ছবি: প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন
ঢাকা : প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন-চ্যানেল আই ‘প্রকৃতি সংরক্ষণ পদক-২০১৬’ পেলেন সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক ইশতিয়াক উদ্দিন আহমদ।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে শনিবার রাতে জমকালো আয়োজনে তার হাতে পদক তুলে দেন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। বাংলাদেশের পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষায় সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
বিজয়ের মাসে মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জাতীয় সংগীতের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানমালা। প্রকৃতির নানান উপাদানে সবুজে সাজানো হয় চ্যানেল আইয়ের চেতনা চত্বর।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের কর্মকাণ্ড ও পদকপ্রাপ্ত ইশতিয়াক উদ্দিন আহমদের জীবন ও কর্ম নিয়ে তথ্যচিত্র দেখানো হয়। মোড়ক উন্মোচন করা হয়-মুকিত মজুমদার বাবুর লেখা ‘সবুজ আমার ভালোবাসা’ গ্রন্থ এবং প্রকৃতি ও জীবন অনুষ্ঠানের ডিভিডি। কেক কেটে উদযাপন করা হয় প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের ৭ম বর্ষ পূর্তি।
ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের পক্ষে ভাইস চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ মামুন পদকপ্রাপ্তকে এক লাখ টাকার চেক তুলে দেন। সারাজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসার সনদ তুলে দেন জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. সামিউল হাসান। অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন, আব্দুল আলীমের কন্যা নূরজাহান আলীম, ফেরদৌস ওয়াহিদ ও বাপ্পা মজুমদার।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু আরো বলেন, প্রকৃতি নিয়ে যারা কাজ করছেন তাদের কারণেই আজ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়েছে। এজন্যই মানুষ আজ গাছ লাগানোর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছেন। বাংলাদেশের প্রকৃতি রক্ষা করা বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি সবাইকে অস্তিত্ব রক্ষার এই প্রচেষ্টায় অংশ নেয়ার আহ্বান জানান। এজন্য গণসচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন তিনি।
ক্ষমতার সঙ্গে মমতা মিলিয়ে প্রকৃতিকে ভালোবাসার আহ্বান জানান প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের ঋণ শোধ করতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশকে গড়তে হবে। সেজন্য সবাইকে প্রকৃতি রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন ৭ বছরে যে কাজ শুরু করেছে আগামীতে তা ধরে রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে দেশ ও প্রকৃতিকে মা হিসেবে আখ্যা দিয়ে তাকে রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড-চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর। নিজ দায়িত্ব থেকেই আমাদের চারপাশ সুন্দর রাখতে, প্রকৃতিকে সুন্দর রাখতে সবাইকে কাজ করার তাগিদ দেন তিনি।
প্রকৃতি সংরক্ষণ পদকে ভূষিত সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার- আইইউসিএন -এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ইশতিয়াক উদ্দিন আহমদ প্রকৃতি নিয়ে কাজ করার জন্য প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন এবং এর চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবুকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, এই পদক আমার একার নয়, বন বিভাগে ও আইইউসিএন’এ যারা প্রকৃতি নিয়ে কাজ করছেন তাদের সবার। তিনি বলেন, প্রকৃতি বাঁচলে আমরা বাঁচব। প্রকৃতি রক্ষার এ আন্দোলন নিয়ে মানুষের কাছে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি। সহ-ব্যবস্থাপনার জন্য মানুষের আস্থা তৈরিরও তাগিদ দেন তিনি।
মানবসৃষ্ট নানান ক্ষতি-জমির অপব্যবহার, জলাশয় ভরাট, নদী দূষণ-দখল রুখতে সম্মিলিত প্রচেষ্টা গ্রহণের আহ্বান জানান সংস্কৃতি সচিব বেগম আক্তারী মমতাজ।
ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ মামুন বলেন, প্রকৃতিতে ভাল থাকতে হলে প্রকৃতিকে ভাল রাখতে হবে। এ কাজে এগিয়ে আসতে হবে দেশের ১৬ কোটি মানুষের। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিশিষ্ট রন্ধন বিশেষজ্ঞ কেকা ফেরদৌসী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
মুকিত মজুমদার বাবুর নেতৃত্বে ২০০৯ সালের ৩ ডিসেম্বর থেকে প্রকৃতি, পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সব মহলে সচেতনতা ছড়িয়ে দেয়ার কাজ করছে প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন। একই সঙ্গে একজন পরিবেশপ্রেমীকে প্রতিবছর দেওয়া হচ্ছে প্রকৃতি সংরক্ষণ পদক। এবারের পদকপ্রাপ্ত ইশতিয়াক উদ্দিন আহমদ বন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে প্রাকৃতিক বনের পাশাপাশি সৃজিত বন ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রায় তিন দশক ধরে কাজ করছেন।
এ সময় তিনি দেশের বন ও বনজ প্রতিবেশ ব্যবস্থার উন্নয়ন, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ও টেকসই ব্যবহার নিয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন।