সাভার : জমি দখল, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, নিজ দলের কর্মী নির্যাতন, ডিস ব্যবসা নিয়ন্ত্রণসহ একক আধিপত্য ধরে রাখতে বিভিন্ন ইউনিটে আত্মীয় স্বজনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা ইত্যাদি বিষয়ে নানান ধরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে আশুলিয়া থানা যুবলীগের বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে। ফলে সেই সাথে নেতাকর্মীরা জড়িয়ে পড়ছে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে। যা প্রকাশ্যে রুপ নিচ্ছে।
আশুলিয়া থানা যুবলীগের একাধিক নেতা-কর্মী, এলাকাবাসি এবং বিভিন্ন সময়ের ঘটনা প্রবাহ ইত্যাদির সূত্র মতে, গত ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭ ইং শুক্রবার রাতে মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ করায় আশুলিয়ার দূর্গাপুর পূর্বচালা এলাকায় আশুলিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের স্বাস্থ্য ব্ষিয়ক সম্পাদক শামীম মন্ডলকে রগ কেটে ও কুপিয়ে জখম করে থানা যুবলীগের সদস্য কুসুম মোল্লা। এমনটিই অভিযোগ করেন আহত শামীম মন্ডলের ভাই হামিদুর রহমান মন্ডল। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেন আশুলিয়া থানা যুবলীগের সদস্য কুসুম মোল্লা।
আহত শামিম মন্ডলের ভাই হামিদুর রহমান মন্ডল ওই সময় অভিযোগ করে বলেছিলেন, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ওই দিন রাতে তার ভাইকে দুর্গাপুর পূর্বচালা এলাকায় একা পেয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ও বাম পায়ের রগ কেটে হত্যার চেষ্টা করে কুসুম মোল্লা ও তার লোকজন। এসময় তাকে মৃত. ভেবে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় তারা। পরে পথচারীরা তার গোঙানির শব্দ পেয়ে তাকে উদ্ধার করে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
হামিদুর অভিযোগ করে বলেন, ‘আশুলিয়া থানা যুবলীগের সদস্য কুসুম মোল্লা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন। ওই মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ করেছিল শামীম। এ নিয়ে এর আগেও তাদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে।’
তবে আশুলিয়া থানা যুবলীগ সদস্য কুসুম মেল্লা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমাকে ফাঁসানোর জন্য চক্রান্ত চলছে। তার সাথে আমার পূর্বের শত্রুতা রয়েছে এটা ঠিক কিন্তু আমি তার উপর কোন হামলা করিনি।’
বেশ কিছুদিন আগে আশুলিয়ার উইন্ডো গ্রুপের হলিউড নামের একটি পোশাক কারখানার কারখানার ঝুট ব্যবসা নিজের দখলে নেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীর মালবাহী ট্রাক ৬ দিন ধরে আটক রাখার অভিযোগ উঠে থানা যুবলীগের আহব্বায়ক কবির সরকারের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন মুসা অভিযোগ করে বলেন, প্রায় সাত বছর ধরে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকার উইন্ডো গ্রুপের একটি কারখানার সাথে ঝুট ব্যবসা করছি। গত শনিবার ওই কারখানা থেকে ঝুট ক্রয় করে নিয়ে আসার সময় যুবলীগ নেতা কবীর সরকার বাধা দেয়। এ সময় তারা অবৈধভাবে কারখানার সামনে মাল ভর্তি ট্রাকটি আটকে দেয়। ৬ দিন ধরে ওই যুবলীগ নেতা তার মালভর্তি ট্রাকটি আটকে রাখি।
ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন মুসা সে সময় অভিযোগ করে বলেন, তিনি ইয়ারপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। গত কয়েক মাস আগে কবির সরকার নতুন থানা কমিটির আহ্বায়ক হওয়ার পর তাদের কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হয়। তিনি নতুন কমিটিতেও আশুলিয়া থানা যুবলীগের সদস্য।
উইন্ডো গ্রুপের হলিউড কারখানার জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) ফজলুল হক ওই সময় বলেছিলেন, দীর্ঘ দিন ধরে মোশারফ হোসেন তাদের কারখানার ঝুটের ব্যবসা করে আসছে। তবে কয়েকদিন আগে হঠাৎ করে আশুলিয়া থানা যুবলীগের আহ্বায়ক কবির সরকার তার মুঠোফোনে ফোন দিয়ে বলেন, ধামসোনা ইউনিয়নে যুবলীগের নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখন থেকে হলিউড কারখানার ঝুট ব্যবসা তার লোকজন করবে। এছাড়াও বাইপাইল এলাকার লুৎফর নামের একজন নতুন যুবলীগ নেতা দাবি করে মোশারফকে ঝুট না দেওয়ার হুমকিও দেয়।
গত ১২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ডিস ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেওয়াকে কেন্দ্র করে আশুলিয়ায় যুবলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত হয় বেশ কয়েকজন। পরে আহতদের উদ্ধার করে আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
আশুলিয়ার ঘোষবাগ বাজার এলাকায় যুবলীগ নেতা সুজন ও আরিফ ভূঁইয়ার লোকজনের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এছাড়া, একক আধিপত্য ধরে রাখার জন্য নিজ পরিবারের এক ডজনেরও বেশি আত্মীয়-স্বজনকে নিয়ে যুবলীগের বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি গঠন করেছেন স্থানীয় দুই নেতা। এর ফলে ত্যাগী ও যোগ্য কর্মীরা বঞ্চিত হচ্ছেন, তাদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খুলছেন না। এতে দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল সৃষ্টি হচ্ছে ও স্থানীয় নেতকর্মীরা বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে পড়ছে। স্থানীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
স্থানীয় যুবলীগ নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, আশুলিয়া থানা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মঈনুল ইসলাম ভুঁইয়া একক আধিপত্য ধরে রাখতে নিজ পরিবারের সদস্যদের দিয়ে যুবলীগের বিভিন্ন পদ দখল করাচ্ছেন।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র মতে জানা যায়, আশুলিয়া থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মঈনুল ইসলাম ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে তার পরিবার থেকে প্রায় ১০ জনকে বিভিন্ন ইউনিটের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে রেখেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় যুবলীগ নেতাকর্মীরা।
থানা কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক হওয়ার পর ধামসোনা ইউনিয়নে নিজের ভাইয়ের ছেলে সোহাগ মিয়াকে সাংগঠনিক সম্পাদক, নিজের বোনের ছেলে আব্দুল কাইয়ুমকে সাংগঠনিক সম্পাদক, বোনের ছেলে নয়ন মিয়াকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, চাচাত ভাই বকুলকে সহ-সভাপতি, ভাইয়ের ছেলে শুভকে সহ-সভাপতি, চাচাত ভাই উজ্জল ভুঁইয়াকে ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক, বোনের মেয়ে আমেনা আক্তারকে মহিলা বিষয়ক সম্পাদক, চাচাত ভাই আবুল হোসেন ধামসোনা ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য, চাচাত ভাই ওয়াসীম ভুঁইয়া ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ভাতিজা দিপুকে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা বানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আশুলিয়ার সাবেক এক যুবলীগ নেতা বলেন, ‘নতুন কমিটি হওয়ার পর থেকেই যুগ্ম আহ্বায়ক তার পরিবারের আত্মীয়-স্বজনদের দিয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নে কমিটি করতে শুরু করেন। এখন পর্যন্ত তার পরিবারের ১০ সদস্য দিয়ে ধামসোনা ইউনিয়নের নতুন কমিটি গঠন করেছেন। এখানে যুবলীগের অনেক ত্যাগী কর্মী থাকার পরেও তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে।’
তবে আশুলিয়া থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মঈনুল ইসলাম ভুইয়া বলেন, ‘আমার পরিবার অনেক বড়। এছাড়া তাদেরও অনেক আত্মীয়-স্বজন রয়েছে। এ কারণে নিজের স্বজনদের দলের কমিটিতে রেখেছি। এতে দোষের কী?’
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে যদি ত্যাগী কর্মীদের বাদ দিয়ে নিজের স্বজনদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হয় তাহলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠে এ কমিটির বিরুদ্ধে। কমিটির নেতাকর্মীরা চাঁদাবাজি করতে থাকে। লেগুনা, মাহিন্দ্র, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, অটো গাড়ী সহ বিভিন্ন স্থান থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতা জানান, বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ উঠেছে। একটি কমিটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে নানান ধরণের অভিযোগ উঠতেই পারে তবে অভিযোগের সত্যতা যাচাই-বাছাই করা হবে। বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালি করতে সবাইকে একসাথে কাজ করে যেতে হবে।
বহুমাত্রিক.কম