Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১১ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪

আশুলিয়ায় ছাই থেকে তৈরী হচ্ছে পিতলের তৈজসপত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬:৫৯, ১০ এপ্রিল ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

আশুলিয়ায় ছাই থেকে তৈরী হচ্ছে পিতলের তৈজসপত্র

ছবি : বহুমাত্রিক.কম

সাভার : রাজধানী লাগোয়া উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার আশুলিয়ায় কল-কারখানার পরিত্যক্ত ছাই থেকে তৈরী হচ্ছে পিতলের তৈজসপত্র। যা তৈরী করে ওই অঞ্চলের ৯৫ ভাগ পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছে।

আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউপি’র কাছৈর গ্রামের ৯৫ ভাগ পরিবারের আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে ছাই থেকে পিতলের তৈজসপত্র তৈরি করে তা বাজারজাতকরণের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করা।

সম্প্রতি সরেজমিনে আশুলিয়ার কাছৈর এলাকা জানা যায়, কাছৈর এলাকার অধিকাংশ পরিবারের কর্তারা রাজধানীর ঢাকা বিভিন্ন এলাকার ষ্টীল ও রড তৈরীর কারখানাথেকে ছাই সংগ্রহ করে থাকেন।

পরে ছাইগুলো বস্তায় ভরে বাড়িতে নিয়ে আসেন। বাড়িতে নিয়ে আসার পর ছাইগুলো পাত্রে করে বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী বা পাশের জলাশয়ে বিশেষভাবে ধৌত করেন।

ফলে ছাইয়ের মধ্যে থাকা উচ্ছিষ্ট অংশগুলো পানিতে ভেসে যায়। ছাইগুলো ধৌত করার পর পাত্রের নিচে তলানীতে পিতলের গুড়িগুলো পড়ে থাকে। তলানীতে পড়ে থাকা পিতলের গুড়িগুলো রোদে শুকানো হয়। পরবর্তীতে শুকানো গুড়িগুলো ঢেকির মাধ্যমে ভাঙ্গা হয়। এরপর ভাঙ্গা গুড়ি গুলি পুনরায় পানিতে ধৌত করা হয়।

এরপর ধৌত করা গুড়ি গুলো পুনরায় রোদে শুকানো হয়। পরে আবার ঢেকির মাধ্যমে তা গুড়া করে মাটি ও তুষের মাধ্যমে বিশেষ আকৃতির পাত্র (ঢুলি) তৈরী করে তা সেখানে ঢালা হয়।

পরে সেগুলো আগুনের চুলায় ঢুকানো হয়। এখানে বলা বাহুল্য যে প্রতিটি ঢুলি (বিশেষভাবে তৈরী পাত্র) এ ১০ থেকে ১৫কেজি পিতলের গুড়ি ধরে। প্রতিটি চুলায় ৭/৮ টি ঢুলি ঢুকানো হয়। পরে কয়লার মাধ্যমে তাপ দিয়ে তরল করা হয়।

তরল করার সময় ঢুলির উপরের অংশে উচ্ছিষ্ট ময়লা থাকলে তা ফেলে দেয়া হয়। পরে তরল পিতলগুলো মাটির সাজে ঢালা হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই সাজ থেকে পিতলের গুড়ি ঠান্ডা হলে নামানো হয়। নামানো এ অবস্থায় তৈরী পিতলের অংশকে বাট বলা হয়। প্রতিটি বাটের ওজন হয় কমপক্ষে ৫ কেজি। পিতলের এ বাটগুলো ৩শত টাকা দরে বিক্রি করা হয়ে থাকে।

কাছৈর এলাকায় ছাই থেকে পিতলের বাট তৈরী করে থাকেন হানিফ আলী ও তৈয়ব আলী। কথা হয় তাদের সাথে। তারা জানান, তাদের বংশগত পেশা এটি। বহুকাল থেকে তারা এ পেশার সাথে জরিত।

রাজধানী ঢাকার জুরাইন,পোস্তগোলা, মীর হাজারিবাগ, যাত্রাবাড়ি, মুরগীটোলাসহ বিভিন্ন এলাকার ষ্টীল ও রড তৈরীর কারখানা থেকে তারা ছাই সংগ্রহ করে থাকেন। প্রতি বস্তা ছাই (৫০কেজি) তারা ১৫শত টাকা দরে ক্রয় করে থাকেন। পরে তা বাড়িতে নিয়ে এসে শ্রমিকের মাধ্যমে প্রতি বস্তা ছাই ধোয়ার পর ১৫কেজির মত পিতলের গুঁড়ি পাওয়া যায়।

একজন শ্রমিক সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কাজ করে থাকে। এসমেয়র মধ্যে ৫/৭ বস্তা ছাই ধৌত করে থাকে। পারিশ্রমিক হিসেবে দিতে হয় ৩থেকে ৪শত টাকা। পরে ছাইগুলো নারী শ্রমিকের মাধ্যমে রোধে শুকানো ছাইগুলো ঢেকিতে পিশানো হয়। নারী শ্রমিকদের দিতে হয় ১শত টাকা।

পরে গুড়িগুলো আগুনের মাধ্যমে তরল করে বিশেষ সাজে ঢুকানো হয় এবং সাজ থেকে বের করে পিতলের বাট তৈরী করা হয়। বাটগুলো স্থানীয় মহাজনের নিকট বিক্রি করা হতয়।

তারা আরো জানান, এসকল পিতলের বাট তৈরী করার জন্য শ্রমিকদের সপ্তাহে ১০/১৫ হাজার টাকা দাদন দিয়ে থাকেন। যার ফলে শ্রমিকরা তাদের বাট চাইলেও অন্যত্র বেশি দামে বিক্রি করতে পারেন না। মহাজন যে মূল্য নির্ধারণ করেন সেটাই তাদের মেনে নিতে হয়।

পিতলের এ বাট মহাজনেরা কামারদের মাধ্যমে কলস,প্লেটসহ বিভিন্ন তৈজসপত্র তৈরি করে চড়া দামেদেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে থাকেন।

মজিন্দ্র বিশ্বাস নামের পিতলের এক কামাড় জানান, মহাজনেরা পিতলের বাট ও জ্বালানি হিসেবে কয়লা সাপ্লাই দেন। তাদের অর্ডার অনুযায়ী তৈরি করা হয় রাধাকান্তি, বিদ্যালয়ের ঘন্টাধ্বনি বেল, প্লেট, কাপ ও সানোক। এতে মজুরি হিসেবে প্রতি কেজিতে দেয়া হয় ৮৪ টাকা।

এপেশার সাথে জরিত আরো অনেকেই জানান, কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি, পরিবহণ খরচ ৩ গুন বেশি, কাঁচামাল পরিবহনে পথে পথে পুলিশের হয়রানী ও চাঁদা প্রদানসহ নানা কারণে অনেকেই এখন এপেশা বদল করেছেন। এছাড়া মহাজনী অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে সরকারে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এবং তাদের তৈরিকৃত পিতলের বাট ও তৈজসপত্র বিদেশে রপ্তানী করা সম্ভব হলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হবে।সেই সাথে এপেশাটি টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।

এছাড়া সরকারী ও বেসরকারি ব্যাংক যদি সহজ শর্তে এ পেশার লোকজনদের ঋণ প্রদান করেন তাহলে হয়তো এ শিল্প বেঁচে থাকবে বহুকাল।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer