Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৪ ১৪৩০, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব: যেভাবে মূল্যায়ন করছেন দেশের শিল্পীরা

বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬:৩০, ২৪ নভেম্বর ২০১৬

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব: যেভাবে মূল্যায়ন করছেন দেশের শিল্পীরা

ছবি: বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ও বহুমাত্রিক.কম

ঢাকা : রাজধানীতে পঞ্চমবারের মতো শুরু হচ্ছে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আর্মি স্টেডিয়ামে আড়ম্বরপূর্ণ এ উৎসবের পর্দা উঠবে।

বিগত চার বছরের এই ধারাবাহিক আয়োজন দেশের সংগীত তথা সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে যেমন বড় ধরণের প্রভাব ফেলছে, তেমনি ঝিমিয়ে পড়া উচ্চাঙ্গসংগীতের চর্চাও নতুনভাবে উজ্জীবিত হয়েছে।

তবে এধরণের উৎসব আয়োজনে সংগীতের চর্চা প্রকৃতঅর্থে কতটা এগুচ্ছে কিংবা দেশের শিল্পীরা এসব উৎসবে কতাটা অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন-তা নিয়েও সংগীতবোদ্ধা ও শিল্পীদের মাঝে আলোচনা চলছে।

এনিয়ে বহুমাত্রিক.কম সংগীতবোদ্ধা ও শিল্পীদের মূল্যায়ন জানার চেষ্টা করেছে।

বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব আয়োজনের ভূয়শী প্রশংসা করে দেশের বিশিষ্ট সংগীত শিল্পীরা এই উৎসব নিয়ে আশাবাদী হয়েছেন। একই তারা সাথে সংগীতের এসব উৎসবে আসা বিদেশি শিল্পীদের ভিড়ে দেশের শিল্পীদের সমান মূল্যায়নেরও দাবি তুলেছেন।

বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী অদিতি মহসিনের কাছে প্রশ্ন ছিল বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের কারণে দেশে শাস্ত্রীয় সংগীতচর্চা কতখানি বেড়েছে। জিজ্ঞাসা ছিল এধরণের উৎসব নিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত মূল্যায়লন কী।

এসব বিষয়ে বহুমাত্রিক.কম-কে তিনি বলেন, ‘এই উৎসবের কারণে শাস্ত্রীয় সংগীতচর্চা কতখানি বেড়েছে তা হয়ত বলতে পারব না। তবে বেঙ্গল পরম্পরা বলে স্কুলটি রয়েছে, সেখানে কিছু ছেলে-মেয়ে শিখছে। বড় বড় গুরুদের কাছে শেখার সুযোগ পাচ্ছে-সেটা একটা ভাল দিক।’

সার্বিকভাবে আমাদের সংগীতচর্চায় এধরণের উৎসব কী প্রভাব ফেলছে-এমন প্রশ্নের জবাবে অদিতি মহসিন বলেন, ‘এটা নিশ্চয় অনেক ভালো প্রভাব ফেলছে। কিন্তু পাশাপাশি নানা ধরণের ব্যাপারও চলছে। ভারতীয় শিল্পীরা অনবরতই আসছেন বিভিন্ন জায়গায় গান করতে। সেই চর্চাটাও অনেক বেড়ে গেছে।’

‘আমাদের শিল্পীরা মোটেই অগ্রাধিকার পাচ্ছেন না। সমস্ত অনুষ্ঠানেই দেখা যাচ্ছে অন্যান্য জায়গা থেকে শিল্পীরা আসছেন’-ক্ষোভের সাথে বলেন এই শিল্পী। 

তিনি বলেন, ‘আসুক, ভাল শিল্পী আসলে দেশের মঙ্গল। আমরাও কিছু শিখতে পারি তাদের কাছ থেকে। যেমন ক্লাসিক্যাল ফেস্টে যে মানের শিল্পীরা আসছেন-তাদের কাছে অনেক কিছুর শেখার আছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই যাঁরা আসছেন তাদের মানের বিচারটা, কী বিচারে তারা আসছেন সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়’।

এদেশে শাস্ত্রীয় সংগীতচর্চার শত বছরের ঐতিহ্য আছে। তবে এই সময়ে এসে দেশের সমকালীন শাস্ত্রীয় সংগীতচর্চা কোন জায়গায়-জানতে চাওয়া হয়েছিল সংগীতবোদ্ধা, গবেষক ও শিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসীর কাছে।

এবিষয়ে তিনি বলেন, ‘একসময় এদশে হিন্দু রাজারা শাস্ত্রীয় সংগীতচর্চায় পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। যার ফলে এটা একটা জায়গায় গিয়েছিল। ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ খান(যাঁর কাছে আমরা গান শিখেছি), আব্দুল গফুর, ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরু-এরকম দশ-বারো জনের নাম করতে পারি যাঁরা এটাকে জিঁইয়ে রেখেছিলেন’

‘তারা মারা যাওয়ার পরে ফেরদৌসী (ফেরদৌসী রহমান) গাইলো, নিলুফারও(প্রয়াত নিলুফার ইয়াসমীন) গাইতো। ক্লাসিকাল তো এমন না শিখে রেখে দিলেই হয়, এটা রোজই গাইতে হয় ৩-৪ ঘণ্টা। নিয়াজ মোহাম্মদ ভালো গাইতেন। সত্যিকথা বলতে কী এখন আমাদের ক্লাসিক্যাল..ভাল গাইতে পারে তেমন খুব একটা নেই।’

‘অজয় চক্রবর্তীর মেয়ে কৌশিকী বা ভারতে যেমন গুরুশিষ্য পরম্পরা যে ব্যাপারটা এখানে তেমন নেই। পারিবারিক এই পরম্পরা আমাদের এখানে তেমনটা এখনো গড়ে উঠেনি’-বলেন বিশিষ্ট শিল্পী।

বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব নিয়ে কালজয়ী লোকসংগীত শিল্পী আব্বাসউদ্দীনের পুত মুস্তাফা জামান আব্বাসী বলেন, ‘উৎসবকেন্দিক শিল্পীদের সামনে নিয়ে আসার বিষয়ে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের কর্ণধার আবুল খায়ের লিটু যা করছেন-এক কথায় তা বিরাট কাজ। এর ফলে একটা একটা গ্রুপ তৈরি হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা একসময় এয়ার টিকিট খরচ করে গিয়ে কলকাতায় শুনতাম। আরও একশ’ জন যেতো শুধু ক্লাসিক্যাল শুনতে। সেই শিল্পীরাই এখন ওখান থেকে ঢাকায় আসছেন। এর প্রশংসা করতেই হবে।’

তবে দেশের শিল্পীদের নিয়েও আশাবাদী মুস্তাফা জামান আব্বাসী বলেন,  ‘বেঙ্গলের ফেস্টে দেশের শিল্পীরাও সুযোগ পাচ্ছে। রাজশাহীর থেকেও আসছে। গানটা তো চর্চার বিষয়। টেলিভিশনে গিয়ে স্বর্ণপদক নিয়ে আসা নয়। দেখা গেল এক বছর পর শেষ। এটা চিরজীবন সাধনা করতে হয়।’

সংগীত নিয়ে স্বপ্নটাকে আরও জাগাতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখানে খুব একটা স্বপ্ন আছে এমন কাউকে দেখা যায় না। কলকাতায় আইসিটিএসআরএ যেমন করেছে, এখানে তেমন স্বপ্ন নেই। আবুল খায়ের ছাড়া আর কেউ তো নেই।’

সংগীত না জানা অনেকেই সংগীত উৎসব আয়োজন করছে-এতে গানের সঠিক কদর হচ্ছে কিনা তাও দেখার বিষয় বলে মনে করেন তিনি। এবিষয়ে মুস্তাফা জামান বলেন,  ‘বেঙ্গল ছাড়াও আরও অনেকে উৎসব করছে। যেমন ফোক ফেস্ট ব্যবসায়ীরা, যারা গানের কিছুই জানেনা। তাতেও ক্ষতি নেই। তবে সঠিক চর্চাটা তো হতে হবে।’

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer