Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১০ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪

‘আইসিটি-তেও অবদান রাখতে পারে জীবপ্রযুক্তি’

আশরাফুল ইসলাম

প্রকাশিত: ০২:২১, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭

আপডেট: ২২:৪২, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

প্রিন্ট:

‘আইসিটি-তেও অবদান রাখতে পারে জীবপ্রযুক্তি’

-অধ্যাপক এম মঞ্জুরুল করিম। ছবি: সংগৃহীত।

ঢাকা : শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে শুরু হচ্ছে জীবপ্রযুক্তির ওপর দু’দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন। এই সম্মেলনে দেশি-বিদেশি ৪০০ গবেষক ও বিজ্ঞান শিক্ষার্থীরা অংশ নেবেন। ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন বায়োটেকনোলজি ইন হেলথ অ্যান্ড এগ্রিকালচার’ শীর্ষক দু’দিনের এই সম্মেলনটির আয়োজক গ্লোবাল নেটওয়ার্ক অব বাংলাদেশি বায়োটেকনোলজিস্ট(জিএনওবিবি)। 

আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনের প্রাক্কালে আয়োজনের সার্বিক বিষয়ে বহুমাত্রিক.কম এর সঙ্গে কথা বলেছেন জিএনওবিবি’র জেনারেল সেক্রেটারি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. এম মঞ্জুরুল করিম। কথা বলেছেন প্রধান সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম।

একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, জীব প্রযুক্তি কৃষি, শিল্পসহ মানবসভ্যতার অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজনে যে অবদান রেখে চলছে-সময় এসেছে তাকে আরও সম্প্রসারিত করার। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির আধিপত্যের যুগে জীবপ্রযুক্তিও অনেক অবদান রাখতে পারে। সমকালীন জাতীয় বহু সম্ভাবনা ও সংকটকে সামনে রেখে আয়োজন করা হচ্ছে এই সম্মেলন।

অধ্যাপক করিম আশা প্রকাশ করেন, এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে আসা সুপারিশ ও ধারণাগুলো পলিসিমেকারস লেভেলে গুরুত্ব পেলে এবং তা নানা উদ্যোগে প্রতিফলিত হলেই সফল হবে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন বায়োটেকনোলজি ইন হেলথ অ্যান্ড এগ্রিকালচার’।

অধ্যাপক এম মঞ্জুরুল করিমের সঙ্গে কথপোকথনের চুম্বুকাংশ এখানে তুলে ধরা হল:

বহুমাত্রিক.কম : কোন ভাবনা থেকে এবারের আন্তর্জাতিক জীবপ্রযুক্তি সম্মেলনের আয়োজন ? পূর্বাপর প্রেক্ষাপটটি যদি বর্ণনা করেন-

অধ্যাপক ড. এম মঞ্জুরুল করিম : মূলত জিএনওবিবি(গ্লোবাল নেটওয়ার্ক অব বাংলাদেশি বায়োটেকনোলজিস্ট) একজন প্রতিথযশা বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আহমেদ শামসুল ইসলামের সুদূরপ্রসারী চিন্তার ফসল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের খ্যাতিমান সাবেক এই অধ্যাপক বর্তমানে ৯৩ বছর বয়েসে অবসর জীবনযাপন করলেও লেখালেখিতে ব্যস্ত রেখেছেন নিজেকে। উনি এবং তাঁরই অনুজ ছাত্র ড. আবিদুর রহমান, বর্তমানে যিনি সহযোগি অধ্যাপক হিসাবে জাপানের ইয়াতি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত-এই দু’জনের উদ্যোগে এবং আরও জনা পাঁচেক বিজ্ঞানীর সহায়তায় ২০০৪ সালে একটি সংগঠন তৈরি করেন, যে সংগঠনটির উদ্দেশ্য ছিল মূলত দেশে এবং বিদেশে বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের লাইফসাইন্স-এর বিভিন্ন ডিসিপ্লিনে ‘উইথ স্পেশাল অ্যামফিসিস অন বায়োটেকনোলজি’-তে যারা কনট্রিবিউট করে যাচ্ছেন তাদেরকে একীভূত করা। একটি প্ল্যাটফর্মে ইউনাইটেড রাখা। যে কারণে এটির নাম হয়েছে-গ্লোবাল নেটওয়ার্ক অব বাংলাদেশি বায়োটেকনোলজিস্ট।

সো দ্য বায়োটেকনোলজিস্ট ফর্ম দ্য অরিজিন অব বাংলাদেশ ওয়ার্কিং অ্যাট হোম অ্যান্ড অ্যাব্রড গ্লোবাললি ইন দ্য সাইন্স অব বায়োটেকনোলজি...। এঁদেরকে একটি প্ল্যাটফর্মে একীভূত করে তাদের মধ্যে সমন্বয় সাধনের মানসিকতা তৈরি করা এর উদ্দেশ্য। কারণ বাংলাদেশের সমস্যা এঁদের ছাড়া আর ভালো কে বুঝবে? বাংলাদেশের এই সমস্যাগুলোর সমাধান যারা দেশে বিদেশে বিশ^বিদ্যালয় বা গবেষণাগারে কর্মরত তারা তাদের ‘স্টেট অব দ্য নলেজ’ বা ‘কাটিং এজ টেকনোলজি’ সেগুলোর প্রয়োগের মাধ্যমে সমাধান করতেই পারেন। এরকম ভাবনা থেকেই ২০০৪ সালে এর গোড়াপত্তন হবার পর ২০০৭ সালে প্রথম একটি আন্তর্জাতিক বায়োটেকনোলজি সম্মেলন বাংলাদেশে

জাতীয়ভাবে এবং আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় আইসিডিডিআর,বি-মহাখালীর প্রাঙ্গনে। সেই সম্মেলনটা ২০০৭ সালে অনেকাংশেই সফল এই কারণে যে-সে সম্মেলনের পর একটি কনসেপ্ট পেপার তৈরি হয়। সেই কনসেপ্ট পেপারের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে বায়োটেক বেজড একটি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট গড়ে উঠবে। সেই গড়ে উঠার জন্য যা করণীয় বা যা প্রয়োজন এবং সেটার সম্ভাব্যতা-উপযোগিতা, এগুলোকে সামনে রেখে একটি নাতিদীর্ঘ প্রতিপাদ্য চিঠি তৈরি করা হয়। যেটাকে বলি কনসেপ্ট লেটার। এবং সেই চিঠিটি পলিসিমেকার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিজ্ঞান প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে উচ্চ পর্যায়ে যারা আছেন তাদের নজরে আনা হয়।

তারই পথপরিক্রমায় অবশেষে বাংলাদেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ইনস্টিটিউট গড়ে উঠেছে, যার নাম ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি (এনআইবি), যা সাভারে অবস্থিত। এনআইবি তো তৈরি হল..আমি মনেকরি এটাই জিএনওবিবি’র প্রধান মাইলফলক। কারণ তারা পলিসি মেকারদের সঙ্গে এক টেবিলে বসে বাংলাদেশের বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান এবং প্রাণবিজ্ঞানের উপযোগিতা টার্গেট করে একটি ক্ষেত্র বা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা গেছে জাতীয়ভাবে এটিই প্রাথমিক ধাপে বড় সাফল্য। এনআইবি বর্তমানে বিশাল কর্মপরিকল্পনা নিয়ে বিস্তৃত ডিসিপ্লিনে কাজ করছে। দেশিয় সমস্যা নিয়ে কাজ করছে।

২০০৭ সালের পর জিএনওবিবি’র আর কোনো কর্মচাঞ্চল্য দেখা যায়নি। ২০১৪ সাল যখন জিএনওবিবি’র ১০ বছর পূর্ণ হয়ে যায় তখন এই উপলক্ষকে সামনে রেখে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন করার উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়। বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, শ্রদ্ধেয় আহমেদ শামসুল হক স্যার আমাকে ও আরও কয়েকজনকে কনফারেন্স সেক্রেটারিয়েটে রেখে এই কনফারেন্সটাকে সামনে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালানোর দায়িত্ব দেন। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে দশ বছরপূর্তি অনুষ্ঠানটা করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে।

 

আমি মনেকরি আমাদের দ্বিতীয় সম্মেলনটিও ছিল প্রথম সম্মেলনের মতো অভূতপূর্ব সফল। এবং সেই সফলতার মাপকাঠিতে তখন একটি আউটক্রাই হয় যে হোয়াই ডোন্ট ওই গো, হোয়াই ডোন্ট উই ক্রিয়েট অ্যান অ্যাক্সিকিউটিভ প্ল্যাটফর্ম ফর জিএনওবিবি। তখন একটি এক্সিকিউটিভ কমিটি গঠিত হয় ২০১৫ সালে সেখানে আট-দশটি কমিটি থেকে ভিন্ন একটু-এ কারণে যে এই কমিটিটি একটি গোল অরিয়েন্টেড অবজেকটিভ বেজড কমিটি। যে কমিটিতে ৫টি সেকশন আছে; এর একটি সেকশন হচ্ছে এডুকেশন-যার কাজ হচ্ছে বিভিন্ন সভা সমিতি-সেমিনার করা। একটি হচ্ছে-আউটরিচ সেকশন, যাদের কাজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিজ্ঞানের বিভিন্ন প্রতিপাদ্য বিষয় শিক্ষার্থীদের অবহিত করা। একটি হচ্ছে মেম্বারশিপ সেকশন, যারা মেম্বারশিপ ড্রাইভ করবে। এই প্রক্রিয়ায় মোট ৫টি সেকশন নিয়ে প্রতি সেকশনে পাঁচজন করে ২৫ জন, এর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি, ট্রেজারার নিয়ে ২৮ জনের একটি কমিটি করা হয়।

এখানে বলাবাহুল্য প্রতিটি সেকশনে একজন এনআরবি (নন রেসিডেন্ট বাংলাদেশি) মেম্বার আছেন। যাতে বিদেশের সঙ্গে আমরা একটা লিয়াজোঁ করতে পারি। এই ২৮ জনের কমিটি নিয়ে জিএনওবিবি’ এক্সিকিউটিভ কমিটির গঠিত হয়। যার প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন অধ্যাপক জেবা ইসলাম সিরাজ এবং জিএস হিসাবে আমি দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাই। দায়িত্ব গ্রহণের পর জিএনওবিবি’র প্রথম যে কর্মপ্রক্রিয়া হয়, তা হচ্ছে ক্রিসপারক্রেসনাইন নামে মডার্ন বায়োলজিক্যাল সাইন্সের অত্যাধুনিক একটি প্রযুক্তি-বর্তমানে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

আমরা সিদ্ধান্ত নিই এটার ওপর আমরা একটা ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্কশপ করব। যেখানে আমার ট্রেইনিরা হবে বাংলাদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে যেসব বিজ্ঞানীরা আছেন-তাদের এই বিষয়ে অবহিত করা। সেই লক্ষ্যে হাতেকলমে আমরা ৩০ জনের একটি দলকে বাংলাদেশের দিনাজপুর থেকে শুরু করে ডাউন টু পটুয়াখালী থেকে খুব সিলেকশনের মাধ্যমে বাছাই করি। তারপর বিভিন্ন আউটরিচ প্রেগ্রামও করি এর সাথে সাথে। এবং শেষ পর্যায়ে এসে এই কনফারেন্সটা করতে যাচ্ছি। এটা হতে যাচ্ছে জিএনওবিবি’র তৃতীয় কনফারেন্স।

বহুমাত্রিক.কম : যদ্দূর বোঝা যাচ্ছে জিএনওবিবি-একটি পরিণত জায়গায় পৌছেছে । তৃতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আপনারা কী তুলে ধরতে চান? এই মুহূর্তে সংগঠনের অগ্রাধিকারগুলো কী ?

অধ্যাপক এম মঞ্জুরুল করিম : আমাদের অগ্রাধিকারগুলো হচ্ছে-যে বন্ধনটা আমরা সৃষ্টি করেছি দেশি-বিদেশি বিজ্ঞানীদের একীভূত করে সেই বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করতে চাই। যার মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষি এবং স্বাস্থ্য খাতে যেসব সমস্যাগুলো বিরাজমান সেই সমস্যাগুলোকে একটি জয়েন্ট প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সমাধানের পথকে আরও বেগবান করা। যাঁরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন, তাদের সঙ্গে এই নলেজের এক্সচেঞ্জ করা, কলাবোরেশন সেটআপ করা এবং সর্বোপরি পলিসি মেকিংয়ে যারা আছেন তাদেরকে সমঝোতায় এনে গোলটেবিলে বসিয়ে আইডিয়াগুলোকে বিনিময় করা। আমাদের এবারের দ্বিতীয় দিনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, আইসিটি ইন বায়োটেকনোলজি। আমরা সবাই জানি আইসিটি বর্তমানে বিশ্বের প্রথম স্মার্টনেস-স্মার্ট সিটি, কিংবা স্মার্ট কান্ট্রি গড়তে হলে আইসিটিতে স্মার্ট হতে হবে।

ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি। কথা হচ্ছে যে বায়োটেকনোলজি আইসিটিতে কনট্রিবিউট করতে পারে। যদি আমরা পারসনালাইজড মেডিসিনের কথা ধরি, দেখা যায় যে একটি মেডিসিন একটি অসুখের জন্য, দেখা গেল একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে রেসপন্ড করে বা আবার কারও কারও ক্ষেত্রে করে না। কারণ ওষুধগুলো পারসন বেজড, ইনডিভিজ্যুয়ালাইজড।

আমরা এখন যদি সেই ইনডিভিজ্যুয়ালাইজড মেডিসিনকে ডিসাইন করতে পারি, আমরা যদি টেলিমেডিসিনকে ডেভেলপ করতে পারি-আমরা যদি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবটাকে আরও বেগবান করতে পারি; এই যে দেশি বিদেশি প্রযুক্তিগুলো আছে সেগুলো ন্যাশনাল পলিসির সঙ্গে, যেটা শুধু তথ্যপ্রযুক্তির বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় ও প্রসারিত করে হেলথ সিস্টেমটাকেও যে এখানে একীভূত করা যায়-জীবপ্রযুক্তিরও যে এখানে অবদান রাখার সুযোগ আছে এটাকে আমা এওয়্যার করতে চাই। এটা আমাদের মেইন অবজেকটিভ-বিশেষ করে এই কনফারেন্সের জন্য, যা পলিসি মেকারদের গোচরে আনতে চাইছি আমরা।

বহুমাত্রিক.কম : বাংলাদেশে বায়োটেকনোলজি গবেষণায় বা অধ্যয়নে কী ধরণের বাধা রয়েছে-

অধ্যাপক এম মঞ্জুরুল করিম : আমি যদি অনির্দিষ্টভাবে বলি, তবে বলতে পারি-বাংলাদেশে যেসব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গড়ে উঠছে, যদি ৩৭টি পাবলিক থাকে-তাহলে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ৯০টির কম নয়। কিন্তু আপনি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি দেখেন, সেখানে দেখবেন যে লাইফ সাইন্স নিয়ে কয়টি বিভাগ সেখানে খুলেছে? অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অথবা বিজনেস ভিত্তিক।

এটা কারণ হচ্ছে যে-এটা অত্যন্ত খরচান্ত বিষয়। এখানে যে পরিমাণ বিনিয়োগ প্রয়োজন হয়, অনেক ক্ষেত্রেই তা সম্ভব হয় না। এখানে ল্যাবরেটরির জন্য বিশাল একটি সামর্থ্য থাকা চাই, এটা ছাড়া জীববিজ্ঞানের কোনো অধ্যয়ন প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই বলুন আর কাঠামোগতভাবেই বলুন পরিপূর্ণতা পায় না। এবং সে কারণেই, আবার চাকরির বাজারও অন্যতম একটি কারণ। আমরা এখন পর্যন্ত কতটুকুইবা চাকরির ক্ষেত্র সৃষ্টি করতে পেরেছি। কিন্তু বলা হয়, বর্তমান যুগ হচ্ছে জীবপ্রযুক্তির যুগ। তাহলে আমরা কেন পিছিয়ে আছি।

সেইদিক থেকে এর প্রথম প্রতিবন্ধক হচ্ছে-এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল একটি অধ্যয়ন। এটার জন্য ল্যাবরেটরি সুবিধা-লাইব্রেরি সুবিধা এবং গবেষণা সুবিধা একটি প্রধান উপকরণ। এই চ্যালেঞ্জগুলো যদি মোকাবেলা করা যায় তবে এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান আমাদের শিক্ষায়, প্রযুক্তি, গবেষণায় ও উন্নয়নে সমূহ ভূমিকা পালন করতে পারে। এটি বলতেই পারি জীবপ্রযুক্তি অধ্যয়ন ও গবেষণায় বাংলাদেশের বিদ্যমান সুযোগ বিশ্বের উন্নতদেশগুলোর তুলনায় কিংবা প্রতিবেশি দেশের চেয়ে অনেক অপ্রতুল। এই অপ্রতুলতাই বহির্বিশ্বের সঙ্গে আমাদের ব্যবধানকে দিনকে দিন বাড়িয়ে দিচ্ছে।

বহুমাত্রিক.কম : এবারের সম্মেলনে জীবপ্রযুক্তি গবেষণার কোন বিষয়গুলো প্রধান্য পাচ্ছে?

অধ্যাপক এম মঞ্জুরুল করিম : আমাদের এবারের সম্মেলনে যুক্তরাজ্য থেকে তালাত মামুন নামে একজন গবেষক আসছেন, তিনি ব্র্যাডফোর্ড ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ফার্মাসির সহকারী অধ্যাপক। উনি এই সম্মেলনে চমৎকার একটি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন, যেখানে তিনি এড্রেস করবেন বাংলাদেশে জেনেটিক ডিসঅর্ডার নামে নন কমিউনিকেবল ডিজিজ-এর ওপর। এই ডিসঅর্ডারগুলোকে অড্রেস করার সুযোগ এবং সম্ভাবনা সেটা নিয়ে তিনি আলেঅচনা করবেন।

আমি মনেকরি যে আমাদের অনেক সংক্রামক ব্যাধি আছে-আইসিডিডিআর,বি প্রচুর কাজ করে যাচ্ছে এনিয়ে। যে রোগগুলো বংশগতিভাবে একটা পরম্পরা থেকে আরেকটা পরম্পরায় চলে যাচ্ছে, ডায়াবেটিকস ম্যালিটাসের কথাই যেমন বলা যায়। কীইবা করতে পেরেছি আমরা শুধুমাত্র মেনটেইনেস ছাড়া, কিন্তু প্রতিরোধের যে বিষয়টা ‘আমার বাবা ডায়াবেটিসের রোগী, আমি হবই’ এই যে চল্লিশ বছর পর আমি যে একটা ঝুঁকির মধ্যে চলে আসছি-এটা হচ্ছে নন কমিউনিকেবল ডিজিস।

ডায়াবেটিকসের মত এমন অনেক ডিসঅর্ডার বা নিউরোলজিক্যাল ডিজিস বা নন কমিউনিকেবল ডিজিস পরম্পরা থেকে চলে আসছে। এই ব্যাপারে আমরা কতখানি সচেতন-এটা যেমন একটা বিষয় দ্বিতীয়ত কেবল সচেতনতা সৃষ্টি করলেই হবে না, এর ব্যাপারে প্রতিষেধক বা প্রতিরোধক ব্যবস্থা গড়ে তোলাও জরুরি। সবচে বড় কথা ডায়াগনোসিস সিস্টেমই তো আমাদের এখানে অত্যন্ত দুর্বল। আগে ডায়াগোনসিস, তারপর ট্রিটমেন্ট..তো এই বিষয়গুলো নিয়েও অনেক আলোচনা করার সুযোগ থাকবে এই সম্মেলনে।

বহুমাত্রিক.কম : বর্তমানে দেশে আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির জন্য প্রধান যে নিয়ামক-কৃষি এবং শিল্প, এই দুটিতেই জীবপ্রযুক্তির যথেষ্ট প্রয়োগ আছে। এখানে আমারা কতদূর এসেছি, কোথায় যাওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন-

অধ্যাপক এম মঞ্জুরুল করিম : এটি আমাদের কনফারেন্সের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিপাদ্য বিষয়। এবারের আমাদের কনফারেন্সের প্রতিপাদ্য ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন বায়োটেকনোলজি ইন হেলথ অ্যান্ড এগ্রিকালচার’। যে কথাগুলো আপনি বললেন-কৃষিতে আমাদের যে সম্ভাবনা...সেগুলোর এক অবারিত দুয়ার জীবপ্রযুক্তি উদারহস্তে বিলিয়ে দিতে পারে। এবং সেই টেকনোলজি আমাদের প্রয়োগ করা সময়ের ব্যাপার। যেটার মাধ্যমে আমরা কৃষিতে অনেক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারি।

খুব সাধারণভাবেই ধরেন, লবন সজহনশীল যে বিভিন্ন জাত কিংবা ভিটামিন ফর্টিফাইট ফুড, এডিবল ভেকসিন-অর্থাৎ ফুডও খাচ্ছি এবং ভেকসিনও চলে আসছে। এই যে ফিউশনগুলো-যেটা একমাত্র জীবপ্রযুক্তির মাধ্যমেই সম্ভব। এবং এইটাকে ব্যবহার করে জলবায়ূ পরিবর্তন, বিশ্ব উষ্ণায়ন ইত্যাদি দূর্যোগগুলোকে কৃষিখাতে অভিযোযিত করে কিভাবে আমাদের দক্ষতাকে বেগবান করা যায়, আমাদের সীমাবদ্ধ যে সুযোগগুলো আছে-সীমাবদ্ধতা যেপরিসর আছে তার মাঝেও জমিগুলোকে উৎপাদনক্ষম রাখা যায় এইসব নিয়ে আলোচনার যথেষ্ট সুযোগ থাকছে, আমি অংশগ্রহণকারীদের সাবমিশনে যা দেখলাম।

বহুমাত্রিক.কম : এবারের সম্মেলনে কারা অংশ নিচ্ছেন-

অধ্যাপক এম মঞ্জুরুল করিম : আমাদের এ সম্মেলনে সর্বমোট চারশ’ জন অংশ নিতে যাচ্ছেন। এবার পুরো সাবমিশন প্রক্রিয়াটি ছিল অনলাইন ভিত্তিক। পুরো বিষয়টি অটোমেটেড। সাবস্ক্রিপশন রিসিভ থেকে শুরু করে অ্যাসাইন করা পর্যন্ত পুরোটা অটোমেটেড করতে পেরেছি। এর মাধ্যমে একটি বার্তা দিতে চেয়েছি-এই প্রক্রিয়ায় অনেক অংশগ্রহণকারীর কষ্ট হয়েছে। আমরা চেয়েছি যতই সীমাবদ্ধতা থাকুক না কেন অংশগ্রহণকারীরা যেন এই প্র্যাকটিসের সঙ্গে ধাতস্ত হয়ে যান। তারা যদি বিদেশি কোনো কনফারেন্সে অংশ নিতে যান তখন তাদের এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই যেতে হবে। তা হলে কেন বাংলাদেশে নয়? তাই বাংলদেশেই আমরা তাদের জন্য সেই সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি। জাপান থেকে ড. আবিদুর রহমান নিরলস পরিশ্রম করে গেছেন এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে। তিনিই এবিষয়ে সম্মূখভাগে ছিলেন।

৪০০ জনের মধ্যে আমাদের আমন্ত্রিত স্পিকারস ২১ জন। তারা দেশি-বিদেশি স্বনামধন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। নাম করতে পারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. শাহ মোহাম্মদ ফারুক। যিনি কলেরার ডিনামিকস নিয়ে কাজ করছেন। আছেন মাহফুজ আর সরকার। তিনি কাজ করছেন অরিগন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে, জাপানের সাইতামা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একজন গবেষক আসবেন। এছাড়াও বাংলাদেশেল বিজ্ঞানীরা যারা বিভিন্ন দেশে কর্মরত অস্ট্রেলিয়া থেকে আসছেন অধ্যাপক আক্তার হোসেন। তালাত নাসিমের কথা আগেই বলেছি-এরকম ২১জন আছেন। তাদের আমান্ত্রণ করতে গিয়ে দেখলাম বাংলাদেশে আমাদের বড় স্টেকহোল্ডার হচ্ছেন এখানকার শিক্ষার্থী। তাই ৪০০ জনের মধ্যে ৩০০ হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

বড় বড় বিজ্ঞানীদের সুযোগ দিতে গিয়ে দেখা গেল আমাদের ছাত্রছাত্রীদের জন্য সময় কুলিয়ে উঠা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা এ কনফারেন্সের মাধ্যমে একটি নতুন ট্রেন্ড চালু করলাম। যেসব অ্যাবস্ট্রার্ক জমা পেড়েছে তা নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করে দেখেছি-তার মধ্য থেকে ২০টিকে বেছে নিয়েছি। সেই ২০জন স্পিকার যাদের প্রায় সবাই ছাত্রছাত্রী, আন্ড্রারগ্রাজুয়েট বা পোস্ট গ্রাজুয়েট লেভেলে পড়াশোনা করছেন। সেই ২০জনকে ৫ মিনিটের একটি শ্লট দিচ্ছি, তারা ৫ মিনিটে তাদের পুরো গবেষণাকে উপস্থাপন করবেন। সেই গবেষণাকে মূল্যায়ন করার জন্য একটি প্যানেল করা হয়েছে। প্যানেলটি দেশি-বিদেশি বিজ্ঞানীর সমন্বয়েই। তারা একবারেই অপরিচিত একটি প্যানেল। তারা তাদের বিচার করবেন, মেধাক্রম নির্ধারণ করবেন। পরবর্তীতে তাদের আমরা পুরষ্কৃত করব।

এই প্রক্রিয়ায় আমি মনে করি যে, নতুনদের সক্ষমতা দেয়া হচ্ছে এই আয়োজনে। প্রতিথযশা বিজ্ঞানীদের সঙ্গে মেলবন্ধন সৃষ্টি করা। যেন নেটওয়ার্কিয়ের সুযোগ, দুপক্ষ থেকেই সৃষ্টি হয়। এছাড়া ১২০জন হচ্ছে পোস্টার প্রেজেন্টার। তারা থিমেটিকভাবে তাদের পোস্টার উপস্থাপন করবেন। বলা যায় এই আয়োজনে ১৬০টি গবেষণা প্রবন্ধ এবার পোস্টার এবং ওর‌্যাল ফর্মে উপস্থাপিত হচ্ছে। বলে রাখা ভাল, পুরো জীবপ্রযুক্তিকে ৯টি সেশনে ভাগ করেছি আমরা। একেকটি সেশন একেটি বায়োটেকনোলজির বিষয়ের ওপর ডেডিকেটেডে। যেমন ধরুন এগ্রিকালচারাল বায়োটেকনোলজি, আরেকটি হচ্ছে ফিশারিজ, অ্যানিমেল বায়োটেকনোলজি, ফার্মাসিউটিকেলস বায়োটেকনোলজি, ন্যানো বায়োটেকনোলজি, জেনেটিক্স অ্যান্ড জেনোমিক্স, মেডিক্যাল বায়োটেকনোলজি ইত্যাদি। গুরুত্বপূর্ণ একটি সেশন হচ্ছে বায়ো এথিকস অ্যান্ড বায়োসেফটি। এটাকে আমরা একটি জেনারেল সেশন রেখেছি। যার মাধ্যমে এথিক্যাল বিষয়গুলো এবং সেফটি-সিকিউরিটির বিষয়গুলো সকলের সামনে একযোগে উপস্থাপনের সুযোগ রেখেছি।

বিগত দুটি আয়োজনের মতো এই তৃতীয় সম্মেলনটিও দেশ এবং দেশের বাইরে বাংলাদেশের শীর্ষ গবেষকদের মিলনে মেলায় পরিণত হবে। সম্মেলনে জিনএওবিবি পুরষ্কারজয়ী দু`জন বিজ্ঞানী ড. আকাতর হোসেন (মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়া) এবং ড. মুস্তাফিজুর রহামন (আইসিডিডিআরবি, বাংলাদেশ) জিনএনওবিবি এ্যওয়ার্ড লেকচার প্রদান করবেন।

উল্লেখ্য, জীবপ্রযুক্তি গবেষণাকে ঘিরে বাংলাদেশে এটাই একমাত্র বড় আয়োজন। বিগত দুটি সম্মেলনের ফলাফলস্বরূপ বাংলাদেশে পাটের জিনোম নিয়ে গবেষণাসহ কৃষি, শিল্প ও স্বাস্থ্যখাতে জীবপ্রযুক্তির প্রয়োগ বিষয়ক প্রাতিষ্ঠানিক সফলতা অর্জিত হয়েছে। এ বছর অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. আকতার হোসাইন-এর ইনসুলিন সংক্রান্ত গবেষণাসহ বৃটেন ও অন্যান্য দেশের প্রবাসী বিজ্ঞানীদের গবেষণাকে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে কাজে লাগানোর সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বহুমাত্রিক.কম : ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন বায়োটেকনোলজি ইন হেলথ অ্যান্ড এগ্রিকালচার’ আয়োজনে আরও যাদের কৃতিত্ব দিতে চান আপনি-

অধ্যাপক এম মঞ্জুরুল করিম : এবারের জীবপ্রযুক্তি কনফারেন্স আয়োজনে গঠিত প্রতিটি কমিটি ও এর দায়িত্বপ্রাপ্তরা বরাবরের মতোই তৎপর থেকে সার্বিক আয়োজনে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সক্রিয়তার কারণেই সব আয়োজন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। তাদের মধ্যে আয়োজনের কাঠামোগত উন্নয়নে ড. আসাদুল ঘানি, প্রকাশনায় ড. মুসতাক ইবনে আইয়ুব, গবেষণা সংক্ষিপ্তাসার পর্যালোচনায় ড. খাদেমুল ইসলাম, নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় ড. নুরুন্নবী, সাচিবিক অন্যান্য সহায়তায় মোঃ আনোয়ার সিদ্দিক এবং ফরিদা ইয়াসমিনসহ অন্যরাও বৃহৎ এই আয়োজন সুসম্পন্ন করার সাফল্যের অংশীদার।

বহুমাত্রিক.কম : এই আয়োজনে কারা পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে-

অধ্যাপক এম মঞ্জুরুল করিম : এই আয়োজনে আমরা বড় সাড়া পেয়েছি আমাদের স্পন্সরদের কাছ থেকে। স্কয়ার ফার্মাসিউটিকেলস এবং এসিআই এগ্রোবিজনেস আমাদের টাইটেল স্পন্সর। এছাড়াও ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিকলস, এসবি সল্যুশনস, বায়োটেক কনসার্নসহ আরও বেশ কিছু বিজ্ঞানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আমাদের আয়োজনে সহায়তা দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে আমরা আবেদন করেছি, বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যদি আমরা ক্রেডিবিলিটি অর্জন করতে পারি, ভবিষ্যতে হয়ত সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা আমরা পেতেই পারি।

এছাড়াও আমরা আনন্দিত যে শীর্ষ দৈনিক প্রথম আলো ও তাদের বিজ্ঞান সাময়িকী বিজ্ঞানচিন্তা’র সম্পদনা পর্ষদ আমাদের এই কসফারেন্সের মিডিয়া পার্টনার হিসাবে সপোর্ট দিচ্ছে। দ্য ডেইলি স্টারও ইংরেজি দৈনিক হিসাবে এটি কাভার করবে। সম্প্রচার সহযোগি সময় টেলিভিশন। বিশেষায়িত অনলাইন নিউজপোর্টাল বহুমাত্রিক.কম অনলাইন মিডিয়া পার্টনার হিসাবে আয়োজন কাভার করবে। আমাদের প্রত্যাশা, এসব সকল গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমাদের সম্মেলনের বার্তা পলিসি মেকারদের কাছে পৌছাতে পারব। এবং সম্মেলনের প্রকৃত উদ্দেশ্য সফল হবে।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer