Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৩ ১৪৩০, বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪

আবুবাকারের লেখা নিয়ে ইসলামপন্থীদের আপত্তি

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:২৩, ২৮ এপ্রিল ২০১৭

আপডেট: ২২:১৫, ২৮ এপ্রিল ২০১৭

প্রিন্ট:

আবুবাকারের লেখা নিয়ে ইসলামপন্থীদের আপত্তি

ঢাকা : ইসলামি মোড়কে প্রেম আর যৌনতাকে তুলে ধরে নিয়মিত লেখালেখি করে গ্রামীণ সমাজে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন কাসেম বিন আবুবাকার।

কিন্তু সম্প্রতি তাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর, তার লেখার সাহিত্যিক মানদণ্ড নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার পাশাপাশি—সাহিত্য জগতে তার উপস্থিতিই মেনে নিতে পারছেননা অনেকে। যদিও তার বই বিভিন্ন বয়সে পড়েছেন দেশের অসংখ্য মানুষ।

গ্রামে স্কুল জীবন কাটিয়ে পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে এখন ঢাকাতেই একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন জেসমিন পাপড়ি।

কাসেম বিন আবু বকরের বই তার হাতেও পৌঁছেছিলো স্কুল জীবনেই, এখন থেকে প্রায় দু`দশক আগে।
বিবিসিকে তিনি বলেন,"আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়ি তখন এক বান্ধবীর কাছ থেকে কাসেম বিন আবু বাকারের ফুটন্ত গোলাপ হাতে পাই। সেটা হচ্ছে আমার হাতে পাওয়া প্রথম উপন্যাস। বাড়ির লোকজনকে লুকিয়ে বইয়ের আড়ালে সেটা ছিলো আমার প্রথম উপন্যাস পড়া"।

তবে এরপর তার আর কোন বই পড়েননি তিনি কারণ ওই বই তাকে খুব একটা টানেনি বলেন জানান তিনি। তখন অন্যদের মধ্যে কি কাসেম বিন আবু বাকারের বই পড়ার প্রবণতা ছিলো?- এমন প্রশ্নের জবাবে জেসমিন পাপড়ি বলেন, "ভীষণ..ভীষণ। আমাদের এলাকায় যত লাইব্রেরী বা বইয়ের দোকান ছিলো উপন্যাস বলতেই কাসেম বিন আবুবাকারের বই ছিলো"।

বাংলা ভাষায় একশোরও বেশি বই বেরিয়েছে আবু বাকারের এবং বলা হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখকদের একজন তিনি। একনাগাড়ে লিখেছেন ৮৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। অথচ তিনি আলোচনায় এলেন ২০১৭ সালে এসে তাও বিদেশী কয়েকটি গণমাধ্যমে তার সম্পর্কে লেখালেখি হওয়ার পর। এতদিন বাঙ্গালি সাহিত্য সমাজে বিশেষ করে মধ্যবিত্তের সাহিত্য আলোচনায় তার অনুপস্থিতির কারণ কি? বা এখন তাকে নিয়ে এতো বিতর্কই বা হচ্ছে কেন?

ফেসবুকে আবু বাকারকে নিয়ে বিতর্কে অংশ নিয়ে এমন প্রশ্নেরই জবাব দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা সাহিত্যের সাবেক শিক্ষার্থী রাজু আহমেদ, যিনি একসময় বামধারার রাজনীতির সাথেও যুক্ত ছিলেন।

তিনি বলেন, "মেইনস্ট্রীমের বাইরে একজন বড় জনগোষ্ঠী আছে এবং সেখানে বয়সেরও একটা বিষয় আছে। কাশেম বিন আবু বাকার সেই জায়গাতেই আঘাত করেছেন। আমাদের দেশে যখনি কোন সাহিত্যিক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে যেমন হুমায়ুন আহমেদ কিংবা কাজী আনোয়ার হোসেনকে নিয়েও বিতর্ক হয়েছে বিভিন্ন সময়। এতে তাদের কিছু আসে যায়নি""।

আহমেদ বলেন সুশীল সাহিত্য সমাজ কিংবা সমালোচক কি গ্রহণ করলো আর না করলো তাতে আগেও কাসেম বিন আবু বাকারের কিছু ক্ষতিবৃদ্ধি হয়নি। জনপ্রিয়তার দিক থেকে তিনি সফল লেখক এটা বলতেই হবে।

আর তাঁর এই জনপ্রিয়তার কারণ কি? জবাবে কাসেম বিন আবুবাকার নিজেই বিবিসিকে বলেছেন যে ইসলামী ভাবধারায় এই মূল্যবোধ-নির্ভর সাহিত্যই তার পাঠকপ্রিয়তার আসল রহস্য বলে মনে করেন তিনি। তবে এর সাথে মোটেও একমত নন ইসলামপন্থীদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় মাসিক মদিনা পত্রিকার সম্পাদক আহমদ বদরুদ্দিন খান।

তিনি বলেন, "উনার একটা উপন্যাস বোরকা পড়া সেই মেয়েটি। মেয়েটিকে বোরকা পড়িয়েছেন পাশাপাশি মেয়েটিকে তিনি এমন প্রেমে জড়িয়েছেন তার গল্পের মাধ্যমে সেটা ইসলামে অবৈধ। প্রেম নামে যে জিনিসটাকে ইসলামি মোড়কে তুলে আনছেন সেটা আপত্তিজনক"।

আহমদ বদরুদ্দিন খান বলেন, বোরকা পড়া সেই মেয়েটি এটির সামান্য কিছু তিনি পড়েছেন। "একটু পড়ে মনে হয়েছে এটি রুচিসম্মত না"। এমন সমালোচনা শুধু ইসলামপন্থীদেরই নয়, ফেসবুকেও আবু বাকারকে রুচিহীন লেখক আখ্যা দিয়ে তাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করছেন অনেকে। কিন্তু লেখার সাহিত্যিক মানদণ্ড যাই হোক, তার প্রকাশ্যে আসাটাকেই কেন অনেকে গ্রহণ করতে পারছেনা? জানতে চেয়েছিলাম শিক্ষক ও সাহিত্যিক বিশ্বজিৎ ঘোষের কাছে।

তিনি বলেন, "যদি এ লেখার মধ্যে সদার্থক ইতিবাচক জীবন দৃষ্টি থাকে তাহলে তা নিশ্চিত এ লেখা গ্রাহ্য হবে, পাঠক পড়বে। জীবনানন্দ দাশ তার সমকালে উপেক্ষিত ছিলেন। তার রচনা কেউ পড়তোনা। কিন্তু তিনি দিন দিন উজ্জ্বল হচ্ছেন। আর ক্ষমতা রাজনীতি বা অর্থনৈতিক কারণে কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারেন কিন্তু শেষ বিচারে তিনি বেশিদিন টিকবেন না"।

এতো বিতর্ক, কিংবা আলোচনা-সমালোচনার পর কাসেম বিন আবুবাকারের লেখা বই বাঙ্গালির সাহিত্য জীবনে শেষ পর্যন্ত কতটা স্থান করে নিতে পারে সেটি জানতে আসলে তাকিয়ে থাকতে হবে ভবিষ্যতের দিকেই। বিবিসি বাংলা

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer