তারা বিদ্যুতের রিডার আন্দাজ করে লিখে বিল করে থাকেন।
রিকশা-ভ্যান এ এলাকায় ঢুকে না। কেউ অসুস্থ্য হয়ে পড়লে ডাক্তার এর কাছে নিতে গেলে সমস্যা হয়। কারণ এ রাস্তায় সব সময় জলাবদ্ধতা লেগে তাকে। আমাদের কেই দেখে না। আমরা নিয়মিত পৌর কর পরিশোধ করে আসছি। বিদ্যুৎ বিল ও গ্যাস বিল নিয়মিত পরিশোধ করছি। কিন্তু আম,াদের এলাকার মানুষদের মানুষ বলে মনে করেন না জনপ্রতিনিধিরা। তারা শুধু ভোটের সময় এলাকায় বিচরণ করে।

নারী বাসিন্দাদ্বয় আরও জানান, এ রাস্তাটির ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশনের স্থানীয় কাউন্সিলরকে বার বার বলার পরেও এটি নিরাময়ের কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। আমরা মানবেতর জীবন যাপন করছি।
এব্যাপাওে কথা বলতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ১৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী মেহেদী হাসান ফারুককে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer