Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১০ ১৪৩১, বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪

‘জনকের শূন্যতা’

আগস্ট ট্র্যাজেডি ও পিতৃহারা বাংলাদেশ

ড. মো. হুমায়ুন কবীর

প্রকাশিত: ০২:০৬, ১৫ আগস্ট ২০১৭

আপডেট: ০২:১০, ১৫ আগস্ট ২০১৭

প্রিন্ট:

আগস্ট ট্র্যাজেডি ও পিতৃহারা বাংলাদেশ

ঢাকা : যে নেতার একক নেতৃত্বের কারিশমায় ১৯৭১ সালে নয়মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে এ বাঙালির আবাসস্থল হিসেবে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, তিনি হলেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বাংলাদেশ স্বাধীন করার পূর্বেই তাঁর নেতৃত্বের গুণাবলীর স্বীকৃতিস্বরূপ এবং দেশের ভালোবাসায় অসামন্য অবদানের জন্য তিনি একদিকে যেমন বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন, অপরদিকে তিনি ভূষিত হয়েছিলেন জাতির জনকে। বিশ্বের অনেক দেশের জাতির জনক উপাধি পেয়েছেন দেশকে স্বাধীন করার পর, কিন্তু এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু ছিলেন অন্য অনেকের চেয়ে ব্যতিক্রম।

কিন্তু সেই জাতির জনককে আমাদের এ অভাগা জাতি হারিয়েছে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কাল রাত্রিতে। সেই ইতিহাসের ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্ত বিশ্বের ইতিহাসে বিরল ও নজিরবিহীন। যে নেতা দেশের সাড়ে সাতকোটি মানুষকে ভালবেসে নিজের জীবন উৎসর্গ করতেও দ্বিধা করতেন না, মানুষকে অভুক্ত রেখে নিজে পেট পুরে খাওয়ার কথা যিনি স্বপ্নেও চিন্তা করতে পারতেন না, মানুষকে ভালবাসাই ছিল যার স্বভাবজাত। সেই নেতাকে স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিনবছর পর সেই দেশেরই একদল ক্ষমতালিপ্সু নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যা করেছে তা কোন জাতির ইতিহাসেই নেই।

খুনিরা সেই কলঙ্কময় ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, তারা দম্ভ করে সেই খুনের কথা দেশ-বিদেশে প্রকাশ্যে গণমাধ্যমে স্বীকার করেছে অনায়াসে। তারপরের ইতিহাস আরো ভয়াবহ। বঙ্গবন্ধুকে খুন করার পুরস্কার হিসেবে খুনিদের দেশ বিদেশে বিভিন্ন চাকুরি দিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। জাতীয় সংসদে আইন পাশ করে দেশের পবিত্র সংবিধানকে কলঙ্কিত করে ইনডেমনিটি নামের কালো আইন করে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার রোধ করা হয়েছিল। এর সুফলের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া হিসেবে তারা সদলবলে অস্ত্র উঁচিয়ে এদেশের মাটিতে বিভিন্ন সময়ে দীর্ঘদিন ঘুরে বেড়িয়েছে। তাদেরকে জাতীয় সংসদের সদস্য করা হয়েছে। সেই সাহস ও শক্তিতে তারা এদেশে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ফিরে আসার পর বহুবার প্রকাশ্যে তাঁরও জীবন নাশ করার চেষ্টা করা হয়েছে।

কিন্তু সত্য কখনো চাপা থাকেনা এবং ‘চিরকাল কারো সমান নাহি যায়’ বলতে তো কিছু কথা রয়েছে। নব্বইয়ের দশকের পর আস্তে আস্তে পাশা উল্টে যেতে থাকে। ’৯০-এর স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতনের পর মনে করা হয়েছিল গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হলো, এখন দেশের জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে জনগণের কথা বলবে-কিন্তু সেখানেও সে ঘৃণ্য হত্যাকা-ের ব্যাপারে তৎকালীন সরকার নিরব ভূমিকা পালন করে। দেশকে আরো অপেক্ষা করতে হলো আরো পাঁচ বছর। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন ঐতিহাসিক নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগের ঐকমত্যের সরকার ক্ষমতায় এসেই সংবিধানের ইনডেমনিটি নামক সেই কালো আইন বাতিল করে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের পথ সুগম করা হলো।

অবশেষে বিচারকার্য শুরু হলেও বঙ্গবন্ধুর কন্যার ঐকান্তিক ইচ্ছায় কোন বিশেষ ট্রাইবৃুনাল না করে সাধারণ আদালতে জাতির জনক হত্যার মামলা শুরু হলো। কারণ হিসেবে তিনি তখন বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু জনগণের নেতা, কাজেই তাঁর উদার দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করেছিলেন, তার উপর প্রচণ্ড ষড়যন্ত্র ছিল। কারণ দীর্ঘ সময়ের বিচার চলাকালীন সময়েও অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে বিচারকার্য বন্ধ করা জন্য। তারপর ২০০১ সালের পরে যখন আওয়ামীলীগ সরকারের ধারাবাহিকতা থাকেনি তখন উক্ত মামলার একাধিক বিচারকদের বিব্রতবোধ করার কারণে তা আর ৫-৭ বছর আলোর মুখ দেখতে পারেনি।

ইতোমধ্যে এ মামলায় যে ১২ জনের ফাঁসির রায় হলেও ৫ জনের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে। আর একজন পলাতক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে। অপর ছয়জন এখনো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পলাতক রয়েছে। তাদের একজন হলো মেজর নুর চৌধুরী যিনি কানাডাতে রয়েছে মর্মে সনাক্ত করা হয়েছে। তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সদা তৎপর রয়েছেন। তারই অংশ হিসেবে তিনি গতবছর কানাডায় নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার পর নিজে গিয়ে তাঁর সাথে দেখা করে নুর চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। ১৩ আগস্ট ২০১৭ তারিখে কানাডার বিদায়ী রাষ্ট্রদূত শেখ হাসিনার সাথে বিদায়ী সাক্ষাত করতে গেলে তিনি এবারো তাঁকে উক্ত খুনিকে ফেরত পাঠানোর জন্য পুনরায় অনুরোধ করেছেন।

বঙ্গবন্ধু আজ নেই। আছেন তাঁর জীবিত কন্যা বর্তমানে বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুরই স্বপ্ন বাস্তবায়নকারী হিসেবে উন্নয়নের রোল মডেল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু আজো অভাববোধ হয় জাতির পিতার জন্য। তিনি বেঁচে থাকলে দেশ আজকে যেভাবে এগিয়ে চলেছে, তার বহু আগেই বাংলাদেশ উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত হতো তাতে কোন সন্দেহ নেই। ১৫ আগস্টের আজকের দিনে ৪২তম জাতীয় শোকদিবসে তাঁকে জানাই সশ্রদ্ধ অভিনন্দন।

লেখক: ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

email: [email protected] 

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer