ছবি: সংগৃহীত
ময়মনসিংহ : জেলার ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়াদ শেষের মুহূর্তে অন্তত ৫ কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করে গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহীত উল আলমের বিরুদ্ধে। গত ১২ আগস্ট তাঁর দাপ্তরিক মেয়াদ শেষের আগে তিনি অনেক প্রচার চালিয়েছেন-তিনিই ফের উপাচার্য হয়ে ফিরছেন, যা নাকি শতভাগ নিশ্চিত।
সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা গেছে, ক্যাম্পাসে উপাচার্যপন্থী কয়েকজন চাটুকারের মুখেও একই ধরণের আশ্বাস শোনা গেছে। এখন আলোচনা উঠেছে এর একটিই মাত্র কারণ ছিল যাতে দীর্ঘ চারবছরে উপাচার্যসহ জামাত-শিবির চক্র এবং আওয়ামীলীগের নাম ভাঙ্গানো একদল স্বার্থান্বেষী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে নামে-বেনামে অনেককে চাকুরি ও ঠিকাদারি কাজ পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় শতকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
কিন্তু যদি সেসব টাকা প্রদানকারী ব্যক্তিরা বুঝতে পারে যে, উপাচার্য আর আসতে পারবেন না তাহলে উপাচার্যকে যাওয়ার সময় তারা অপমান অপদস্ত করবে। অবশেষে দুর্নীতিবাজ উপাচার্য যখন বুঝতে পারলেন, তাঁর আর পুনর্নিয়োগ হওয়ার সম্ভাবনা নেই তখন মেয়াদ শেষের ঠিক আগের দিন কমপক্ষে ৫০ জনকে অবৈধভাবে কোন প্রকার কাগজপত্র ছাড়াই বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তর প্রধানকে ফোন করে করে তাদের উপর একাধিক লোক চাপিয়ে দিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এরূপ কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তা এর সত্যতা স্বীকার করেছেন এবং উপাচার্যের যাওয়ার মুহুর্তে এভাবে পুশ করে অবৈধ নিয়োগে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্রের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, যেসব উল্লেখযোগ্য অফিসে এসব অবৈধদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে মহিলা দোলন-চাঁপা হল অফিস, ছেলেদের অগ্নি-বীণা হল, মেডিক্যাল সেন্টার, প্রকৌশল দপ্তর, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, ইন্সটিটিউট অব নজরুল স্টাডিজ, সিএসই, ইএসই বিভাগ, লোকপ্রশাসন বিভাগ এবং ভিসি অফিস ও বাংলো ইত্যাদি।
জানা গেছে এসব প্রতিটি নিয়োগের জন্য ৮-১০ লক্ষ টাকা করে বাণিজ্য হয়েছে যার পরিমাণ ৪-৫ কোটি টাকার বেশি। এও প্রচার রয়েছে যে, উক্ত পরিমাণ টাকার একটি বিরাট অংশ নাকি তাঁর পুনর্নিযোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন টেবিলে ঘোষ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। অথচ এসব নিয়োগের বিষয়ে নিয়োগ কমিটির কেউ কোন কিছুই জানেন না বলে জানা গেছে।
নিয়োগ কমিটির অন্যতম সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শামসুর রহমান এর নিকট জানতে চাইলে উপাচার্যের এসব অবৈধ নিয়োগ সম্পর্কে তিনি শুনেছেন বলে জানান কিন্তু তাঁর সাথে কোন আলাপ অলোচনা না করেই এসব নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, আগামীতে এর একটি নিয়োগও টিকবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. মোঃ হুমায়ুন কবীরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এসব নিয়োগের বিষয়ে আমিও শুনেছি, তবে উপাচার্য মহোদয় আমার কাছে পরামর্শ জানতে চাইলে আমি যেকোন নিয়োগের ক্ষেত্রে তাঁকে প্রয়োজনে নিয়োগবিধি অনুসরণ করে লোক নিয়োগ করার কথা বলেছিলাম’।
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি তপন কুমার সরকার ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলামও একই ধরণের মন্তব্য করেছেন। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে নাানা গুঞ্জন চলছে। এ দৌড়ে যাদের লোক নিয়োগ পায়নি তারা ফুলে ফেপে উঠেছেন। যেকোন মুহুর্তে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।
এসব বিষয়ে উপাচার্যের সাথে একাধিকবার সেলফোনে যোগাযোগ করেও তাঁর কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এর আগে গত ৫ আগস্টের সিন্ডিকেটে প্রধানমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধ এবং বর্তমান সরকারের নেতৃত্বাধীনে থাকা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চালানো অপত্তিকর এবং মানহানিকর বেশ কয়েকটি স্ট্যাটাস দেওয়ার প্রেক্ষাপটে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়া কতিপয় কর্মকর্তাকে পুুণর্বহালের পায়তারা ভেস্তে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহীত উল আলম।
অভিযোগ রয়েছে তাঁর যাওয়ার সময় বিপুল পরিমাণ আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে তাদেরকে পুণর্বহালের সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছিল। উপাচার্য নিজে থেকে নির্দেশনা দিয়ে তাদেরকে মামলা হতে নাম কাটিয়ে নিয়ে আসার পরামর্শও দিয়েছিলেন বলে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। উপাচার্যের পরামর্শেই নাকি তারা তখন সিন্ডিকেটের বিভিন্ন সদস্যদের নিকট ধর্ণা দিয়েছিল বলে জানা গেছে।
এদিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহীত আলমের উপাচার্য হিসেবে তাঁর মেয়াদ শেষ হয়েছে ১২ আগস্টখ। অভিযোগ উঠেছে স্বাধীনতা বিরোধী জামাত-শিবির ও বিএনপি প্রীতি থাকার কারণে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতার অংশ হিসেবেই নাকি তিনি শেষ সময়ে তাদেরকে পুণর্বাসান করে যেতে চেয়েছিলেন। তবে উক্ত সিন্ডিকেটে বিএনপি-জামাতপন্থী কয়েকজন শিক্ষক জাহিদুল কবীর, রাজু আহমেদ এবং কর্মকর্তা আশরাফুল আলম, আতাউল আজম, মোবারক হোসেনসহ আরো অনেককে অবৈধভাবে সময়ের আগেই তড়িঘড়ি করে প্রমোশন দিয়ে গেছেন উপাচার্য।
বহুমাত্রিক.কম