Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৯ ১৪৩১, মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪

আশুলিয়ায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরী হচ্ছে চানাচুর-বিস্কুট

তুহিন আহামেদ, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১:২৮, ১৫ জুন ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

আশুলিয়ায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরী হচ্ছে চানাচুর-বিস্কুট

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

গাজীপুর-সাভার ব্যুরো : আশুলিয়ায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরী হচ্ছে চানাচুর, বিস্কুট, নিমকি, কটকটিসহ শিশুদের নানা মুখরোচক খাদ্য। নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এসব বেকারি খাদ্য তৈরী ও বাজারজাত করা হলেও তদারকি নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

অভিযোগ রয়েছে সাভার উপজেলা সেনেটারি ইন্সপেক্টর এসব বেকারি খাদ্য তৈরীর কারখানা মালিকদের কাছ থেকে মাসোহারা নিয়ে থাকেন। ফলে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরী এসব খাদ্য সহসাই করছে বাজারজাত।

আশুলিয়ার পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে বড় বড় দোকানে এসব বিস্কুট, চানাচুর, নিমকি ও কটকটি বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যেই। কিন্তু কখনো কি কেউ ভেবে দেখেছেন এসকল খাদ্যগুলো কোথায় থেকে আসছে? কোথায় তৈরী হচ্ছে? কিভাবে-কি দিয়ে তৈরী হচ্ছে এসব খাবার? এসব খাদ্যপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও যাচাই করার দায়িত্বে যারা আছেন তারা কি তাদের দায়িত্ব পালন করছেন? এক কথায় না।

সরেজমিনে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউপি’র গণকপাড়া (আমতলা বন্দর) এলাকার সুমন সাহা (বাঁধন), গোবিন্দ সাহা এবং তুষ্ট ঘোষ চানাচুর, নিমকি, কটকটি ও বিস্কুটসহ বিভিন্ন শিশু খাদ্য তৈরী করে বিভিন্ন নামে বাজারজাত করছে। কিন্তু এসব পন্য তৈরী হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে। যা শিশুসহ জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি।

স্যাঁতস্যাঁতে নোংরা পরিবেশে ভেজাল ও নিন্মমানের উপকরণ দিয়ে অবাধে তৈরী করা হচ্ছে এসব বেকারি সামগ্রী। কারখানার ভেতর যেখানে তৈরীকৃত বেকারি খাদ্য রাখা হয়েছে সেখানেই আটা, ময়দার গোডাউন ও মেয়াদোত্তীর্ন পামওয়েল রাখা হয়েছে।

এসব পণ্য তৈরী করতে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ এবং পাম ওয়েলে। এছাড়া তৈরীকৃত চানাচুর, নিমকি, কটকটি ও বিস্কুটগুলো স্যাতস্যাতে মেঝেতে রাখা হয়েছে। আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা ধরনের তৈরী পণ্য। শ্রমিকরা খালি গায়ে ও হাতে এসব পণ্যের কাচামাল বানাচ্ছে এবং খালি পায়ে এসব পণ্যের পাশ দিয়ে হাঁটাহাটি করছে। আটা ময়দা প্রক্রিয়াজাত করানোর কড়াইগুলো ও ডিস (বল) অপরিস্কার ও নোংরা। সেই সাথে খালি গায়ে থাকার ফলে শ্রমিকদের শরীরের ঘাম এসে পড়ছে আটার উপর।

মেয়াদোত্তীর্ণ আটা-ময়দা-পাম ওয়েল ও রাসায়নিক পদার্থগুলো মিক্সড করে রাখা পাত্রগুলোতে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি ভন ভন করছে। উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ন তারিখ ছাড়াই বাহারি রকমের আকর্ষণীয় মোড়কে চানাচুর, বিস্কুট, নিমকি ও কটকটি উৎপাদন ও বাজারজাত করা হচ্ছে।

এসব পণ্য তৈরীর কারখানাগুলোর নেই কোন বিএসটিআই এর অনুমোদন। তবে উপজেলা সেনেটারি ইন্সপেক্টর কর্তৃক সাক্ষরিত বার্ষিক সার্টিফিকেট রয়েছে। এছাড়া রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স। এসবের উপর ভিত্তি করেই তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে আশুলিয়ার শিমুলিয়ার গণকপাড়া (আমতলা বন্দর) এলাকার চানাচুর, বিস্কুট, নিমকি ও কটকটি তৈরীর কারখানাগুলো বসত বাড়ির ভেতরেই। বসত বাড়ির ভেতরেই তারা বছরের পর বছর ধরে এসব অনুমোদনহীন বেকারি খাদ্যের কারখানাগুলো চালানোর পরেও অজ্ঞাত কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে।

এখানকার তৈরীকৃত চানাচুর, নিমকি, বিস্কুট ও কটকটি আশুলিয়ার জিরানী বাজার, শিমুলিয়া, আমতলা বাজার, গোহাইলবাড়ি বাজার সহ বিভিন্ন স্থানে এসব পণ্য বিক্রি করে থাকে। তবে এসব পণ্যের মোড়কের গায়ে উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণ এর তারিখ লেখা নেই। কত তারিখে উৎপাদন হয়েছে বা মেয়াদ কবে শেষ হবে তার কোন উল্লেখ নেই।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ভেজাল কেমিক্যাল ও নিম্নমানের উপকরন দিয়ে তৈরী করা এসব খাবার সামগ্রী খেলে মারাত্মক স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি হতে পারে।

পেটব্যাথা, শরীর দূর্বলসহ জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি রয়েছে। মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর এসব ভেজাল খাদ্য উৎপাদন বন্ধ করতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই।

এব্যাপারে (বাঁধন) চানাচুর, বিস্কুট ও নিমকি এর কর্ণধার সুমন সাহা জানান, দীর্ঘদিন ধরে আমরা এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি, কোন সমস্যা হয়নি। তবে মাঝে মধ্যে উপজেলা সেন্টোরি ইন্সপেক্টর মাঝে মধ্যে আসে দেখে চলে যায়।

এবিষয়ে সুমন সাহা বলেন, ‘আপনারা রিপোর্ট করতে আসছেন রিপোর্ট করেন গিয়া। অরকম কত সাংবাদিক দেখলাম। দেড়’শ সাংবাদিকের সাথে আমার চেনা জানা। আপনে রিপোর্ট করেন গা।’

সাভার উপজেলা সেনেটারি ইন্সপেক্টর মো. মোজাম্মেল হোসেন জানান, আশুলিয়ার শিমুলিয়ার গণকপাড়া এলাকার চানাচুর কারখানায় আমি গত বছর গিয়েছিলাম। তখন পরিবেশ ভাল ছিল। কিন্তু এ বছর যাওয়া হয়নি তাই কিছু বলতে পারছিনা। তবে খুব শিগগির সেখানে যাব এবং খারাপ অবস্থা থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer