Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৫ ১৪৩১, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪

ইউনেস্কো’র সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’

এস এম মুকুল

প্রকাশিত: ১৯:০৭, ৩০ নভেম্বর ২০১৬

আপডেট: ১৯:০৯, ৩০ নভেম্বর ২০১৬

প্রিন্ট:

ইউনেস্কো’র সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’

ছবি-সংগৃহীত

ঢাকা : সুখবর, বাংলাদেশের জন্য সুখবর। বাংলাদেশে বাংলা বর্ষবরণের অন্যতম অনুসঙ্গ চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে বের হওয়া `মঙ্গল শোভাযাত্রা` জাতিসংঘ সংস্থা ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।

৩০ নভেম্বর ২০১৬ বুধবার ইউনেস্কোর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবায় বিশ্বের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় আন্তঃদেশীয় কমিটির একাদশ বৈঠকে ‘রিপ্রেজেন্টেটিভ লিস্ট অফ ইনট্যানজিয়েবল কালচারারল হেরিটেজ অফ হিউমিনিটি’র তালিকায় বাংলাদেশের মঙ্গল শোভাযাত্রা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

মঙ্গল শোভাযাত্রা বাঙালিত্ব, বাংলা ভাষা সাহিত্য, কৃষ্টি, সভ্যতা, ঐতিহ্য সর্বোপরি বাংলা বর্ষবরণের অন্যতম অনুষঙ্গ এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে প্রতিবছরই পহেলা বৈশাখে এই মঙ্গল শোভাযাত্রার রীতি প্রচলিত। এ শোভাযাত্রায় চারুকলার শিক্ষক শিক্ষার্থী ছাড়াও সমাজের সর্বস্তরের ও সব বয়সের মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

বাংলা সংস্কৃতির পরিচয়বাহী নানা প্রতীকী উপকরন, রং বেরংয়ের মুখোশ ও বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি প্রভৃতি প্রতীকী সৃষ্টিশীল শিল্পকর্ম এই শোভাযাত্রার মাঙ্গলিক অর্থ বিশ্ব দরবারের দৃষ্টি আকর্ষন করতে পেরেছে। এই জয় সারা বাঙালি জাতির। এই কৃতিত্ব বাংলাদেশের ষোল কোটি মানুষের। মঙ্গল শোভাযাত্রার এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রমাণ করে আমার চিরায়ত বাঙালি। আমরা বাঙালি ছিলাম, আছি, চিরকাল রইবো এ বাঙালি সত্তার গৌরব ধারণ করে।

মঙ্গল শোভাযাত্রা একটা ঐতিহ্য হয়ে গেছে। ঢাক-ঢোলসহ নানা বাদ্যযন্ত্র ও বিচিত্র চারুকর্মে সুসজ্জিত এই শোভাযাত্রার ইতিহাস খুব একটা পুরনো নয়। জানা থাকা দরকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে ১৯৮৯ সাল থেকে শুরু হয়েছিল মঙ্গল শোভাযাত্রা।

পহেলা বৈশাখ মানেই ধর্ম, বর্ণ, ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে অসাম্প্রদায়িকতার জয়গান গাওয়া, সর্বজনীন উত্সব পালনের মধ্য দিয়ে বাংলার সব মানুষের এক হয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করা। পহেলা বৈশাখ উৎসবের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে প্রতি বছরই পহেলা বৈশাখে এ মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।

পহেলা বৈশাখ মানেই সংস্কৃতির পরিচয়বাহী নানা উপকরণ, রঙ-বেরঙের মুখোশ, শাড়ি, ধুতি আর পাঞ্জাবির মতো বাঙালিয়ানা সাজে নিজেকে রাঙিয়ে ঘুরে বেড়ানো। ১৯৮৬ সালে এ প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে যশোরে প্রথমবারের মতো নববর্ষ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। যশোরের সেই শোভাযাত্রায় ছিল পাপেট, বাঘের প্রতিকৃতি, পুরনো বাদ্যসহ আরো অনেক শিল্পকর্ম।

বাংলা নববর্ষে এভাবেই যশোর শহরে প্রথমবারের মতো বের হয়েছিল মঙ্গল শোভাযাত্রা। এর আগে এ উপমহাদেশে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আর কোনো শোভাযাত্রার ইতিহাস নেই। প্রথমবারের মতো চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে ১৯৮৯ সালে পহেলা বৈশাখের সকালে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আনন্দ শোভাযাত্রা বের করেন। এ মঙ্গল শোভাযাত্রা সে বছর জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়।

তবে শুরু থেকেই চারুকলার শোভাযাত্রাটির নাম মঙ্গল শোভাযাত্রা ছিল না। তখন এর নাম ছিল ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। ১৯৯৬ সাল থেকে চারুকলার এ আনন্দ শোভাযাত্রাই সারা দেশে মঙ্গল শোভাযাত্রা হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।

এস এম মুকুল: বিশ্লেষক ও উন্নয়ন গবেষক

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer