Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ২ ১৪৩১, মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪

আকিব শিকদার এর একগুচ্ছ কবিতা

প্রকাশিত: ০১:৪৯, ৬ জুন ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

আকিব শিকদার এর একগুচ্ছ কবিতা

সময়ের প্রয়োজনে 

যারা এতোকাল মিছিলের তামাসা দেখে
মুখ ঢেকে হেসেছে, তারাই ডাকবে মিছিল রাজপথে।
ভাবতে অবাক লাগে-
আকাশের রোদ্দুর দেখে যারা কস্মিনকালেও
ছাতাবিহীন বাড়ায় না পা রাস্তায়
জানালায় বৃষ্টির ঝাট দেখে কাঁশে খকখক
নাক ঘষে রুমালে, তারা দেবে নদী পাড়ি।
লঞ্চে বা স্টিমারে নয়, পালতোলা নৌকোতে নয়
গুপ্তচরের মতো একেবারে খাঁসা ডুবসাঁতারে।

আপেল কাটতে গিয়ে যাদের
হৃৎকম্পন বেড়ে যায়, হাত ফসকে পড়ে যায় চাকু
সময়ের প্রয়োজনে তারাই নেবে তুলে সুতীক্ষ্ম দক্ষতায়
গ্রেনেডের মতো মারাত্মক মারণাস্ত্র গুলো।
যারা মাছ খেতে গিয়ে
কাঁটা দেখে হাপিয়ে ওঠে, পিতার আঙুল না ধরে
স্কুলে যেতে পায় ভয়, মায়ের আঁচল ছেড়ে একাকী ঘুমোতে
শঙ্কিত, তারা কাটিয়ে দেবে রাতের পর রাত নিঃসঙ্গ বনজঙ্গলে
অনাহারে-অর্ধাহারে কাঁধে রাইফেল আর চৌদিকে
অতন্দ্র দৃষ্টি রেখে।

কেন না, তাদের স্বদেশ এখন
অজস্র মানুষরূপি হায়েনার হাতে জব্দ
কেন না, তাদের মায়ের মুখের হাসি এখন
বিশ্ববেহায়ার খপ্পরে
কেননা, তাদের বোনের অশ্রু এখন
নরসুন্দার জলের মতো সহজলভ্য, আর তাদের বাবার
মসজিদে যাবার রাস্তায় কাঁটাগুল্মের ঝোপ নির্বিঘ্নে উঠেছে বেড়ে।

রক্তফিনকীস্নাত সবুজ জামা

ভালবাসার জন্য মানুষ কী না পারে-
কী না পারে বলুন?
সাত সাগর তেরো নদী পার!
হোহ... সে তো
সামান্য, ফুলের রেণুর মতো যৎসামান্য।

হানাদার বাহিনীর হাতে
ধরা পড়েছিল একজন
সোনার মানুষ, মুক্তিকামি সোনার মানুষ।
শত অত্যাচার, তবু
মুখ খুললো না সাহসী সে তরুণ।
যদিও বেয়নেটের খোঁচা
লাগছিল উরুতে, বুকে স্টেনগান ধরা
মুখের উপর কটু প্রশ্ন-
‘আমাদের জিজ্ঞাসার
জবাব চাই, অগত্যা গুলি করে মারবো তোমায়।’
চূড়ান্ত নির্ভীক বলে, বুকভরা
খাসা দেশপ্রীতি ছিল বলে-
নিচু হয়ে চুমু খেল
স্বদেশের মাটিকে, প্রেয়সীর গালে শেষ চুম্বনের মতো।
তারপর উঠে দাঁড়ালে
সটান, ঝাকড়া চুলের বাবরি নাড়িয়ে বল্লে-
‘যথেষ্ট প্রস্তুত আছি, আমার রক্ত
প্রিয় দেশটাকে দেবে স্বাধীনতা’।

বাতাসের কলরব
থামলো হঠাৎ। ছিঁড়ে গেল মালার আদলে ওড়া
পাখিদের ঝাঁক; ভিজে গেল ঘাস, শ্যামল মাটি।
ভেজা পতাকার মতো
রক্তফিনকীস্নাত সবুজ জামা, আর
নক্ষত্ররূপী জ্বলজ্বলে জামার বোতাম।

অহিংসোক

জাহাজডোবা নাবিকের মতো বিধ্বস্ত, কম্পিত পা
দাঁড়িয়েছি তোমার সামনে। বুভূক্ষু এক ভিখারীর সুরে বলেছি-
‘তোমার অনেক ডাঙা, আমায় একটু আশ্রয় দেবে?’
জবাব দিলে-
‘দুনিয়াতে লোক তো অনেক আছে, ওদের কাছে যাও।’

মরু সাহারার তৃষিত বেদুঈন, আঁজলা করে হাতের তালু
বসেছি তোমার সামনে। যেন সিদ্ধিলভিতে দেবীর পায়ে প্রণাম-
‘তোমার রঙিন ফোয়ারা, আমায় একঢোক জল দেবে?’
জবাব দিলে-
‘দুনিয়াতে লোক তো অনেক আছে, ওদের কাছে যাও।’

যুদ্ধাহত যোদ্ধার মতো ক্লান্ত এবং আধবুজা চোখ
হাটু গেড়েছি তোমার সামনে। কপাল ফাটা কয়েদির কণ্ঠে বলেছি-
‘তোমার সুতি আচল, আমার মাথায় পট্টি দেবে?’
জবাব দিলে-
‘দুনিয়াতে লোক তো অনেক আছে, ওদের কাছে যাও।’

বনপোড়া হরিণীর মতো নিরুপায়, শঙ্কিত মুখ
দাঁড়ালে আমার সামনে। নির্যাতিত অসহায় সুরে বললে-
‘আমার অনেক বিপদ, আমায় তুমি বাঁচাও।’
আমি তখন পারিনি বলতে-
‘দুনিয়াতে লোক তো অনেক আছে, ওদের কাছে যাও।’

চোখের বদলা চোখ যদি হয়-আমরা তবে অন্ধ হয়ে যাবো
পায়ের বদলা পা যদি হয়-আমরা তবে পঙ্গু হয়ে যাবো।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer