Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১১ ১৪৩১, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

আশুলিয়ায় গ্রাহকের ৪ কোটি টাকা নিয়ে সমিতি উধাও

তুহিন আহামেদ, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:১০, ২০ এপ্রিল ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

আশুলিয়ায় গ্রাহকের ৪ কোটি টাকা নিয়ে সমিতি উধাও

ছবি : বহুমাত্রিক.কম

সাভার : আশুলিয়ার মুসলিমটেক সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের প্রায় ৪ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। ঘটনার পর থেকে ওই প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকরা তাদের জমাকৃত সঞ্চয়ের টাকা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে।

সরেজমিনে আশুলিয়ার পূর্ব কলতাসূতি মুসলিম টেক এলাকায় গিয়ে ভোক্তভোগী গ্রাহকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ১৭ বছর আগে আবু সাঈদ আশুলিয়ার পূর্ব কলতাসূতি মুসলিমটেক এলাকায় এসে ‘সাইদ ষ্টোর’ নাম দিয়ে সঞ্চয় ও ঋণদান কর্মসূচী চালু করেন।

চালুকৃত এ প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ গ্রাহকরা ছিল পোশাক শ্রমিক। সে সময়সে একটি পোশাক কারখানায় চাকুরি করতো এবং বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকদের তার প্রতিষ্ঠানে টাকা সঞ্চয় করার বিভিন্ন প্রলোভন দেখাতো। সেই সাথে জমাকৃত টাকার দ্বিগুন পরিশোধ করা হবে বলেও সে গ্রাহকরে প্রলোভন দেখিয়ে নতুন নতুন গ্রাহক তৈরী করতো। এক সময় তার এ সমিতিতে প্রায় ৪ শতাধিক গ্রাহক হয়ে যায়।

এরপর ‘সাঈদ ষ্টোর’ নাম পরিবর্তন করে ২০১৫ সালে সাভার উপজেলা সমবায় অফিস থেকে মুসলিমটেক সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি নামের উপর একটি রেজিষ্ট্রেশন নিয়ে এর কার্যক্রম শুরু করে। সঞ্চয়ের উপর ভাল লাভ ও ব্যবহার ভাল থাকার সুবাদে প্রায় সহ¯্রাধিক গ্রাহক হয়ে যায় ওই সমিতিতে। অধিক লাভের আশায় গ্রাকহরা জনপ্রতি প্রতিমাসে ১১ শত টাকা থেকে শুরু করে ৩২হাজার টাকা পর্যন্ত সঞ্চয় জমা রাখতো।

জমাকৃত টাকা মাঝে মধ্যে উঠিয়ে নিত গ্রাহকরা। জমাকৃত টাকার পরিমাণ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রাহকরা টাকা উত্তোলন করার জন্য ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক আবু সাঈদকে জানালে সে সকলের টাকা ১৫ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিলের মধ্যে দিয়ে দিবে বলে আশ্বস্ত করেন গ্রাহকদের।

গ্রাহকদের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে ১৫ এপ্রিল বিকেলে। যে অফিসে তারা টাকা জমা দিত সে অফিসে ও আবু সাঈদ এর বাড়ির ফটকে তালা দেখতে পায়। এক পর্যায়ে জানাজানি হয় আবু সাঈদ ও তার পরিবারের সদস্যরা গ্রাহকদের জমানো প্রায় ৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যায়।

মুসলিমটেক সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লি: এর গ্রাহক রেজিয়া আক্তার কান্না জরিত কন্ঠে জানান, তিনি ৫ বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠানে সঞ্চয় জমা রাখতেন। তিনি এক নামে ৩,২০০টাকা, আরেক নামে ১৬,০০ টাকা, অন্য নামে ৩,২০০ টাকা, অন্য একনামে ৬,৪০০ টাকা, অন্য এক নামে ৬,৪০০ টাকা, আরেক নামে ১৯,২০০ টাকা করে সঞ্চয় জমা রাখতো।

তার মোট ৭টি বই ছিল। কয়েক বছরে সঞ্চয়কৃত টাকার পরিমাণ দাড়ায় কয়েক লাখে। এরপর গত ২০ মার্চ ২০১৭ ইং তারিখে জমি কেনার কথা বলে আরো ১৬ লাখ টাকা নেয় ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আবু সাঈদ। এখন আমি কি করবো। আমার স্বামীর অবস্থা খুবই খারাপ। এ টাকার কথা শুনে সে এরই মধ্যে কয়েকবার অচেতন হয়ে যায়।

আরেক গ্রাহক মনিরুল ইসলাম জানান, সে ওই প্রতিষ্ঠানে ৫ বছর ধরে টাকা জমা রাখতো। প্রথমে সে প্রথমে ৩২শ টাকা, এরপর ৩৬শ টাকা, এবং পরবর্তীতে ৪৮শ টাকা করে সঞ্চয় রাখা হয়। এ পর্যন্ত তার কয়েক লাখ টাকা জমা হয়।

এছাড়া আসমা, সাথী, রফিকুল, জহিরুল ইসলাম, রুনিয়া, মর্জিনা,মো. সালাম, ইউসুফ, আনোয়ারুল, আব্দুল গফুর, ফিরোজা বেগম সহ আরো অনেকে জানায়, তারা প্রত্যেকেই পোশাক করাখানার শ্রমিক। পোশাক কারখানায় চাকুরির করে বেতনের টাকা থেকে একটি অংশ এ প্রতিষ্ঠানে ভভিষ্যৎ এর চিন্তা করে সঞ্চয় রাখতো। কিন্তু আজ তাদের সব শেষ হয়ে গেছে। তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। ভাল মানুষের মুখোশ পড়ে সাঈদ তাদের জমানো টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে।

তাদের দাবি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন মুসলিমটেক সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড এর পরিচালক আবু সাঈদকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবেন। সেই সাথে আমাদের জমাকৃত টাকা যেন ফেরত পাওয়া যায় সে ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

সাভার উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মনিরা আখতার এর কাছে এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে সাংবাদিক পরিচয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি জানান, ‘রেজিষ্টার খাতা দেখে বলতে হবে। আপনি এক ঘন্টা পড়ে ফোন করেন।’ বলেই লাইনটি কেটে দেন। একঘন্টা পর আবার তার ফোনে বার বার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

 

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer